প্রবল রাজনৈতিক আঁচে পুড়ছে নন্দীগ্রাম। স্বাভাবিক, ভোটের নন্দীগ্রামে প্রবল দুই প্রতিপক্ষের নাম যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী।
একদিকে মমতা যখন শুভেন্দুকে ‘গদ্দার’, ‘মীরজাফর’ বলে প্রত্যহ আক্রমণ শানাচ্ছেন, শুভেন্দু তখন ‘মমতা বেগম’কে বিঁধছেন তোষন, তোলাবাজি ইস্যুতে। জমি আন্দোলনের ধাত্রীভূমি নন্দীগ্রামে যে কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়তে রাজি নয়, তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। মঙ্গলবারই শেষ হচ্ছে নন্দীগ্রামের ভোট প্রচার। তার আগে সব শিবিরেই চূড়ান্ত প্রচার-ব্যস্ততা।
গতকাল থেকেই নন্দীগ্রামে ঘাঁটি গেড়েছেন মমতা, আর শুভেন্দু তো ‘ঘরের ছেলে’। তা দুজনের মধ্যে বাকযুদ্ধ যতই সপ্তমে পৌঁছাক না কেন, সৌজন্যের নিরিখে কিন্তু ভোটের আগেই লেটার মার্কস পেয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা সৌজন্য দেখালেন তাঁকে, যে কিনা তৃণমূল নেত্রীকে উৎখাতের ডাক দিয়েছেন। হ্যাঁ, শুভেন্দুর প্রতিই দেখা গেল মমতার সৌজন্য।
ঘটনা কী? যে বিরুলিয়া বাজারে মনোনয়ন পেশের দিন পায়ে গুরুতর আঘাত পান মমতা, সেখানেই সোম সন্ধ্যায় মুখোমুখি পড়ে যায় মমতা ও শুভেন্দুর কনভয়। কেউ কারও সঙ্গে মুখোমুখি পড়ে যাননি ঠিকই, দুজনেই ছিলেন গাড়ির ভিতরেই, কিন্তু সামনেই শুভেন্দুর কনভয় রয়েছে জানতে পারা মাত্রই অভাবনীয় নির্দেশ দেন মমতা। তিনি নির্দেশ দেন, শুভেন্দুর কনভয়কেই যেন আগে জায়গা করে দেওয়া হয়। সেই মতোই সেখান থেকে আগে বেরিয়ে যান শুভেন্দু অধিকারী।
প্রসঙ্গত, বিরুলিয়া বাজারে মুখ্যমন্ত্রীর আঘাতের ঘটনায় তিনি সরাসরি শুভেন্দুর দিকেই তোপ দেগেছেন। শুভেন্দুর নাম না করে মমতা বলেছেন, ‘তোর নির্দেশ ছাড়া আমার পায়ে লাগত না।’ অর্থাৎ, শুভেন্দুকে রীতিমতো ষড়যন্ত্রকারী বলেই দেগে দেন মমতা। কিন্তু যখন সৌজন্যের প্রশ্ন এল, তখন কিন্তু মমতা তা দেখাতে বিন্দুমাত্র পিছপা হননি।
রাজনৈতিক মহলের বড় অংশই বলছে, মমতার এই সৌজন্যবোধ নতুন নয়। ২০১১ সালে রাজ্যের ক্ষমতা পরিবর্তনের সময় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সহ শীর্ষ বাম নেতাদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। শুধু আমন্ত্রণই নয়, শপথ নিতে ওঠার সময় বুদ্ধদেবের পা ছুঁয়েও প্রণাম করেছিলেন মমতা। সেই সময়ের জন্য ভুলে গিয়েছিলেন রাজনৈতিক সংঘাত। আজ আবার একটা ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে সেই সৌজন্যই যেন ফিরিয়ে আনলেন মমতা।
Be the first to comment