মাত্র ৩১ বছর বয়সেই ৬০০০ ঘণ্টার বেশি উড়ানের অভিজ্ঞতা ছিল পাইলট ভব্য সুনেজার। নামী দামি এয়ারলাইন্স সংস্থা থেকে ডাক পড়তে শুরু করেছিল অনেকদিন ধরেই। তবে ভব্য ছিলেন একরোখা। বিদেশে নয় দেশেই করবেন চাকরি। পরিবার এবং প্রতিবেশীদের বলেও গিয়েছিলেন ২০১৮-টাই ইন্দোনেশিয়ায় শেষ বছর। এ বার দেশে ফিরবেন। কথার খেলাপ অবশ্য করেননি সুনেজা। পরিবারকে কথা দিয়েছিলেন দিওয়ালির আগেই বাড়ি ফিরবেন। তেমনটাই আসবেন। তবে কফিনবন্দি হয়ে।
সোমবার সকালে, ৬টা ২০ মিনিটে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে টেক অফ করেছিল লায়ন এয়ারের বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ বিমান। কিন্তু ওড়ার খানিক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় সমস্যা। ১৮৯ যাত্রী সমেত বিমানটির সঙ্গে উড়ানের তেরো মিনিট পর (৬টা ৩৩ মিনিট) থেকেই আর যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। আচমকাই এ ভাবে একটি যাত্রিবাহী বিমান উধাও হয়ে যাওয়ায় আতঙ্ক ছড়ায় জাকার্তায়। এয়ারন্যাভ ইন্দোনেশিয়ার মুখপাত্র ইয়োহ্যানেস হ্যারি ডগলাস জানান, কোনও ভাবেই যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না ইন্দোনেশিয়ান লায়ন এয়ারের ওই যাত্রিবাহী বিমানটির সঙ্গে।
বিমানের খোঁজে শুরু হয় সার্চ অপারেশন। আচমকাই খবর আসে সব শেষ। ইন্দোনেশিয়ার সার্চ এবং রেসকিউ এজেন্সির মুখপাত্র ইউসুফ লতিফ জানান, সমুদ্রের উপর ভেঙে পড়েছে জাকার্তা থেকে সুমাত্রার দিকে রওনা দেওয়া ওই বিমান। সলিল সমাধি হয়েছে বিমানে থাকা সব আরোহীর।
পরিবার থেকে প্রতিবেশী, সুনেজার আকস্মিক মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন সবাই। সবার মুখে এখন একটাই কথা, ‘এমন হাসিখুশি ছেলেটাকে আর দেখতে পাবো না, এটা ভাবতেই পারছি না।“ মাত্র দেড় বছর আগে গরিমা শেঠির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ভব্য সুনেজার। স্ত্রীকে নিয়েই ইন্দোনেশিয়ায় থাকতেন তিনি। বিয়ের দ্বিতীয় বছরের দোরগোড়ায় পৌঁছে পরিবারের সঙ্গেই দিওয়ালি সেলিব্রেট করবেন বলে ঠিক করেছিলেন ভব্য এবং গরিমা।
কিন্তু অদৃষ্টের পরিহাস। এই দিওয়ালিতে বাড়ি এসে মায়ের হাতে আর মিষ্টির প্যাকেট দেওয়া হবে না সুনেজার। বোন আর আবাসনের বাকিদের সঙ্গে হুল্লোড় করে বাজি ফাটানো হবে না, প্রদীপ জ্বালানো হবে না, নাচ-গান করে জমিয়ে আড্ডাটাও আর দেবেন না ভব্য। শুধু দিওয়ালির আগে দিল্লির আবাসনে আসবে একটা কফিন, অনেক চোখের জল আর একরাশ স্মৃতি।
Be the first to comment