বাংলায় বনধের সমর্থনে বুধবার সকাল থেকেই জেলায় জেলায়, ব্লকে ব্লকে মিছিলের ডাক দিয়েছে বিজেপি। কলকাতাতেও কাশীপুর-বেলগাছিয়া, শ্যামপুকুর-মানিকতলা, জোড়াসাঁকো, চৌরঙ্গী এলাকায় পৃথক ভাবে মিছিলের ডাক দিয়েছেন বিজেপি-র স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। বিজেপি সূত্রের খবর, দক্ষিণ ও উত্তরের শহরতলি এবং পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ফ্রন্টিয়ার রেল পথের বিভিন্ন জায়গায় অবরোধের চেষ্টাও করবে তারা। তা ছাড়া সরকারের হিসাবই বলছে, দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গে বিজেপি-র দখলে থাকা তিরিশটিরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে যেগুলি জাতীয় সড়ক লাগোয়া। যেমন ধূলাগড় থেকে বাগনান—–জাতীয় সড়ক লাগোয়া অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপি-র দখলে। একই ভাবে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ঘেঁষা কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে বিজেপি-র দখলে। পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের মধ্যে যোগাযোগকারী সড়কের আশপাশে বিজেপি-র সংগঠন মন্দ নয়। ফলে বহু জায়গায় জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে প্রশাসনের মধ্যে।
বস্তুত সেই কারণে সব কটি জেলার পুলিশ সুপারকে মঙ্গলবার কড়া নির্দেশ পাঠিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র। স্পষ্ট বার্তা এই যে, যে করে হোক যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখতে হবে। যদিও প্রশাসনের কর্তারাই স্বীকার করছেন, জেলার মধ্যে একাধিক জায়গায় রাস্তা অবরোধ হলে সব জায়গায় বড় পুলিশ বাহিনী পাঠানো চাপের ব্যাপার। বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা কত তা দেখেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
এরই পাশাপাশি কলকাতা ও গোটা রাজ্য জুড়ে বিপুল সংখ্যক সরকারি বাস চালানোর ব্যবস্থা করেছেন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। সকাল থেকে তিনি নিজেই কন্ট্রোল রুমে থাকবেন। তা ছাড়া বনধে হিংসার কারণে বাসের ক্ষয়ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণের জন্য বিমার ব্যবস্থাও করেছে পরিবহণ দফতর। পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন ঘাটে ফেরি সার্ভিস বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই ব্যাপারটা রাজ্য সরকারের হাতের মধ্যে থাকলেও নবান্নের অবশ্য চিন্তা রয়েছে রেল যোগাযোগ নিয়ে। তার কারণও রয়েছে। নবান্নের কর্তাদের অভিযোগ, গত সোমবার জঙ্গলমহলের বিভিন্ন স্টেশনে আদিবাসী সংগঠন যখন রেল অবরোধ করে তখন কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল রেল সুরক্ষা বল তথা আরপিএফ। অবরোধকারীদের হঠাতে তারা কোনও পদক্ষেপই করেনি। সরকারের অনেকের ধারনা রাজনৈতিক প্রভুর নির্দেশে এমনটা করেছে রেল। তাই রেল লাইনের উপর কোনও অবরোধ হলে, বা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় কেউ বাধা দিলে আরপিএফ এবং জিআরপি যাতে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়, সে জন্য মঙ্গলবার রেলকে চিঠি পাঠিয়েছেন স্বরাষ্ট্র সচিব অত্রি ভট্টাচার্য। ভোর থেকেই কলকাতার রাস্তায় প্রচুর পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ নামানোর ব্যবস্থাও করেছে স্বরাষ্ট্র দফতর।
আর এসবের উপরে শাসক দলের নিজেদের প্রস্তুতি তো রয়েছেই। মুখ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠক ডেকে শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মঙ্গলবার জানান, সমস্ত মন্ত্রী ও তৃণমূল বিধায়করা যেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় থাকেন। স্বাভাবিক জনজীবনে কেই ব্যাঘাত ঘটাতে চাইলে তাঁরা যেন তা মোকাবিলার চেষ্টা করেন।
তবে নবান্ন সূত্র বলছে, পার্থবাবু শুধু ঘোষণা করছেন। ইতালির মিলান শহরে বসে আসলে সব ঘুটি সাজিয়ে রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ, কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই তাঁকে যেন জানানো হয়। তাঁর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি গৌতম সান্যাল এবং মুখ্য সচিব মলয় দে মিলে কার্যত যেন কন্ট্রোল রুম তৈরি করে ফেলেছেন। প্রতি মুহূর্তে তাঁরা যোগাযোগ রাখছেন নবান্নের সঙ্গে।
যদিও বিজেপি নেতা মুকুল রায় মঙ্গলবার রাতে বলেন, এটা ঠিক যে বুধবারের বনধে রাস্তায় প্রচুর পুলিশ ও তৃণমূল থাকবে। কিন্তু এও ঠিক, সাধারণ মানুষ থাকবেন না। জেলায় জেলায় ভাল বনধ হবে। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, কোনও রকম রাজনৈতিক হিংসার আশঙ্কা কি তাঁরা করছেন? জবাবে মুকুলবাবু দাবি করেন, “আমার সেই আশঙ্কা নেই।”
Be the first to comment