শেষ হয় গেল ২০১৮। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এই বছরে কী কী হলো, কী কী হলো না তার তালিকা নিয়ে হিসেবনিকেশ চলছে। তার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের সেই পাঁচটি রায়ের কথা বলতেই হবে, যাকে ঐতিহাসিক বললে অত্যুক্তি হবে না। সবকটি রায়ের ক্ষেত্রেই সুপ্রিম কোর্ট সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করেছে। প্রচলিত রীতি বা বিশ্বাসকে তুলে ধরেনি। আর বদল ঘটিয়েছে সাধারণ মানুষের ভাবনায়।
শবরীমালা মন্দিরে নারীর প্রবেশাধিকার
কেরলের এই মন্দিরে বহু শতাব্দীর প্রথা হলো ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মেয়ে ও মহিলাদের ঢুকতে দেওয়া হবে না। কারণ এই বয়সের মধ্যে নারী ঋতুমতী থাকতে পারে। ওই অবস্থায় মন্দিরে প্রবেশ করলে ঈশ্বর আয়াপ্পা ক্রুদ্ধ হবেন। এই কুসংস্কারজনিত প্রথা ভেঙে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ২৮ সেপ্টেম্বরের ওই রায়ে বলা হয়, ভক্তদের ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য করা যাবে না। প্রধান বিচাপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি এ এম খানউইলকর, বিচারপতি রোহিন্টন নরিম্যান ও বিচারপতি ধনঞ্জয় চন্দ্রচূড় এই রায় দিলেও, একমাত্র মহিলা বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা বিপক্ষে মত দেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, ধর্মীয় বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।
আধার বাধ্যতামূলক নয়
সরকারি পরিষেবা পেতে আধার কার্ডের তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক করা যাবে না বলে রায় দেয় সর্বোচ্চ আদালত। বলা হয় কেউ চাইলে স্বেচ্ছায় তাঁর আধার তথ্য দিতে পারেন। কিন্তু তাঁকে জোর করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে বলে, আধারের সঙ্গে প্যান কার্ডের সংযুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক হবে। কিন্তু ব্যাঙ্ক বা টেলিকম সংস্থাগুলি আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করতে পারবে না।
সমকামী প্রেমে শারীরিক সম্পর্ক অপরাধ নয়
সুপ্রিম কোর্ট এই যুগান্তকারী রায় অনুযায়ী, দুজন পুরুষ বা দুজন নারীর মধ্যে সম্পর্ক হলে তাঁরা একসঙ্গে থাকতে পারবেন ও তাঁদের যৌন সম্পর্ককে অপরাধ বলে ধরা হবে না।
বিবাহবহির্ভুত সম্পর্ক অপরাধ নয় বিবাহের বাইরে কোনও নারী ও পুরুষের মধ্যে সম্পর্ককে এতদিন অপরাধ বলে গণ্য করা হতো। শীর্ষ আদালতের ২৭ সেপ্টেম্বরের রায়ে বিচারপতিরা তাঁদের রায়ে বলেন, স্বামী স্ত্রীয়ের প্রভু নন। একটা সময় ছিল যখন নারীদের বা স্ত্রীদের অস্তিত্বই আইনের চোখে কার্যত অজানা ছিল, স্ত্রীরা তাঁদের স্বামীর ছায়াতেই থাকতেন। সেই দিন আর নেই।
বিচারপ্রক্রিয়ার লাইভ স্ট্রিমিং
সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া চলার সময় তা লাইভ টেলিকাস্ট করা যাওয়ার অনুমতি দেয় সর্বোচ্চ আদালত। গত ২৬ সেপ্টেম্বরের ওই রায়ে বলা হয়, বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা জনসাধারণের অধিকার। তবে অভিযোগকারী ও অভিযুক্তের সম্মান বজায় রেখেই তা করতে হবে।
Be the first to comment