বিপক্ষের রক্ষণের ত্রাস ছিলেন তিনি। শত্রুর চোখে চোখ রেখে বল পায়ে এগিয়ে যেতেন। আর ‘বুলডোজার’-এর মতো তাঁর পায়ের জোরে কেঁপে উঠত জাল। ডাকাবুকো সেই ভৌমিকের অনুপস্থিতিতে ময়দান আজ একেবারে খাঁ খাঁ করছে। করোনা কাঁটায় শেষ বিদায়েও তাঁর স্পর্শ পাবে না সেই সবুজ গালিচা। এ যেন আরও বেদনাদায়ক। আপামর ফুটবলপ্রেমী বাঙালির স্মরণেই রয়ে যাবেন সুভাষ ভৌমিক।
দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। গত সাড়ে তিন মাস ধরে চলছিল ডায়ালিসিস। কিন্তু শেষ মুহূর্তে শরীরে বাসা বেঁধেছিল মারণ করোনা ভাইরাস। আর সেই কারণে কোভিডবিধি মেনেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে কিংবদন্তি ফুটবলারের। একবালপুরের বেসরকারি নার্সিংহোম থেকে তাঁর মরদেহ সোজা নিয়ে যাওয়া হবে নিমতলা মহাশ্মশানে। করোনা বিধি মেনে প্লাসটিকে জড়ানো থাকবে তাঁর দেহ। সাধারণত কিংবদন্তিদের প্রয়াণের ময়দানের কোনও তাঁবুতে আনা হয় মরদেহ। যেখানে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন অনুরাগীরা। কিন্তু করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তাঁকে এভাবে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাবেন না ফুটবলপ্রেমী, সতীর্থ কিংবা শিষ্যরা।
কিংবদন্তির প্রয়াণের খবর পেয়েই নার্সিংহোমে ছুটে যান মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। শোকজ্ঞাপন করে তিনি জানান, করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন সুভাষবাবু। সেই কারণে তাঁর শেষকৃত্যে বাইরের কোনও জমায়েতের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। পরিবারের তরফে পাঁচজন থাকতে পারবেন শুধু।
ময়দানের ডাকাবুকো ভোম্বলদার প্রয়াণে শোকবার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। লিখেছেন, বিশিষ্ট ফুটবলার ও কোচ সুভাষ ভৌমিকের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। সুভাষ ভৌমিক ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ক্লাব ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৭০ সালে এশিয়ান গেমসে ভারতের ব্রোঞ্জজয়ী দলের সদস্য ছিলেন তিনি। এছাড়াও তিনি কলকাতার তিন প্রধান ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব সুচারু ভাবে পালন করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১৩ সালে তাঁকে ‘ক্রীড়াগুরু’ সম্মানে ভূষিত করে। তাঁর প্রয়াণে ক্রীড়া জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল।
শোকজ্ঞাপন করেছে আইএফএ এবং ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনও। সুভাষের স্মরণে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি শোকসভার আয়োজন করছে ইস্টবেঙ্গল। ফেব্রুয়ারির শুরুতেই মোহনবাগান ক্লাবও শোকসভা করবে বলে জানিয়েছেন অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত।
Be the first to comment