সংকটের পরিস্থিতিতে সরকারের খরচ বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্য, সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং আমলাদের সমস্ত বিদেশ সফর এখনই স্থগিত করার পরামর্শ দিয়ে মঙ্গলবার নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি পাঠালেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। সাংসদদের বেতন তিরিশ শতাংশ ছাঁটার ব্যাপারে মোদী সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে এরই সঙ্গে আরও চারটি পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছেন সোনিয়া।
বস্তুত করোনা সংক্রমণের কারণে যখন দেশে অর্থনৈতিক মন্দার মেঘ ঘনাচ্ছে, তখন বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার দরজা খুলে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই। গত পরশু সোনিয়া-মনমোহন-মমতা-নবীনদের ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
সেই সুযোগ নিয়ে ৪৮ ঘন্টা পর আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীকে পাঁচটি নতুন পরামর্শ দিয়েছেন সনিয়া। কেন্দ্রে ইউপিএ জমানায় দশ বছর সরকারের নেপথ্য চালিকাশক্তি ছিলেন তিনিই। সেই সঙ্গে জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের সভানেত্রী ছিলেন সোনিয়া।
মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে তিনি বলেন, খরচ বাঁচাতে সাংসদদের তিরিশ শতাংশ বেতন কেটে নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে তাকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি। এই সংকটের পরিস্থিতিতে মিতব্যয়ী হওয়াটাই দস্তর। আমি আপনাকে আরও পাঁচটি গঠনমূলক সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিতে চাই।
কংগ্রেস সভানেত্রীর পরামর্শ প্রথমত, দু’বছরের জন্য সমস্ত সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হোক। সংবাদপত্র, টেলিভিশন এবং অনলাইন মাধ্যমে সরকার বছরে গড়ে ১২৫০ কোটি টাকা খরচ করে। তা বন্ধ করে খরচ বাঁচানো হোক। এমনকি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকেও বলা হোক সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে অর্থের অপচয় যেন না করে। একমাত্র জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বা কোভিড সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়ার জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, সংসদ ভবন ও কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের সংস্কারের জন্য সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ করার যে পরিকল্পনা করেছে, তা এখনই বাতিল করা হোক। সনিয়ার কথায়, আমি নিশ্চিত বর্তমান সংসদ ভবনেই আপাতত আইনসভার কাজ ভাল ভাবে চলতে পারে। বরং ওই টাকা নতুন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নির্মাণে খরচ করা হোক।
তৃতীয়ত, সরকারের খরচ তথা বেতন, পেনশন ও কেন্দ্রীয় প্রকল্প খাতে খরচ বাদ দিয়ে যে এক্সপেন্ডিচার বাজেট রয়েছে, তা তিরিশ শতাংশ কমানো হোক। ওই টাকা পরিযায়ী শ্রমিক, অসংগঠিত ক্ষেত্রের মজুর, কৃষক এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের আর্থিক সুরক্ষা খাতে খরচ করা হোক।
চতুর্থত, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্য, মুখ্যমন্ত্রীদের বিদেশ সফর আপাতত স্থগিত রাখা হোক। দেশের স্বার্থে অতি প্রয়োজন ছাড়া কোনও সরকারি আমলাকে যেন বিদেশ সফরে অনুমতি না দেওয়া হয়।
পঞ্চমত, প্রধানমন্ত্রী কেয়ার ফান্ডে (করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় গড়ে তোলা তহবিল) যে টাকা জমা হচ্ছে তা যেন প্রধানমন্ত্রীর বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিল খাতে খরচ করা নয়। এতে প্রধানমন্ত্রী কেয়ার ফাণ্ডে টাকা জমা পড়া ও খরচের হিসাবে স্বচ্ছতা আসবে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, সোনিয়ার এই সব পরামর্শ আপাত দর্শনে খুবই গঠনমূলক। এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু সুক্ষ রাজনীতিও রয়েছে এর পিছনে। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার এবং রাজ্য স্তরে বহু সরকার কোষাগার থেকে বছরে একটা মোটা টাকা খরচ করে নিজেদের বিজ্ঞাপন করেন।
শুধু তাই নয়, একশ্রেণীর সংবাদমাধ্যমকে খুশি রাখার চেষ্টা করেন। সেই পথ বন্ধ করে দিতে চেয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। তা ছাড়া সনিয়া জানেন, প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফর নিয়ে ঘরোয়া রাজনীতিতে অনেকে টিপ্পনি করেন। ফলে তাঁর এই পরামর্শেও বিপুল সাড়া পাওয়া যাবে।
Be the first to comment