মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে আস্থা ভোট রবিবার নয় বরং এই বিষয়ে সোমবার সিদ্ধান্ত নেবে সুপ্রিম কোর্ট। দেবেন্দ্র ফড়ণবিশকে স্বস্তি দিয়ে রবিবারের বদলে আস্থা ভোটের সম্ভাবনা আগামীকাল অর্থাৎ সোমবার। রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারি সরকার গঠনের যে সম্মতিপত্র দিয়েছিলেন কেন্দ্রকে আগামীকাল তাও পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।
রবিবার শুনানি শুরু হতেই বিজেপির তরফ থেকে পিটিশনের জবাব দেওয়ার জন্য দুই থেকে তিন দিনের সময় চাওয়া হয়। এই আবেদনে সাড়া দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানায় মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামীকাল সকাল ১১:৩০ থেকে। গতকাল অর্থাৎ শনিবার অমিত শাহের মাস্টারস্ট্রোকে বিপাকে পড়ে কংগ্রেস-এনসিপি-শিবসেনা তিন দলই। শনিবার সকালে কাউকে না জানিয়েই অজিত পাওয়ারকে পাশে নিয়ে শপথ নিয়ে নেন দেবেন্দ্র ফড়ণবীশ। বিজেপির সরকার গঠন অবৈধ বলে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে তাঁরা। সরকার গঠনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দ্রুত সংখ্যা গরিষ্ঠতার প্রমাণ দিক দেবেন্দ্র ফড়ণবীস এবং অজিত পাওয়ার। সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তাঁদের সংখ্যা গরিষ্ঠতা নেই বলে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দেবেন্দ্র ফড়ণবীশের শপথগ্রহণ বাতিলের জন্য সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন কংগ্রেস এবং এনসিপি।
এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি বিচারপতি এনভি রামান্না, বিচারপতি অশোক ভূষণ এবং বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চ। মামলাকারীদের পক্ষে আদালতে সওয়াল করার কথা দুই বর্ষীয়ান আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি ও কপিল সিব্বলের। অন্য দিকে থাকবেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। এই শপথগ্রহণ অবৈধ বলে বাতিল ঘোষণা করার পাশাপাশি বিজেপিকে দ্রুত সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দেওয়ার জন্য দিন নির্ধারণের আর্জিও জানানো হয়েছে এই মামলায়।
শনিবার ভোর রাতে বিজেপির ‘তুরুপের তাসে’ মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া আচমকাই নাটকীয় মোড় নেয়। উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস যখন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে ফেলেছে, তখনই বিরোধীদের ‘সুখনিদ্রা’ ছিনিয়ে নেয় বিজেপি হাইকম্যান্ড। এনসিপির অজিত পাওয়ারকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার মধ্যরাতেই রাজভবনে হাজির হন মহারাষ্ট্রের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়ণবীশ। শনিবার সাত সকালে কার্যত চুপিসাড়ে রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে ফেলেন দেবেন্দ্র ফডণবীশ। উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন অজিত পওয়ার। রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শনিবারই সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আর্জি জানিয়েছিল বিরোধী শিবির। শনিবারই মামলা নথিভুক্ত করে আজ বেলা সাড়ে ১১টায় শুনানির সময় নির্ধারিত করে শীর্ষ আদালত।
গত ২১ অক্টোবর ফল ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই নজিরবিহীন রাজনৈতিক নাটকের সাক্ষী ছিল মারাঠাভূমি। গত বৃহস্পতিবার মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস-এনসিপি-শিবসেনার ত্রয়ী সরকার গঠনের কথা জানান এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার। আগামী পাঁচ বছরের জন্য উদ্ধব ঠাকরের মুখ্যমন্ত্রিত্বের আশ্বাসও দেন তিনি। সরকার গঠন প্রায় নিশ্চিত ছিল সেনা-এনসিপি কংগ্রেস জোটের। তিন দলের মিলিত বিধায়ক সংখ্যা ম্যাজিক ফিগারের চেয়ে বেশি। কিন্তু, এরমাঝেই ঘটে অঘটন। আচমকাই শিবির বদলান অজিত পাওয়ার। কিন্তু শিবির বদলানোর পরেও সরকার গঠনের প্রয়োজনীয় সংখ্যা তাঁদের কাছেই রয়েছে বলে দাবি করেছে কংগ্রেস-শিবসেনা-এনসিপির জোট। তাই শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বে তিন দলের জোটকেই সরকার গঠনের জন্য ডাকা হোক, এই দাবিও জানানো হয়েছে মামলায়। শুনানি শেষে কী রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট, গোটা দেশের নজর এখন এই সেই দিকেই।
Be the first to comment