খুন হওয়ার প্রায় মাস তিনেক আগের ঘটনা। ইন্সপেক্টর সুবোধ সিংকে বদলির চেষ্টায় নামেন বুলন্দশহরের বিজেপির নেতারা। নেতৃত্বের কাছে রীতিমতো চিঠি লিখে অন্যত্র সরানোর সুপারিশ করা হয়। একাধিক অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। ধর্মের নামে বেচাল দেখলেই বাধা দিতেন সুবোধ সিং। নেতাদের বারণ সত্ত্বেও হেলমেটবিহীন বাইক আরোহীদের জরিমানা করতেন। কোনও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড দেখলেই যমের মতো হাজির হতেন। আর আখলাক হত্যার তদন্ত তো ছিলই। সবমিলিয়ে বেশ বিরক্ত ছিলেন নেতারা। চিঠি লেখার বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বুলন্দশহরের বিজেপির সভাপতি সঞ্জয় শ্রোতিয়া। দুই ছত্রের সেই চিঠির মূল বক্তব্য ছিল, সিং ও তাঁর নেতৃত্বাধীন পুলিশদের অবিলম্বে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে যতদ্রুত সম্ভব, বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা উচিত। টিঠিতে সই ছিল বিজেপির প্রাক্তন কর্পোরেটর মনোজ ত্যাগীরও।
সঞ্জয় শ্রোতিয়ার বক্তব্য অনুযায়ী, ‘তাঁর সঙ্গে আমাদের সদ্ভাব ছিল না। সিং বারবার শহরের মধ্যে হেলমটে বিহীন বাইক চালকদের ধরতেন। বহুবার বারণ করলেও শোনেননি। আমাদের অনুরোধ বহুবার ফেরান তিনি। (মোটর ভেহিকেলস আইনে, হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো অপরাধ। সম্ভবত জানা ছিল না শ্রোতিয়ার)। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও বাধা দেন। অনেকেই অসন্তুষ্ট ছিলেন ছিলেন তাঁর উপর।’ শেষপর্যন্ত অবশ্য কিছুটা হলেও তাদের ইচ্ছাই পূরণ হল। অন্যত্র নয়, না ফেরার দেশেই চলে গেলেন সুবোধ সিং। কিন্ত রেখে গেলেন একধিক প্রশ্নচিহ্ন।
অন্যদিকে, তাঁকে হত্যার ঘটনায় এনডিটিভি সূত্রে জানা গেছে, উত্তরপ্রদেশের পুলিশ সুবোধ সিং হত্যার ঘটনায় এক জওয়ানকে চিহ্নিত করতে সমর্থ হয়েছে। অভিযুক্ত জওয়ানের নামে জিতু ফৌজী। শ্রীনগরে কর্মরতে রয়েছে সে। বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ এসেছে পুলিশের হাতে। সেখানে জিতুকে পিস্তল নিয়ে বেশ কয়েকবার দেখা গেছে।
সূত্রের খবর, সুবোধ সিংয়ের ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পর থেকেই সেনা জওয়ানের উপস্থিতির সন্দেহ জোরালো হয়। ময়না তদন্তের রিপোর্ট থেকেই জানা গেছে, .৩২ বোরের পিস্তল দিয়ে খুন করা হয় সুবোধ সিংকে। এমনকী, আরেক বিক্ষোভকারী সুমিতের দেহ থেকেও উদ্ধার হয় একই পিস্তলের গুলি। সাধারণত এটি আর্মি পিস্তল হিসেবেই বেশি পরিচিত। পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, ইতিমধ্যেই জম্মু ও কাশ্মীরের উদ্দেশে পুলিশের দুটি বিশেষ তদন্তকারী দল রওনা হয়ে গিয়েছে।
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সুবোধ সিং দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। আচমকাই উত্তেজিত জনতা তাঁদের আক্রমণ করে। সেখানেও রয়েছে জিতু। কয়েকজনকে বলতে শোনা যায়, ‘মারো, বন্দুক ছিনিয় নাও’। এরপরেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় সুবোধ সিংকে। আরেকটি ভিডিওতেও দেখা যায়, মৃত সুবোধ সিংয়ের সামনের দাঁড়িয়ে রয়েছে জিতু। পুলিশ আরও জানিয়েছে, ৩ ডিসেম্বর ওই ঘটনার পরেই জিতু পালিয়ে কাশ্মীর চলে যায়। যদিও জিতুর মায়ের দাবি, তার ছেলে খুন করতে পারে না। তবে যদি সত্যিই সে খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে, অবশ্যই যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।
Be the first to comment