সমস্ত জল্পনার অবসান। আগামী শনিবারের মধ্যেই বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। ওইদিনই শুভেন্দুর গড়ে যাবেন অমিত শাহ। শোনা যাচ্ছে তাঁর উপস্থিতিতেই শুভেন্দুর দলবদল হবে। তার আগেই শুভেন্দু ইস্তফা দেবেন বিধায়ক পদ থেকে।
এদিন হলদিয়ার অরাজনৈতিক সভা থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন শুভেন্দু অধিকারী। বলেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলন কোনও ব্যক্তির নয়, ওই আন্দোলন ছিল জনতার। তিনি এদিনও বলেন, কোনও পদের লোভ নেই তাঁর। ব্যক্তি আক্রমণ নিয়েও মুখ খোলেন শুভেন্দু। বলেন, যাঁরা তাঁকে আক্রমণ করছে তাঁদের অবস্থা অনিল বসুদের মতো হবে।
স্বাধীনতা সংগ্রামী সতীশ সামন্তের জন্মদিন পালন করতে হলদিয়ায় গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, জওহরলাল নেহরু সতীশ সামন্তকে দেখলে উঠে দাঁড়াতেন ৷ সতীশ সামন্ত জওহরলাল নেহরুকে বহিরাগত ভাবতেন না ৷ ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে শুভেন্দু বলেন, আমরা প্রথমে ভারতীয়, তার পরে বাঙালি ৷
পাশাপাশি স্বাধীনতা সংগ্রামে তাম্রলিপ্তে জাতীয় সরকার গঠনের সঙ্গে এদিন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের তুলনা করেন শুভেন্দু অধিকারী ৷ তিনি বলেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলন কোনও ব্যক্তির ছিল না; কোনও দলের ছিল না। ছিল মানুষের আন্দোলন ৷ তাম্রলিপ্তের ইতিহাস যদি পড়েন, তাহলে দেখবেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে মানুষ জাতীয় সরকার গড়তে যে আন্দোলন করেছিল, নন্দীগ্রাম আন্দোলনও তার ক্ষুদ্র সংস্করণ ৷
শুভেন্দুবাবু আরও বলেন, আমরা ভাল কাজের জন্য লড়ব ৷ দেশ মাতৃকার বন্দনা করব ৷ বেকার যুবকের কর্মসংস্থান, কৃষকের অধিকার, বাংলায় গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য লড়ব ৷ পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র ফেরাতে হবে, কেন ফর দ্য পার্টি, বাই দ্য পার্টি ব্যবস্থা থাকবে? নন্দীগ্রামের বিধায়ক আরও বলেন, কোনও পদের লোভ তিনি করেন না ৷ মন্ত্রিত্ব ছাড়লেও তাঁর সভায় লোক হয় ৷
তিনি আরও বলেন, শুভেন্দু অধিকারী কোনও পদের লোভ করেন না ৷ কেউ কেউ বলেছিলেন না পদ দেখিয়ে লোক আনছে ৷ আমি মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পরও আমার সভায় লোক আসছে ৷ এই লোককে তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএমস, কংগ্রেসের পদে যাঁরা আছে তাঁরা আনেনি ৷ এঁদের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক ৷
শুভেন্দু তৃণমূলের সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করছেন ধাপে ধাপে। গত ২৫ নভেম্বর তিনি প্রথমে ইস্তফা দেন হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে। ২০১১ সাল থেকে এই পদে বহাল ছিলেন শুভেন্দু। এর দুদিন পরেই ছাড়েন মন্ত্রীত্ব। ইস্তফাপত্র যায় কালীঘাটে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনে, কারণ স্যানেটাইজেশনের জন্য সেই দিন নবান্নর দ্বার বন্ধ ছিল। ধাপে ধাপে প্রশাসনিক পদগুলি থেকে সরে দাঁড়ালেও শুভেন্দু তাঁর বিধায়ক পদটি ছাড়েননি।
এদিকে ডিসেম্বরের প্রথম দিন শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠক করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে হাজির ছিলেন সৌগত রায়, ভোটকুশলী প্রশান্তকিশোর, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রা। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় নিজে সাংবাদিকদের ডেকে জানান, বৈঠক অত্যন্ত ইতিবাচক। সব পক্ষ একটা সাধারণ জায়গায় এসেছে, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। আপাতত সব সমস্যা মিটে গিয়েছে। তৃণমূলেরই থাকছেন শুভেন্দু অধিকারী। তাল কাটে ঠিক একদিন পরেই। শুভেন্দু বলেন, যৌথ প্রেস কনফারেন্সের শর্ত মানেননি দল। তাই আর একসঙ্গে পথ চলা সম্ভব নয়।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের টিকিটে কাঁথি দক্ষিণ বিধানসভা থেকে জয়লাভ করেন। ২০০৯ সালে তমলুক থেকে লোকসভা নির্বাচনে জয়যুক্ত হয়ে শিল্প দফতরের স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। ২০১৪ সালেও নিজের আসনে জয়ী হন শুভেন্দু। ২০১৬ সালে পদত্যাগ করে নন্দীগ্রাম থেকে লড়াই করেন। জয় আসে এবারেও। পরিবহণ দফতরের দায়িত্ব যায় তাঁর হাতে।
Be the first to comment