প্রয়াত সোমেন মিত্র ৷ ৭০-এর দশকে প্রদেশ কংগ্রেসে গুরুত্বপূর্ণ নাম ছিল প্রিয়-সুব্রত ও সোমেন ৷ কীভাবে সেই দিনগুলি কেটেছিল তা নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ৷
বৃহস্পতিবার তাঁর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বর্ষীয়ান নেতা ও বর্তমান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, আমি আর প্রিয়দা যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করছি, তখন সোমেনের যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছিলাম। আমরা তো মফঃস্বলের ছেলে ছিলাম। সে সময় নকশাল আন্দোলন চলছে। প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু-ভয়। সোমেন আমাদের বহুবার প্রাণে বাঁচিয়েছেন। আমরা একসঙ্গে কংগ্রেস করেছি। এক সঙ্গে লড়াই করেছি, জেল খেটেছি। পুলিশের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আন্দোলন করেছি। দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের সৈনিক আমরা। প্রিয়দা আগেই চলে গেছেন। সোমেন চলে গেলেন। আমি বাস্তবিকভাবে খুবই মর্মাহত।
একইভাবে সোমেন মিত্রকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করলেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, চরম শত্রুর সঙ্গেও উনি হেসে কথা বলতেন। তখন কেউ বুঝতে পারত না তাঁর সঙ্গে বিরোধ-বিচ্ছেদ রয়েছে। সোমেনদার চলে যাওয়াটা খুবই দুঃখের। দীর্ঘদিনের পরিচয়। সেই সত্তরের দশকে সোমেনদার সঙ্গে আলাপ। মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমাদের পাশে দাঁড়াতেন সোমেনদা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনে আমাদের অনেকভাবে সাহায্য করেছেন।
৭২-৭৩ সালে সোমেন মিত্রকে মধ্য কলকাতার যুব সভাপতি করার সময় আমরা প্রতি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিটিং করেছিলাম। তারপর কংগ্রেস ভাগ হয়ে গেল ৷ নতুন দলে চলে গেলেন সোমেনদা। আমরা মূল কংগ্রেসে প্রিয়দার সঙ্গে থেকে গেলাম। নির্দিষ্ট সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল সোমেনদার। পরবর্তীকালের রাজনীতিতে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হয়েছেন তিনি। যখন তিনি সভাপতি হয়েছেন তখন কংগ্রেসের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা। এই অবস্থায় দলকে ধরে রাখা খুব কঠিন। তবুও তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন । দুঃখ লাগে যে তিনি কমিউনিস্টদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন ৷ এটাতে খুশি হতে পারিনি। বিশেষ করে রাজ্য রাজনীতিতে।
তিনি আরও বলেন, সোমেনদার চলে যাওয়াটা নিয়ে যদি আমরা রাজনীতি করি, তবে বিরাট ক্ষতি। সোমেনদার আত্মার শান্তি কামনা করি। যখনই দেখাও হত তখনই কথা হত আমাদের। বউদি ও তাঁর সন্তানদের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, ঈশ্বর যেন তাঁদের এই অভাব বা ক্ষতিপূরণ করার ক্ষমতা দেন। আমরা একজন প্রাজ্ঞ, বুদ্ধিমান, সুন্দর ব্যবহারের মানুষকে হারালাম। এটা আমাদের রাজনীতির একটা বিরাট ক্ষতি।
Be the first to comment