সোমা মুখার্জি : কলকাতায় ২৬ সেপ্টেম্বর যখন দেবীর বোধন শুরু হচ্ছে, সেখানে গত ২৪ সেপ্টেম্বর মধ্য রাতের মধ্যে সুদূর ক্যালিফোর্ণিয়ার সান ফ্রান্সিসকো শহরে মা দুর্গার বিসর্জন হয়ে গেল। ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর এই দুটি দিন প্রহর মেনে দেবীর পুজো করে থাকেন সেখানকার প্রবাসী বাঙালিরা। ছুটির দিন শনিবার ও রবিবার পুজো হওয়াতে সান ফ্রান্সিসকোর বাঙালিরা দুর্গাপুজোর আনন্দ ভাগ করে নিতে পেরেছিল সকলের সঙ্গে।
শুধু বাঙালি বললে ভুল হবে, সকল ভারতীয় ও বিদেশিনীরাও সমবেত হয়েছিল দু-দিনের দুর্গাপুজোতে। অবাঙালিরা নবরাত্রির আরাধনাও করেছিল দেবী মূর্তির কাছে।
কলকাতার কুমারটুলির একচালা দুর্গা প্রতিমা পাড়ি দিয়েছে সান ফ্রান্সিসকোর সান রামন অঞ্চলে। এই শহরে প্রায় ৪টি দুর্গাপুজো হয়ে থাকে। আয়োজক অবশ্যই প্রবাসী বাঙালিরা।
কর্মজীবনের শুর থেকেই প্রবাসী হয়ে গেছেন ৩৮ বছরের জয়দীপবাবু। আমেরিকা, চীন, কানাডার পর সান ফ্রান্সিসকো শহরে দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন তিনি।
শরৎকাল এলেই বাঙালিদের মধ্যে এক আনন্দ প্রবাহ বয়ে চলে। কারণ, দুর্গাপুজো। চীনের সাংহাই শহরে থাকাকালীন দুর্গাপুজোকে মিস করতেন তিনি। কারণ, ধর্মীয় কোনও বিধিই প্রকাশ্যে মানা হতো না সে দেশে।
সান ফ্রান্সিসকোতে কর্মজীবন শুরুর পর শরৎকালে মা দুর্গার আগমন দেশের বাইরে হলেও বাঙালি মনকে যে এক অনাবিল আনন্দ দিয়ে যায় তা জয়দীপবাবুর সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যায়। জামশেদপুরে বড়ো হওয়া, কলকাতায় মামারবাড়ি, বিহারের নারায়ণ পরিবারের মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে পাওয়া, বিদেশের চাকরি—এক কিছুর মধ্যেও বাঙালি সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন জয়দীপবাবু। রবীন্দ্রসংগীত, নিয়মিত রামকৃষ্ণদেব ও স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে নিজেকে তৈরি করার প্রয়াস জয়দীপবাবুকে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে বলে তাঁর অভিমত। আর মা দুর্গারূপী শক্তির আরাধনা বাঙালি তথা ভারতীয়দের দেশের বাইরেও যে এক জীবনী শক্তির অনুঘটকের কাজ করে তা বলাই বাহুল্য।
পুজোর দুটি দিন ভোগ থেকে ধুনুচি নাচ, সিঁদুর খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান—সব রকম আয়োজনের ব্যবস্থা থাকে এখানে। মাছ, ভাত, মিষ্টি মুখ বাঙালি সংস্কৃতি ও রীতির একশো শতাংশ পালন করা হয়। সকল ভারতীয়রা মিলে বিদেশিদের কাছে ভারতীয় সংস্কৃতি বিশ্বদরবারে এক ভালোবাসার মেলবন্ধনের আনন্দ উপহার দিয়ে থাকেন।
Be the first to comment