ঘুরে ট্যুরে
এ এক অন্য সুন্দরবন….
সমগ্র উত্তর ২৪ পরগনার লোকের কাছে সুন্দরবন হলো আরো কাছে। মাত্র ৪-৫ ঘন্টার দুরত্ব। সবাই যখন ক্যানিং দিয়ে দক্ষিণ এর সুন্দরবন দেখছেন আপনারা তখন হাসনাবাদ হয়ে গিয়ে উত্তরের সুন্দরবন দেখুন যেটা প্রকৃত অর্থে সত্যি সুন্দরি। অচেনা অজানা সুন্দরবনকে আপনাদের সবার ভালো লাগবে।
আজ আপনাদের সামনে হাজির করব নতুন এক জায়গার নাম। গোবিন্দকাটি, সামসেরনগর এর কাছে, পূর্ব সুন্দরবন। প্রথমেই বলি জায়গাটার ভৌগোলিক অবস্থান। গ্রামটির বাম দিক থেকে বয়ে গেছে কালিন্দি নদী আর ডান হাতের নিচের দিকে এ সুন্দরবন এর সবচেয়ে সুন্দর আর ঘন অংশটা। কালিন্দি নদীর ওপর পাড় হলো বাংলাদেশ। মানে সোজা কথায় বাংলাদেশ আর সুন্দরবন এর মাঝে এই গ্রাম। এটা উত্তর ২৪ পরগনার সুন্দরবন এর কাছে। আমরা যারা এতদিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন দেখে এসেছি তাদের কাছে এটা নতুন এক পাওনা। এটা একদম ই অচেনা অজানা সুন্দরবন। দক্ষিণ এর ভিড় যাদের ভালো ললাগেনা তাদের জন্যই উত্তর এর সুন্দরবন।
পর্যটন ব্যাবসার কোনো রমরমা এদিকে হয়ে ওঠেনি তাই জায়গাটা এখনো বেশ সুন্দর যারা গ্রাম বাংলা ভালোবাসেন বা ছোটো বেলার গ্রাম এর বাড়িতে ছুটি কাটানো তা কে ভীষণ ভাবে মিস করেন তাদের জন্য এই গ্রাম টি ভীষণ এ যথোপযুক্ত। চাষবাস, মধু সংগ্রহ র বাইরের দেখে জীবিকা অর্জন করা এদের মূল কাজ।
সামশেরনগর নিয়ে অনেক গল্প আছে। বেশি না পাঁচ ছয় বছর আগে পর্যন্ত ও ওখানে বাঘ, কুমির, গ্রাম এর মানুষ এক সাথে থাকতো। বাঘ প্রায় এ গ্রাম এ ঢুকে গরু ছাগল বাছুর এইসব নিয়ে যেত। মানুষ ও কম যায়নি। পেট এর দায়ে অনেক গ্রামবাসী এ ঘন জঙ্গল এ কাঁকড়া মাছ মধু সংগ্রহ করতে যেত। বিপদ প্রায় এ তাদের ঘাড়ে চেপে বসত। আস্ত একটা বিধবা গ্রাম ও রয়েছে সেখানে। সে এক বিশাল গল্প।
কিন্তু এখন আর সেই সব ভয় বলতে কিছুই নেই। পুরো জঙ্গল তাই নাইলনের দড়ি দিয়ে ঘিরে ফেলেছে যাতে বাঘ র মানুষ সব আলাদা হয়ে যায়। তাই বিগত বেশ কিছু বছর ধরে ওখানে আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। মানুষওবেড়েছে আর পূর্ব সুন্দরবনে বাঘও বেড়েছে।
কোথায় থাকবেনঃ
ওখানে সব চেয়ে সুন্দর আর একমাত্র থাককের জায়গা হলো সুন্দরবন বাম্বু কটেজ। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘গ্রাম এর বাড়ী রিসোর্ট’। ৬ টা সুবিশাল বাম্বু কটেজ আছে র সেটাকে ঘিরে কছে ৬টা সুবিশাল পুকুর যার সব কটি যে মাছ ভর্তি। ১০ বিঘা জমির উপর এই থাকার ব্যবস্থা। এ ছাড়াও রয়েছে প্রচুর সবজি ফুল ফল এর গাছ। আগামী দিনে ওনাদের আরো অনেক পরিকল্পনা আছে।
এমন নাম দেওয়ার কারণঃ
