রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরার আবেদন জানালেন স্ট্যালিন

Spread the love

ফ্যাসিস্ট মোদী সরকার’ উৎখাত করার জন্যে রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরার আবেদন জানালেন করুণানিধিপুত্র স্ট্যালিন। রবিবার চেন্নাইয়ে দলের প্রধান দফতরে কালাইনারের মূর্তির আবরণ উন্মোচন অনুষ্ঠানে এই প্রস্তাব দেন তিনি। এ দিন স্ট্যালিন বলেন, “গত পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে আমরা ১৫ বছর পিছিয়ে গিয়েছি। তাঁকে ক্ষমতায় রেখে দিলে আমরা আরও পঞ্চাশ বছর পিছিয়ে যাব।”

এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু এবং পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী-সহ একাধিক বিরোধী নেতা। ছিলেন অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ রজনীকান্তও। স্ট্যালিন আরও বলেন, দেশকে বাঁচাতে বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তাঁর কথায়, “ফ্যাসিবাদী-নাৎসিবাদী মোদী সরকারকে পরাজিত করার ক্ষমতা রয়েছে রাহুলের। সম্মানীয় দলনেতাদের কাছে আমার আবেদন, আসুন আমরা রাহুলের হাত মজবুত করি। আমরা দেশকে রক্ষা করি।”

অবশ্য স্ট্যালিন একা নন, এ দিনের অনুষ্ঠানে মতামত রাখেন সকলেই। মূর্তির আবরণ উন্মোচন করে সনিয়া গান্ধী বলেন, সাংবিধানিক মূল্য ধ্বংস করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিজেপিকে লোকসভা নির্বাচনে পর্যুদস্ত করতে স্থায়ী ও মজবুত ঐক্যের প্রয়োজন।

জনসভায় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বিজেপির বিরুদ্ধে জোরালো আক্রমণ শানিয়ে অভিযোগ করেন, “বিজেপি বিশ্বাস করে যে, দেশ জুড়ে শুধুমাত্র একটি ধারণা বলবৎ থাকবে। তামিল সংস্কৃতি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিজেপি সরকারের নীতি ঘৃণ্য। সুপ্রিম কোর্ট এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার খেলায় নেমেছে বিজেপি।” 
চন্দ্রবাবু নাইডুর অভিযোগ, দেশের প্রজাতান্ত্রিক চরিত্রকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে এনডিএ সরকার। ইভিএম-এর অপব্যবহার এবং সিবিআই ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতায় কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপেরও তিনি তীব্র সমালোচনা করেন।

তামিল সমাজ এবং সংস্কৃতিতে করুণানিধির অবদানের উল্লেখ করে সনিয়া বলেন, “১৯৭১ ও ১৯৮০ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বিভিন্ন ইস্যুতে অবিস্মরণীয় সমর্থন করেছিলেন প্রয়াত ডিএমকে প্রধান। মঞ্চ থেকে তিনি বার্তা দেন, ‘তামিলনাডু তথা দেশবাসীর প্রতি এই বার্তা ছড়িয়ে যাক যে, গত সত্তর বছর ধরে দেশকে সঠিক পথে চালিত করতে যে সংবিধান প্রধান ভূমিকা পালন করেছে, তার মূল্য রক্ষার্থে আমরা একজোট ও অবিচল।”

তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাহুল গান্ধীর নাম এভাবে প্রস্তাব করায় কিন্তু বাকিদের সার্বিক সমর্থন পাননি স্ট্যালিন। সূত্রের খবর, তেলুগু দেশম পার্টি এবং তৃণমূল কংগ্রেস বেশ মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তাই নিয়ে আগেভাগেই স্ট্যালিনের করে বসা এই বক্তব্যে। ওই দুই দলের নেতারা মনে করছেন, স্ট্যালিন লোকসভা নির্বাচন শেষ হওয়া অবধি অপেক্ষা করতে পারতেন। তাঁকে “বাবা করুণানিধির মতোই আবেগপ্রবণ” বলে উল্লেখ করেছেন অনেকেই।

বিরোধী দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “এভাবে কারও নামের উপর সমর্থন ঘোষণা করে দেওয়ায় অনেক নেতারই আপত্তি থাকতে পারে। সমাজবাদী পার্টি, তেলুগু দেশম পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেস– অনেকেই স্ট্যালিনের ঘোষণার সঙ্গে একমত নয়। এটা অনেক তাড়াহুড়ো হয়ে গেল। লোকসভা নির্বাচনের পরেই প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা যায়।”

সোনিয়া গান্ধী অবশ্য তাঁর বক্তব্যে বুঝিয়ে দেন স্ট্যালিনের সমর্থন পাওয়ারই ছিল তাঁদের। পূর্বের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “করুণানিধিজির সময় থেকেই আমাদের মধ্যে সখ্য ছিল। ইন্দিরা গান্ধীও করুণানিধির সমর্থন পেয়েছিলেন। তাঁর পরামর্শ মেনেই একে অপরের সাহায্যে আমরা শক্তিশালী হয়েছি। আমরা একসঙ্গে রাজনৈতিক জোট গড়ে নির্বাচন লড়েছি। তাঁর আদর্শ মেনে আগামী দিনেও দেশের স্বার্থে আমরা এক হয়ে লড়ব। সেই জন্যই ২০১৯-এর লক্ষ্যে বিরোধীরা এককাট্টা হচ্ছে।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*