লকডাউন জারি হওয়ার পর থেকে গত কয়েকদিন ধরে উঠেএসেছে কিছু অমানবিক ছবি। মাইলের পর মাইল হাঁটছেন শ্রমিকরা। ভাড়া দেওয়ার টাকা নেই। বাড়ি ফিরতে হবে। ভিনরাজ্যে পথ চেয়ে আছে পরিবার পরিজন। খাবার নেই, জল নেই শুধু হাঁটা। প্রতিবাদ হয়েছে অনেক। ‘সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং’ ভুলে প্রাণের দায়ে বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে কয়েক হাজার শ্রমিককে। তবে এবার সামনে এল আরও এক চাঞ্চল্যকর ভিডিও।
একদল শ্রমিককে বসিয়ে তাদের গায়ে স্প্রে করা হচ্ছে জীবাণু নাশক স্প্রে। সোমবার সকালে এমন দৃশ্যই দেখা গেল উত্তরপ্রদেশে।
উত্তরপ্রদেশের বরেলিতে এমন দৃশ্য দেখা গিয়েছে বলে দাবি সংবাদমাধ্যমে। এনডিটিভি সেই ভিডিও প্রকাশ করেছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একদল শ্রমিক রাস্তায় বসে আছেন। রয়েছে মহিলা ও শিশু। আর তাদের লক্ষ্য করে ছড়ানো হচ্ছে স্প্রে। ভিডিওতে শোনা যাচ্ছে, ওই শ্রমিকের উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে ‘চোখ বন্ধ কর। বাচ্চাদের চোখ বন্ধ করে দাও।’ এক আধিকারিকেরদাবি, এটা অমানবিক কিছু নয়। যেটা ঠিক মনে হয়েছে, সেটাই করা হয়েছে।
কেউ পেটের দায়ে, আবার কেউবা একটু বেশী রোজগারের আশায় কাজ করতে গিয়েছিলো ভিনরাজ্যে। কিন্তু করোনা এবং লকডাউনের জেরে কাজ হারিয়ে প্রতিদিনই গ্রামের বাড়িতে ফিরছেন বহু শ্রমিক। ফলে কাজের জায়গা থেকে বাড়ি পর্যন্ত বহু মানুষজনের সংস্পর্শে আসছেন এই সমস্ত শ্রমিকেরা। যেহেতু আগেই এইসব শ্রমিকদের মধ্যে গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা করা হয়েছিল, তাই তাঁদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা বলা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, এই বিষয়ে রাজ্যগুলিকে সাহায্য করবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যোর জেলাগুলির শাসক, মহাকুমা শাসক এবং পুলিশ-প্রশাসন। এছাড়াও গ্রামীন স্বাস্থ্য দদফতরের তরফ থেকেও এই বিষয়ে গ্রাম-মফস্বলের বাড়ি গুলিতে গিয়ে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সচেতনতা করা হবে সাধারণ মানুষদের। যার ফলে শ্রমিকেরা আরও বেশি সচেতন হবেন এবং পরবর্তী সময়ে তাঁরা বাইরে থেকে এসে নিজেরাই গ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে শারীরিক পরীক্ষা নিরিক্ষা করাবেন।
সূত্রের খবর, আমাদের দেশে বিহার, পশ্চিমবঙ, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ,মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যে প্রচুর গরীব মানুষ বসবাস করেন। যারা দুপয়সা বেশী রোজগারের আশায় দিল্লি, পাঞ্জাব সহ আশেপাশের মেট্রো সিটি গুলিতে কাজের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। সেখানে গিয়ে তাঁরা শ্রমিকের কাজ থেকে শুরু করে রেস্তোরায় কর্মী, ডেলিভারি বয় সহ বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকে।
কিন্তু বর্তমানে লকডাউনের জেরে দেশের প্রতিটা কোনায় ছোটোবড়ো শপিং মল, রেস্তোরা, বার সমস্ত কিছুতেই আপাতত ২১ দিনের জন্য তালা ঝোলানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এই অবস্থায় নিরুপায় হয়ে, কলকারখানা বন্ধ থাকায় কাজ হারিয়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন এইসব অসহায় খেটে খাওয়া মানুষেরা।
ফলে এবার তাঁদের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিতে স্থানীয় জেলা প্রশাসন সহ পুলিশ কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কারন, যে ভাবে হুহু করে দেশে সংক্রামিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে, তাতে ভিনরাজ্য থেকে বাড়ি ফিরে আসা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি। এরফলে সহজেই সংক্রামিত রোগীদের চিহ্নিত করা যাবে। তবে এভাবে জীবাণু নাশক ছড়ানোর ঘটনা রীতিমত চাঞ্চল্যকর।
Be the first to comment