তৃণমূলে রত্না প্রভাব বাড়তেই দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে আবার বিজেপিতে সক্রিয় হতে চলেছেন শোভন। তৃণমূলের রত্না চট্টোপাধ্যায়ের মোকাবিলায় কি বিজেপিতে সক্রিয় হতে চলেছেন শোভন ? বেহালা পূর্বে রত্নাকে তৃণমূল সক্রিয় করে তুলতেই শোভনকে নিয়ে সক্রিয় হল বিজেপি। প্রাক্তন মেয়র নিজেও বেহালাকে নিজের হাতে রাখতে মরিয়া । শোভনের ওয়ার্ডে রত্নাকে দায়িত্ব দিয়েছেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাদ্য়ায়। শুধু তাই নয়, রত্নাকে দায়িত্ব দিয়ে পার্থ বলেন, “আগে একজনকে জিতিয়েছিলাম । সে নিষ্ক্রিয় থাকলে দল তো আর বসে থাকতে পারে না।” সূত্রের খবর, পার্থর এহেন মন্তব্য আর রত্নার উত্থানকে মেনে নিতে পারেননি শোভন । আর তাই দীর্ঘ নীরবতা কাটিয়ে বিজেপিতে আবার সক্রিয় হতে চলেছেন শোভন ৷
বিজেপি- সূত্রে খবর, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ও সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁকে BJP-তে সক্রিয় হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন দলের দুই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। পৌরভোটে তাঁকে বিজেপির মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে সামনে রেখেই নির্বাচনে লড়াই করতে চায় দল । সূত্রের খবর, এই বিষয়ে বিজেপির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারকে দায়িত্ব দিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। এরপর জয়প্রকাশ মজুমদার শোভন ও বৈশাখির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। মূলত, আসন্ন পৌরভোটে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের উপর তৃণমূল আস্থা রাখাতেই শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপি-তে সক্রিয় হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
তৃণমূল ছাড়ার পর দলের এক শক্তিশালী গোষ্ঠীর মদতে শোভনের ওয়ার্ডে (১৩১) রত্নার প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়ে বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা । প্রথমে ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্ব দেওয়া তারপর শোভনের বেহালা পূর্ব বিধানসভা আসনের পর্যবেক্ষক নিযুক্ত করা হয় রত্নাকে । এবার পৌরভোটে রত্নকে ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করতে পারে তৃণমূল ।
শোভন ঘনিষ্ঠরা বলছেন— এর চেয়ে স্পষ্ট কোনও বার্তা আর হয় না। যাঁকে নিয়ে শোভনের মূল আপত্তি, তাঁর গুরুত্ব ক্রমশ বাড়িয়ে তোলা এবং শোভনের ওয়ার্ড বা শোভনের বিধানসভা আসনের দায়িত্বই সে হাতে তুলে দেওয়া আসলে রত্নাকে দিয়ে শোভনকে চ্যালেঞ্জ ছোড়ার শামিল বলেই মনে করছে শোভনের ঘনিষ্ঠ বৃত্ত।
বিজেপি সূত্রের খবর, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করলেই সেই ফোন রিসিভ করতেন বৈশাখি বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ নিজেও একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন কিন্তু শোভন চট্টোপাধ্যায় পর্যন্ত পৌঁছানো যায়নি। শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়েই কলকাতা পৌরনিগম নির্বাচনের সংগঠনের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয় তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া সব্যসাচী দত্তকে। কিন্তু এবার শোভন চট্টোপাধ্যায় নিজেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর জনসভায় উপস্থিত থাকার জন্য বঙ্গ বিজেপি-র পক্ষ থেকে তাঁকে ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি আসেননি। এর আগে বহুবার বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠক যোগ দেওয়ার জন্য তাঁকে চিঠি পাঠানো হয় কিন্তু একটি বৈঠকেও তিনি আসেননি। এরপর বিজেপি নেতৃত্ব বিরক্ত হয়ে তাঁকে আর কোনও কর্মসূচিতেই আমন্ত্রণ জানায়নি । শেষমেশ দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষের উপস্থিতিতে গত রবিবার পৌরভোট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয় কলকাতার ICCR-এ । আমন্ত্রণ পেয়েও সেই বৈঠকে আসেননি শোভন ।
অন্যদিকে, ২ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে সূচনা হয় “বাংলার গর্ব মমতা ” নামে বিশেষ কর্মসূচি। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বেহালা পশ্চিমের বিধানসভা কেন্দ্রের দায়িত্ব দেন প্রাক্তন মেয়র পত্নী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে ৷ সূত্রের খবর, সেটা দেখেই তৃণমূলের প্রতি রুষ্ট হন শোভন যোগাযোগ করেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে।
কিছুদিন আগেই দক্ষিণ কলকাতাজুড়ে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল। ফিরে আসুন শোভনদা। শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বিজেপির পদ্ম ফুল আঁকা সেই পোস্টার কে লাগিয়েছে সেটা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছিল। যদিও বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, দলের পক্ষ থেকে এই পোস্টার লাগানো হয়নি ।
আজ এই বিষয় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “উনি একজন অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা। তিনি যদি পৌরনিগম ভোটের আগে বিজেপিতে সক্রিয় হন, তা হলে খুবই ভালো কথা। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের যোগাযোগ হলেও তাঁর সঙ্গে শোভনের ফোনে কোনও কথা হয়নি বলে জানান দিলীপ ঘোষ।
Be the first to comment