শুভেন্দু অধিকারীই বরাবরের মতো থাকলেন নন্দীগ্রামের শহিদ পরিবারগুলির পাশে; পড়ুন!

Spread the love
ঠিক ১১ বছর আগের ১০ নভেম্বর। উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। হালকা শীতের সেই বিকেলেই সিপিএমের তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক তথা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু মুচকি হেসে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘অপারেশন সূর্যোদয় সফল।’ রাজভবন থেকে বেরনোর সময় তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী বলেছিলেন, ‘হাড় হিম করা সন্ত্রাস।’ এক দশক পরেও নন্দীগ্রামের কথা রাজ্য রাজনীতিতে বারবার ফিরে এলেও এ দিন ততটা আলো পড়ল না পূর্ব মেদিনীপুরের এই জনপদে।
শনিবার কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন থাকায় সব আলো, সব চোখ ছিল নেতাজি ইন্ডোরের দিকেই। নন্দীগ্রাম দিবসের শাসক দলের কর্মসূচিতে একাই সেখানে পৌঁছলেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পুরোধা নেতা তথা রাজ্যের পরিবহণ ও পরিবেশমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামে সন্ত্রাস কবলিত মানুষগুলো রুখে দাঁড়িয়েছিলেন একদা তাঁরই নেতৃত্বে। সে দিনের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের স্মরণে শনিবার সেই শুভেন্দুই বরাবরের মতো থাকলেন শহিদ পরিবারগুলির পাশে। যদিও শনিবার সকালে টুইট করে নন্দীগ্রামের সেই সন্ত্রাসের কথা স্মরণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০০৭ সালে ১৪ মার্চ পুলিশের গুলিতে ১৪ জনের মৃত্যুর পর কার্যত নন্দীগ্রাম হাতের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল লক্ষ্মণ শেঠদের। সাত মাস বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রশাসন পা-ই রাখতে পারেনি সেখানে। কিন্তু আলিমুদ্দিন এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা নেতাদের বলেও নন্দীগ্রাম কন্ট্রোলের দাওয়াই খুঁজে পাননি সেই সময়ের বাম নেতারা। সে বছর পুজোর সময়ই সিপিএম ঠিক করে, পুজো মিটলেই নন্দীগ্রাম পুনর্দখল করতেই হবে। এবং সেটা যেনতেনপ্রকারেণ। নিমতৌড়ির সুকুমার সেনগুপ্ত ভবন (সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা দফতর)-কে দিয়ে কাজ হচ্ছে না দেখে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট দায়িত্ব দেয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নেতাদের উপর। পর্যবেক্ষকদের মতে, তার একটাই কারণ, পশ্চিম মেদিনীপুরের নেতা বলতে সুশান্ত ঘোষ, দীপক সরকারদের বায়োডেটায় ১৯৯৯-২০০০ সালের কেশপুর দখলের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এ দিন সেখানে যান শুভেন্দু অধিকারী। পালন করেন দলীয় কর্মসূচি। সেই সঙ্গে ছিলেন বিধায়ক ফিরোজা বিবি, স্থানীয় নেতা শেখ সুফিয়ান, আবু তাহের প্রমুখ। শহিদদের উদ্দেশে শ্রদ্ধার্ঘ্য দিয়ে শুভেন্দুবাবু বলেন, “২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর সিপিএমের হার্মাদরা নন্দীগ্রামে যে ভাবে গুলি চালিয়েছিল তা জালিয়ানওয়ালা বাগের হত্যাকাণ্ডের তুলনায় কোনও অংশে কম নয়। জালিয়ানওয়ালা বাগে ব্রিটিশরা চারিদিক থেকে গুলি চালিয়েছিল। তার পর ক্ষতস্থানে মলম লাগানোর চেষ্টা করেছিল। হার্মাদরা ওদের থেকেও নৃশংস।” তাঁর কথায়, ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামে হার্মাদ বাহিনীর গুলি নির্বিচারে প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির বহু সদস্যের। নারী, পুরুষ, শিশু কেউই তাদের সন্ত্রাস থেকে রেহাই পায়নি। দু’জনকে ঘটনাস্থলে মারা হয়েছিল। বাকি ১১ জনকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছিল। গুলি বিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন আরও অনেকে। জালিয়ানওয়ালা বাগের ঘটনার মতই নন্দীগ্রামের ঘটনা ইতিহাসের পাতায় থেকে যাবে।
স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার কথায়, “নন্দীগ্রামের সাফল্য না এলে সিঙ্গুরও সফল হতো না। নন্দীগ্রাম সফল হওয়ার পরই দ্বিতীয় পর্বে সিঙ্গুর আন্দোলন অক্সিজেন পায়। কিন্তু ব্যাপারটা এখন অনেকটাই সুয়োরানি-দুয়োরানির মতো হয়ে গিয়েছে। নন্দীগ্রাম যেন দুয়োরানি। গত কয়েক বছর ধরে শুধু শুভেন্দুবাবু ছাড়া তৃণমূলের উপরের সারির কোনও নেতাকে নন্দীগ্রাম দিবসে দেখা যায় না।”

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*