ছেলের মৃতদেহ আঁকড়ে আছাড়ি পিছাড়ি খাচ্ছেন মা। নির্বাক পরিবার ও প্রতিবেশীদের সামনে একটানা বলে যাচ্ছেন, “আমার শাসনের কি এটাই পরিণতি?”
মায়ের সামান্য বকাবকি। তাতেই অভিমান। আর অভিমান এতটাই গভীর যে জীবনের চরম ঝুঁকি নিতেও পিছপা হল না কিশোর। মা’কে একপ্রকার ‘শাস্তি’ দিতেই আত্মঘাতী হয়েছে জয়নগরের দেওয়ানগঞ্জে বছর পনেরোর আকাশ মুখোপাধ্যায়। মর্মান্তিক এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা এলাকায়।
আকাশের মা জানিযেছেন, বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর ভাসান দিতে গেছিল আকাশ। বার বার বলে দেওয়া সত্ত্বেও ফিরতে দেরি করে। তাই তিনি একটু বকা দিয়েছিলেন। তাতেই গোঁসা হয় ছেলের। কখন চিলেকোঠার ঘরে ঢুকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়ে কেউ জানতেও পারেননি। পরে ছেলেকে ডাকাডাকি করতে গিয়ে ছাদের ঘরে ঢুকে দেখেন কড়িকাঠ থেকে ঝুলছে আকাশ।
তড়িঘড়ি তাকে নামিয়ে বারুইপুর মহাকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানান দেহে আর প্রাণ নেই। খবর পেয়ে আকাশের বাড়িতে পৌঁছেছে পুলিশ।
দেওয়ানগঞ্জ হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আকাশ। পড়াশোনায় মেধাবী। তার পরিবারের কথায়, আকাশ একটু অভিমানী। বকাবকি করলে রাগ করত। ছেলের এমন পরিণতিতে শোকে পাথর আকাশের বাবা। বললেন, “সামনেই মাধ্যমিক পরীক্ষা। তাই ওর মা একটু বকাবকি করেছিল। এমন ছোট্ট কারণের জন্য নিজের জীবনটা এভাবে শেষ করে দেবে ভাবতেই পারছি না।”
খুব সামান্য কারণেই ছেলেমেয়েদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে আগ্রাসী ভাব। ঘরে বাইরে প্রতিযোগিতার মুখে বাড়ছে মানসিক অবসাদও। এমনটাই জানাচ্ছেন মনোবিদরা। মা-বাবার বকাবকিতে অভিমান করে ছেলেমেয়েদের আত্মহত্যার ঘটনা আগেও ঘটেছে, এবং ঘটে চলেছে। শুধু অভিভাবক নয়, স্কুল শিক্ষক বা বন্ধুবান্ধবের আচরণে রাগ করে আত্মঘাতী হয়েছে এমন উদাহরণও অসংখ্য। তাই অভিভাববকদের প্রয়োজনের থেকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে বলছেন মনোবিদরা।
Be the first to comment