রাজনীতিকের ছেলেমেয়েরা রাজনীতিতেই যোগ দেওয়ার ঘটনা ইদানীং আকছার। যদিও অনেক রাজনীতিক চান পরবর্তী প্রজন্ম অন্য পেশায় যোগ দিক। এমনকী রাজনীতিকের ছেলে বা মেয়ে শিক্ষকতায়, পেশাদার কাজে, গবেষণায় বা ব্যবসায় খুবই সফল হয়েছেন সেই উদাহরণও রয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর মেয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন সেই দৃষ্টান্ত এ দেশে বিরল বললেও কম বলা হয়। শত হাতড়েও কোনও নজির মেলেনি!
উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়ালের নিশঙ্কের মেয়ে সে দিক থেকে একেবারেই অনন্য! চেনা ছকের বাইরে গিয়ে রমেশ-কন্যা ডঃ শ্রেয়সী নিশঙ্ক দেশসেবার কাজকেই পেশা হিসাবে বেছে নিলেন। সেনাবাহিনীর মেডিকেল সার্ভিসেসে যোগ দিলেন তিনি।
আনন্দ ও গর্বে উচ্ছ্বসিত রমেশ নিজেই টুইট করে জানিয়েছেন এই খবর। সেই সঙ্গে দেশের বাকি মেয়েদেরও দেশসেবার কাজে এগিয়ে আসার বার্তা দিয়েছেন। টুইটারে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “আমার মেয়ে উত্তরাখণ্ডের পরম্পরা ও ঐতিহ্যকে বজায় রেখে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছে। আমি গর্বিত। আমি দেশের সব মেয়েকেই আহ্বান করছি কেরিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়াকেও তাঁরা বিবেচনা করুন এবং দেশকে গৌরবান্বিত করুন।”
শ্রেয়সী পড়াশোনা করেছেন হিমালয়ান মেডিক্যাল কলেজে। রুরকিতে সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল সার্ভিসে যোগ দিয়েছেন তিনি। তবে, মেয়ের সাফল্যকে আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের সাফল্য হিসেবেই দেখতে চান রমেশ। তাঁর কথায়, “উত্তরাখণ্ডের সাধারণ পরিবার থেকে প্রতি বছরই সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ছেলেমেয়েরা। আমি গর্বিত আমার মেয়েও সাফল্যের সঙ্গে সেনার পদে যোগ দিতে পেরেছে।”
রমেশ পোখরিয়াল এখন সাংসদ। ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন। তাঁর আগে ২০০৭-০৯ সাল পর্যন্ত উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর পদে ছিলেন মেজর জেনারেল ভুবন চন্দ্র খান্ডুরি। কর্মজীবনের প্রথম (১৯৫৪-৯০) ৩৬ বছর খান্ডুরি ছিলেন সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদে। ১৯৯১ সালে উত্তরাখণ্ডের গারওয়াল লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হওয়ার পরই শুরু হয় তাঁর রাজনৈতিক জীবন। রাজস্থানের যশোবন্ত সিংহ আশির দশকে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়ে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আসেন। তার আগে তিনি ছিলেন সেনার অফিসার। পরবর্তী সময়ে অটলবিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় বিভিন্ন দফায় বিদেশ ও অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
অতএব সেনাবাহিনী থেকে রাজনীতিতে উত্তরণের নিদর্শন কিছু কম নয়। সে দিক থেকে দেখতে গেলে একজন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মেয়ে হিসেবে শ্রেয়সীর সেনাবাহিনীতে যোগদানের ঘটনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তো বটেই। বিশেষত, কন্যাভ্রুণ হত্যা, লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে দেশজোড়ার অস্বস্তির আবহে একজন মহিলার দেশরক্ষার কাজে এগিয়ে আসাকে গর্বের চোখেই দেখা হয়। সেখানে খোদ রাজনীতির অন্দরে বড় হয়ে সেনার দায়িত্ব সামলানোর অঙ্গীকার করে শ্রেয়সী শুধু তাঁর বাবা রমেশ পোখরিয়াল নয়, গর্বিত করেছেন গোটা দেশকেই।
Be the first to comment