বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে তাঁকে আনতে বুধবার সকালে রায়গঞ্জ থেকে যখন পুলিশের পাইলট কার রওনা হয়েছিল, সেটাতেই হামলা চালিয়েছিল বনধ সমর্থকরা। ঘিরে ধরে রীতিমতো ভাঙচুর চালায় তারা। একই সঙ্গে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি বাস। ইসলামপুর জুড়ে বড় সড়কের উপর পড়ে থাকতে দেখা যায় জ্বলন্ত টায়ার। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে থাকা আকাশ।
কিন্তু পরিবহণ ও পরিবেশ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে আটকাতে পারল না। ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামের আন্দোলন যখন হয়েছিল, তখন শুভেন্দুর বয়স ৩৬। আগের তুলনায় শরীরের ওজন বাড়লেও নন্দীগ্রামের বিধায়কের তেজ যেন আগের মতোই। বললেন, “নন্দীগ্রামে ঢুকতে গেলে সিপিএম ১১ বার বাধা দিয়েছিল পারেনি। ভয় দেখিয়ে, আগুন জ্বালিয়ে আমাকে আটকানো যাবে না।”
ইসলামপুরের দাড়িভিট স্কুলের গণ্ডগোল ও হিংসার ঘটনাতেই দু’জন ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। যার প্রতিবাদে বুধবার রাজ্য জুড়ে ১২ ঘণ্টার বনধ ডেকেছিল বিজেপি। তৃণমূলের তরফে উত্তর দিনাজপুরের পর্যবেক্ষক শুভেন্দু। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, বনধের দিনেই তিনি ইসলামপুর যাবেন। এলাকায় শান্তি ফেরাতে মিছিল করবেন। জনসভাও করা হবে ইসলামপুরে। বস্তুত তাঁকে ঠেকাতেই এ দিন সকাল থেকে অগ্নিগর্ভ ছিল ইসলামপুর। এমনকী বিজেপি-র বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন নিহত ছাত্র তাপস বর্মনের মা।
এ হেন পরিস্থিতিতে এ দিন কলকাতা থেকে বিমানে রওনা হয়ে দুপুর ১ টা নাগাদ বাগডোগরা পৌঁছন শুভেন্দু। তার পর সেখান থেকে গাড়িতে ইসলামপুর।
জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে পরিবহণ মন্ত্রী বলেন, “বিজেপি ভেবেছে কী? বিহার থেকে দু-চারটে চ্যাংড়া এনে, মুখে গামছা বেঁধে, হাতে বন্দুক-বোমা দিয়ে সন্ত্রাস করবে। জঙ্গলমহলে কী হয়েছিল ওরা ভুলে যাচ্ছে। কিষাণজি ও মাওবাদীরা এ ভাবেই মুখে গামছা বাঁধত। ওদের কী পরিণতি হয়েছিল মানুষ দেখেছেন।”
মুখে এই হুঙ্কার দিলেও শুভেন্দুর এটা বুঝতে হয়তো অসুবিধা হচ্ছে না ছাত্র মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষের অসন্তোষ সরকারের বিরুদ্ধে রয়েছে। বিশেষ করে নিহত ছাত্রের পরিবারের লোকজন সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ। এই অবস্থায় রাজনৈতিক ভাবে তাদের আস্থা ফিরে পাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ। তাই প্রথম দিন থেকেই তৃণমূল নেতাদের নিহত ছাত্রদের বাড়িতে পাঠাতে শুরু করেছেন পরিবহণ মন্ত্রী। মমতা-মন্ত্রিসভার সদস্য গুলাম রব্বানি ও স্থানীয় বিধায়ক কানহাইয়ালাল আগরওয়াল একাধিক বার নিহত রাজেশ ও তাপসের বাড়িতে গিয়েছেন। সেখানে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়লেও ফের গিয়েছেন।
এ দিন শুভেন্দুও বলেন, দু-তিন দিনের মধ্যে ইসলামপুরে এসে আমি যাব রাজেশ-তাপসের বাড়িতে। তাঁর কথায়, “ওদের পরিবারের লোকজনকে বলছি, দাড়িভিট কাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে। আপনারা আস্থা রাখুন। কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না।”
নিহতদের পরিবার ও এলাকার মানুষকে এ কথা বোঝাতে গিয়ে অতীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনের প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন পরিবহণ মন্ত্রী। বলেন, “সিপিএমের আঘাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছে। উনি দমেননি। মানবাধিকারের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বরাবর লড়ে গিয়েছেন। ভিখারি পাসওয়ানের মৃত্যু হোক বা সিঙ্গুরে তাপসী মালিক, হাওড়ার মনতাসি রহমান বা বাঁকুড়ার সুদীপ ঘটকের মৃত্যুর ঘটনায় শেষ পর্যন্ত লড়ে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”
তবে এ সব কথার পাশাপাশি এটা বাস্তব যে ইসলামপুর ও সংলগ্ন এলাকায় বিজেপি এবং আরএসএস এখন খুবই সক্রিয়। তারা সংগঠনও আগের থেকে মজবুত করেছে। এ দিন ইসলামপুরে বনধের ছবিতেই প্রমাণিত যে সেখানে বিজেপি-কে এখন আর অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়। হয়তো সে কারণেই দলের কর্মীদের উদ্দেশে শুভেন্দু এ দিন বলেন, “গ্রামে গ্রামে ব্লকে ব্লকে দুর্ভেদ্য দুর্গ গড়ে তুলুন। ধর্মের নামে কোনও ভাবেই সমাজে বিভাজন হতে দেওয়া যাবে না। আমরা সিপিএমের মতো নাস্তিক নই। কিন্তু আমাদের ধর্ম একার, উৎসব সবার। টিএমসি-র অর্থই হল, টেম্পল (মন্দির), মস্ক (মসজিদ) এবং চার্চ (গির্জা)।
Be the first to comment