নিজস্ব প্রতিনিধি
থেমে গেল ফাইট, প্রয়াত হলেন কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। করোনাকে হার মানালেও শেষরক্ষা হল না। ৮৫ বছর বয়সে হার মানতে বাধ্য হলেন বাঙালির ‘অপু’। প্রবাদপ্রতীম অভিনেতার প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা বিনোদন জগৎ।
৪০ দিনেরও বেশি সময় ধরে বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ৬ অক্টোবর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
১৯৩৫ সালে শিয়ালদার কাছাকাছি মির্জাপুর স্ট্রিটে (বর্তমানে সূর্য সেন স্ট্রিট) জন্ম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। ছোটবেলার বেশ কিছুটা কেটেছে কৃষ্ণনগরে। সেখানেই কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সৃষ্টিতে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
বাড়িতে নাটকের চল ছিল। সেই থেকেই ছোট্ট সৌমিত্রর নাটকের প্রতি টান। পরে হাওড়ায় চলে আসে সৌমিত্রর পরিবার। স্কুল জীবন শেষ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। সান্নিধ্যে এসেছিলেন শিশিরকুমার ভাদুড়ির। ১৯৫৬ সালে সত্যজিৎ রায় যখন ‘অপরাজিত’র জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন। তখনই তাঁর সঙ্গে ২০ বছরের সৌমিত্রর দেখা করেন। বয়স বেশি হওয়ার কারণে সেই সময় তাঁকে নেননি পরিচালক সত্যজিৎ। কিন্তু বেশি বয়সের অপুর জন্য ২০ বছরের যুবককে পছন্দ করে রেখেছিলেন তাঁর অজ্ঞাতেই।
দুই বছর বাদে যখন ‘জলসাঘর’-এর শুটিং করছিলেন সেটে যুবক সৌমিত্র গিয়েছিলেন সেটে তাঁর কাজ দেখতে। শুটিং শেষ হওয়ার পর সৌমিত্রকে নিয়ে ছবি বিশ্বাসের সামনে দাঁড় করান সত্যজিৎ। পরিচয় করাতে গিয়ে বলেন, এ হচ্ছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আমার ‘অপুর সংসার’-এর নায়ক। সেই শুরু। তারপরের পাঁচ দশক যেন রূপকথার মতো।
‘দেবী’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘ঝিন্দের বন্দি’, ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘কাপুরুষ’, ‘আকাশ কুসুম’, ‘বাঘিনী’, ‘পরিণীতা’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘জন অরণ্য’, ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘বেলাশেষে’, ‘সাঁঝবাতি’ প্রভৃতি ছবিতে তিনি অভিনয় করেন।
শুধু অভিনেতা নন, তিনি ছিলেন নাট্য পরিচালক, আবৃত্তি শিল্পী, কবি, ‘এক্ষণ’ পত্রিকার সম্পাদক। প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বেশ কয়েকটি কবিতার বই, কবিতা সমগ্র। নিজের পাশাপাশি তিনি রেকর্ড করেছেন রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, সুকুমার রায় সহ বেশ কয়েকজন কবির কবিতা। দিন দুই আগেই ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কণ্ঠে ‘আবোল তাবোল’-এর কবিতা।
Be the first to comment