পিয়ালি আচার্য
বুধবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সংসদের উভয়কক্ষে বক্তব্য পেশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রভাই দামোদর দাস মোদী। রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর হওয়া বিতর্কে অত্যন্ত চাঁচাছোলা ভাষায় কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন তিনি। নিজের সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান দেওয়ার পাশাপাশি পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধেও জোরালো বক্তব্য পেশ করেন নমো। সেই সঙ্গে নেহেরু-গান্ধী পরিবারকে কটাক্ষ করে বলেন, গণতন্ত্র জওহরলাল নেহেরুর কাছ থেকে শেখেনি, দেশের সভ্যতার মধ্যেই নিহিত ছিল গনতন্ত্র।
স্বাভাবিক ভাবেই নব নির্বাচিত কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এর প্রতিবাদ করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রাহুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভুলে গেছেন তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। সংসদ রাজনৈতিক বক্তৃতা দেওয়ার জায়গা নয়। এই বক্তৃতা তিনি বাইরে গিয়েও দিতে পারতেন। কিন্তু তাঁর বক্তব্যে কৃষকদের জন্য, বেকারদের জন্য কিছু করার কথা কোথায়? শুধু বাঁশ আর মৌমাছি পালনের কথা বলে কৃষকদের প্রতি দায়িত্ব সেরে ফেললেন? ক্ষুব্ধ রাহুল আরও বলেন, রাফালে নিয়ে আমরা অনেক প্রশ্ন তুললেও সে বিষয়ে কেন মুখে কুলুপ এঁটেছেন প্রধানমন্ত্রী।
বাস্তবিক গুজরাট নির্বাচন থেকে এ এক অন্য রাহুলকে দেখছে দেশ। কংগ্রেস সভাপতির গুরুদায়িত্ব তাঁকে অনেকটাই ম্যাচিওরড করেছে। এদিন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে তিনি নির্বাচনী প্রচারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। আসলে গুজরাটে বিজেপিকে ১০০ ছুঁতে না দেওয়ায় আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন রাহুল। এটাই গণতন্ত্রের মাহাত্ম্য, সৌন্দর্য্য।গুজরাটের শাসক, বিরোধীরাই মজবুত করেছে রাজ্যকে।
২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে ৪৪ টি আসন পায় কংগ্রেস। অন্যদিকে ২৮৩ আসন পেয়ে বিজেপি হয়ে ওঠে প্রবল শক্তিশালী। এর ভালো, মন্দ দু’দিকই আছে। একদিকে যেমন পলিসি ইমপ্লিমেন্টেশনে কোনও পিছুটান থাকেনা, তেমনই গণতন্ত্র এতে কিছুটা হলেও দুর্বল হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদী একনায়কের মতো নোটবন্দি, জিএসটি একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা, ২০ টিরও বেশী রাজ্যে বিজেপি রাজ তাকে একের পর এক সংস্কারে মদত জুগিয়েছে। তিন তালাকের মতো যুগান্তকারী বিল পাশ করে প্রমান করেছেন ‘ইয়েস আই ক্যান ডু’।
কিন্তু ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থা এতে খানিকটা ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে মনে হয়। প্রধানমন্ত্রীর এহেন সিদ্ধান্তে বিজেপি এবং এনডিএ-র ভিতর ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছে, ভাঙন ধরেছে এনডিএ ও বিজেপির অন্দরেও। এই অবস্থাতে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে বিরোধীরা। মমতা, রাহুল, লালুপ্রসাদ যাদব, শরৎ যাদব, অখিলেশ যাদব এবং সদ্য এনডিএ ছাড়া শিবসেনাও বিকল্প সরকার গঠনের কথা ভাবছে। বিজেপি বিরোধী সরকার গঠিত হবে কী না তা বোঝা যাবে আগামী ১৭ তম লোকসভা নির্বাচনে। কিন্তু একথা বলাই যায় বিজেপিকে ওয়াক ওভার দিতে প্রস্তুত নয় বিরোধীরা। রীতিমতো ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে মোদী বিরোধী শক্তি। বলা যায় এটাই গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করছে।
Be the first to comment