গত দুবছরে সেনাবাহিনীর অত্যাচারে সাত লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা মায়ানমার ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। অভিযোগ, প্রশাসনের শীর্ষে থাকা সত্ত্বেও অত্যাচার বন্ধ করার চেষ্টাই করেননি শান্তিতে নোবেল বিজয়িনী আউং সান সু কি । সেজন্য অতীতে তিনি যে সব আন্তর্জাতিক সম্মান পেয়েছিলেন, তার অনেকগুলি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এবার তাঁর সম্মান কেড়ে নিল মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনস্টি ইন্টারন্যাশনালও ।
অতীতে সু কি মায়ানমারের সেনা শাসকদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই চালিয়েছেন। সেজন্য বিশ্বের নানা দেশে তিনি ছিলেন সম্মানের পাত্রী । ২০০৯ সালে তাঁকে যখন সেনাশাসকরা গৃহবন্দি করে রেখেছিল, তখনই লন্ডনের অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাঁকে অ্যাম্বাসাডর অব কনসায়েন্স পুরস্কার দেয় । কিন্তু রোহিঙ্গাদের ওপরে গণহত্যা চলা সত্ত্বেও তিনি যেভাবে নীরব রয়েছেন, তাতেই অসন্তুষ্ট অ্যামনেস্টি । সংগঠনের প্রধান কুমি নায়দো বলেন, আমরা দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, এখন আর সু কি সাহস ও মানবাধিকারের পক্ষে সংগ্রামের প্রতীক নন । এখন তিনি অ্যাম্বাসাডর অব কনসায়েন্স পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য নন। তাই ওই সম্মান ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ।
গত রবিবার ৭৩ বছরের সু কি-কে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে অ্যামনেস্টি । তিনি এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি ।
২০১৫ সালে মায়ানমারের নির্বাচনে সু কি-র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি ক্ষমতায় আসে । আশা করা হয়েছিল, তার আগে ৫০ বছরের সেনা জমানায় দেশে যে অত্যাচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘন চলত, তা বন্ধ হবে। কিন্তু সু কি-র দল ক্ষমতায় আসার পরেও দেখা যায়, দেশে দুর্নীতি বন্ধ হয়নি। নানা জায়গায় গণ্ডগোল লেগেই আছে । সবচেয়ে বড় কথা, রোহিঙ্গাদের নিয়ে দীর্ঘদিনের সমস্যারও সমাধান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি ।
অ্যামনেস্টির ধারণা, ২০১৭ সালে মিলিটারি পশ্চিম রাখাইন প্রদেশে যে অভিযান শুরু করেছিল, তাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। মায়ানমার সরকারের দাবি, সন্ত্রাসবাদ রুখতে সেনা অভিযান চালানো জরুরি ছিল । অ্যামনেস্টি মনে করে, সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সু কি-র নেই । কিন্তু সু কি-র অপরাধ হল তিনি সেনাবাহিনীর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন । আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলি যখন উপদ্রুত এলাকায় যেতে চেয়েছিল, তিনি বাধা দিয়েছেন।
তিনি যখন সেনা শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন, তাঁকে সম্মান জানিয়ে নাগরিকত্ব দিয়েছিল কানাডা । সেই সম্মান কেড়ে নেওয়া হয়েছে গত মাসেই । বহু বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মান দিয়েছিল। সেসবও কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
Be the first to comment