কলকাতার মহানাগরিক পদে সুব্রত তৈরি করেছিলেন একাধিক দৃষ্টান্ত

Spread the love

বৃহস্পতিবার রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ৷ ৭৫ বছর বয়সে চলে গেলেন রাজ্যের এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ। রাজ্যে তৃণমূল সরকারের আমলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলোনোর আগেও তিনি কংগ্রেস জমানায় সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায় রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছেন ৷ কিন্তু কলকাতার এক বড় অংশের মানুষের কাছে আজও তাঁর পরিচয় প্রাক্তন মেয়র হিসেবে ৷ তিনি ছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক ৷

তাই তাঁর চলে যাওয়া শোকের ছায়া নামিয়েছে কলকাতার বহু প্রবীণ নাগরিকের অন্তরে। তিনি কলকাতা পৌরনিগমে মেয়র পদে ছিলেন ২০০০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত। বহু দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। মেয়র হিসেবে তাঁর বেশকিছু সিদ্ধান্তে বিতর্ক থাকলেও সাহসী পদক্ষেপের জন্য বিপুল জনসমর্থনও পেয়েছিলেন তিনি। সেই সময় তৃণমূল কংগ্রেস কলকাতা পৌরনিগমে বোর্ড গঠন করেছিল। শহর কলকাতার উন্নয়নে ও শহরকে পরিষ্কার রাখতে সেসময় বহু দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি ৷ প্রশাসনকে মানুষের স্বার্থে কাজে লাগাতে চাইতেন তিনি ৷ কিন্তু প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নিতেও পিছপা হতেন না মেয়র সুব্রত ৷

একবার কলকাতা শহরের এক পাঁচতারা হোটেলের বহুদিনের পুরকর বকেয়া ছিল। বকেয়া সেই পুরকর আদায় করার জন্য ওই পাঁচতারা হোটেলের জলের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছিল তাঁর নির্দেশে। ক্যামাক স্ট্রিটে এক বহুতল বেসরকারি সংস্থা দীর্ঘদিনের বকেয়া কর জমা না দেওয়ায় তাদের অফিসের সামনে আবর্জনার গাড়ি গিয়ে আবর্জনার স্তুপ ফেলে দিয়ে আসে। পরে বাধ্য হয় সেই সংস্থা বকেয়া পুরকর জমা দিতে। এছাড়াও শহরে প্রকাশ্যে মাংস কাটা অর্থাৎ রাস্তার উপর জনসমক্ষে জবাই করা বন্ধ করেছিলেন তিনি।

সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আমলেই কলকাতা পৌরনিগমে কর্মসংস্কৃতি ফিরে এসেছিল। পুরকর্মীদের মধ্যে কর্মসংস্কৃতি তৈরিতে জোর দিতেন তিনি। পুরকর্মীদের নিয়মানুবর্তিতা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে পুর পরিষেবা দেওয়ার জন্য উৎসাহ দিতেন তিনি। তাঁর আমলেই প্রথম আইন চালু করে বলা হয়েছিল, কলকাতা শহরের পুরানো বাড়িগুলিতে বাইরে থেকে ক্যাপসুল লিফট বসানো যাবে। বিরোধীদের সঙ্গেও অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। তিনি মেয়র পদে থাকাকালীন সিপিএমের কাউন্সিলররা অবাধে তাঁর ঘরে যাতায়াত করতেন। বিরোধী কাউন্সিলরদের সঙ্গে গল্প করতেন, সময় কাটাতেন সুব্রতবাবু। বিরোধী কাউন্সিলরদের সমস্ত কথা শুনতেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেন।

বামফ্রন্ট সরকারের জমানায় তিনি যখন মেয়র পদ সামলাচ্ছেন, সেসময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও পুরমন্ত্রী ছিলেন অশোক ভট্টাচার্য। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের। সেই সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে কলকাতা শহরের জন্য বহু বকেয়া আদায় করেছিলেন তিনি ৷

কলকাতা পৌরনিগমের সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলতেন বর্ণময় ব্যক্তিত্বের সুব্রত ৷ তাঁর এই অকস্মাৎ প্রয়াণে কলকাতা পৌরনিগমের অন্দরেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া ৷

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*