পুরো প্রজেক্টটার উদ্দেশ্য হলো আপনার ছোটবেলা কে ফিরিয়ে দেওয়া বা আপনার পরের প্রজন্মকে গ্রামের বাড়ি চেনানো। আমরা যেমন ছোটবেলাতে দেশের বাড়ি গ্রাম এর বাড়ি যেতাম। পুকুর ছিল আম জাম কাঁঠাল লিচু পেয়ারা গাছ ছিল। হরেক রকম ফুল এর গাছ ছিল। সে এক অন্য রকম এর অনুভূতি ছিল। এখন আমরা যারা এইটা পেয়েছিলাম তারা আক্ষেপ করি আর এখনকার প্রজন্ম তো একই সব দেখেইনি। তাই এই ব্যবস্থা। যেখানে যাওয়া মানে খালি অদেখা সুন্দরবন কে নতুন করে পাওয়া টাই নয় নিজের ছোটবেলাকে একটু ফিরে পাওয়া। পুকুরে স্নান করা। মাছ ধরা। মাছ ভাজা খাওয়া। গাছ থেকে ফলমুল পেরে খাওয়া , মনে বলা যায় প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে যাওয়া। চারিদিক এ চাষবাস। সবুজ র সবুজ। সে এক কল্পনার জগৎ। পুরো প্রজেক্ট তা ঘিরে রেখেছে পুকুর র সোনাঝুড়ি গাছ। এ ছাড়াও সুন্দরবন এর অনেক গাছ আছে লোক কে চেনানোর জন্য । প্রায় সব রকম সবজি র ফল এর গাছ আছে। যেখানে গিয়ে দুটো দিন শান্তি যে নির্জন এ নিরিবিলি যে কাটাতে পারবেন এমন এক জায়গা হলো গোবিন্দকাটি। শুনেছি গ্রাম এ দু তিনটে ভালো দুর্গাপূজাও হয়। গ্রামের লোকেরা সেখানে খাওয়া দাওয়াও করে।
বারো মাস যাওয়ার মতন জায়গা এটা। গেলে মনে হবে নিজের দেশের বা গ্রামের বকরিতে ফিরে এসেছেন। দুটো দিন একটু জিরিয়ে নি।
ওখানকার ব্যাবস্থাপনাঃ
ছটি সুসজ্জিত বাঁশ এর কটেজ আছে। একটি ঘর ছাড়া সব কটি ঘর এ দুটো করে সু বিশাল খাট আছে। পরকে ২৩জন থাকার ব্যবস্থা আছে। আলাদা করে বসে আড্ডা দেয়ার জায়গা আছে। খাওয়ার জায়গা আছে। রান্না ঘর আছে। খাওয়া দাওয়া একটু এলাহি ব্যাপার স্যাপার আরকি। পেট চুক্তি খাওয়া বলতে যা বোঝায় আর কি। মাছ ধরার জায়গা আছে খবর ছিপ ও আছে। সব ই প্যাকেজের মধ্যে। বলে রাখা ভালো খালি আলাদা করে ধরা মাছ ভেজে খেতে চাইলে খুব অল্প খরচা তে সেটার ও ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
গ্রামটি থেকে সুন্দরবন দুই কিলোমিটার। আগের থেকে বলে রাখলে ওনারা সব ব্যবস্থা করে দেবেন। যাতায়াত আর জঙ্গলে ঘোরা। সব কিছুর। ১০-১২ ঘন্টা বোট এ ঘোড়ার ব্যাবস্থা। ওখানেই প্রাতরাশ- মধ্যাহ্ন ভোজন চা বিস্কুট র টুকটাক ভাজাভুজি সবই চলতে থাকবে।
আপনারা এতদিন সবাই হলফ করে বলতে পারি যে সবাই মোটামুটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন কর খুব ভালো করেই চেনেন। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন সত্যি আরো ভকল একটিকে সুন্দরবন যদি পাওয়া যেত। আপনাদের জন্য এমন এ এক অচেনা অজানা না দেখা সুন্দরবনের খোঁজ দেব। সেটা হলো উত্তর ২৪ পরগনার সুন্দরবন। দক্ষিণ এ যেমন আপনি ক্যানিং হয়ে যান এটাই তেমন আপনাকে বারাসাত হাসনাবাদ হয়ে যেতে হবে। শিয়ালদা থেকে কম বেশি ৪.৫ ঘন্টা সময় লাগবে। বাম দিক দিয়ে বয়ে গেছে সুবিশাল কালিন্দি নদীর জল। সুন্দরবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ৪টে ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে এই উত্তরের সুন্দরবন এ। ঝিঙ্গাখালি, বুড়ির ডাবরী, কাটোয়াঝুড়িজ হারিখালী। ভারত এর সুন্দরবন এর 80% জীবজন্তু একই উত্তরে রয়েছে। ভিড় একদম এ নেই কারণ কোনো পর্যটন তেমন গড়ে ওঠেনি কেবল মাত্র একটা অসাধারণ ইকো ভিলেজ ছাড়া। আপনাদের সবাইকে বলবো এই পূজাতে বা তারপর থেকে উত্তরের সুন্দরবন কে খোঁজ দেখা র অনুভব করা শুরু করুন। সারা জীবন এর স্মৃতি হয়ে থাকবে। কথা দিতে পারি। না ভালোবেসে ফিরতে পারবেন না।
Be the first to comment