একসময়ের বামফ্রন্ট সরকার এই স্লোগানকে জনপ্রিয় করতে চেয়েছিলেন যে মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের মতো। বিভিন্ন জায়গায় এই প্রচার করে তারা প্রাথমিক স্তর থেকে ইংরাজী তুলে দিয়েছিল। অথচ বামফ্রন্ট নেতাদের নিজেদের আত্মীয়-স্বজন, আত্মীয়-পরিজন এককথায় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ইংরাজী মাধ্যম বা রাজ্য সরকারের বাইরের বোর্ড থেকে পড়াশোনা করতো। তাদের ক্ষেত্রে কি এই স্লোগান প্রযোজ্য ছিল না? অন্যদিকে প্রাথমিক স্তর থেকে ইংরাজী তুলে দেওয়ার ফল যা হওয়ার তা হয়েছিল। একটা গোটা প্রজন্ম ইংরাজী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। ক্লাস ফাইভে ABCD শিখে ক্লাস সিক্সে তাদের ইংরাজী রচনা লিখতে বলা হতো। ইংরাজীর প্রতি ভীতি এর থেকেই জন্ম নেয়। মাধ্যমিকে ইংরাজী পরীক্ষা কিভাবে পার হওয়া যায় সেটাই ছিল ছিল অন্যতম চিন্তার বিষয়। শুধু তাই নয় ইংরাজীর ভিত শক্ত না হওয়ায় পরবর্তী ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাতেও পিছিয়ে যেতো বাংলা মিডিয়ামের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা। বলা যায় ইংরাজী না জানা একটা পঙ্গু প্রজন্মের জন্ম হয়।
মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলা ভাষা তথা মাতৃভাষাকে প্রাধান্য দিয়েও ইংরাজী শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হয়। প্রাথমিক স্তরে আবার ফিরে আসে ইংরাজী। কিন্তু পড়াবে কে? শিক্ষকেরা যদিওবা ইংরাজী লিখতে পারেন, কিন্তু তাদের ইংরাজীতে কথাবার্তা বলার ততটা দক্ষতা নেই। এই কমিউনিকেটিভ স্কিল বাড়াবার জন্য রাজ্য সরকার এবার উদ্যোগী হলো। এরপর থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ইংরাজীতে পড়ানোর জন্য আলাদা করে ট্রেনিং দেওয়া হবে। ট্রেনিং দেওয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারী সংস্থা বা ব্যক্তির সাহায্য নেওয়া হবে। এভাবেই যে ছাত্র-ছাত্রীরা দেশ বা জাতির ভবিষ্যৎ তাদের আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বর্তমান সরকার। তারা যাতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এগিয়ে যেতে পারে এবং সর্বোপরি জীবনের সব ক্ষেত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে সেজন্য নিরলস চেষ্টা করে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার মন্ত্রীরা। ২৪ তারিখ বিধানসভায় শিক্ষকদের ইংরাজী পঠন পাঠনের এই সিদ্ধান্তের কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জী। এই উদ্যোগকে অত্যন্ত সময়োপোযোগী এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সার্বিক বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ তা নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। শিক্ষাবিদরা ইতিমধ্যেই এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।
Be the first to comment