দলিত নিগ্রহ প্রতিরোধ আইনের লঘুকরণ চায় না সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু ওই আইনের দ্বারা কোনও নিরপরাধ যেন শাস্তি না পায়, তা সুনিশ্চিত করতে হবে। এসসি-এসটি আইন বিতর্কে সাফ জানিয়ে দিল শীর্ষ আদালত। দু’সপ্তাহ আগে ওই আইন রূপায়নের ক্ষেত্রে কয়েকটি নয়া শর্ত চাপিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার উপরে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ চেয়ে শীর্ষ আদালতে রিভিউ পিটিশন দাখিল করে কেন্দ্র। স্থগিতাদেশের আর্জি খারিজ করে কেন্দ্রের বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চ।
উল্লেখ্য, আইন করেও সারা দেশে দলিতদের ওপর নিগ্রহ বন্ধ করা যায়নি। কিন্তু উলটো ছবিও ছিল। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, দলিত নিগ্রহের মিথ্যে মামলাও সামনে এসেছে। দলিত নিগ্রহ প্রতিরোধ আইনের অপব্যবহারে জেলে বন্দির সংখ্যাও কম নয়। এই সূত্রেই এক মামলায় গত বিশে মার্চ সুপ্রিমকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, এফআইআর হলেই একতরফা গ্রেফতারি নয় ৷ প্রাথমিক তদন্তের পরই ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত৷ ৭ দিনের মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত শেষ করতে হবে এবং সরকারি কর্মীদের গ্রেফতারের আগে সরকারের অনুমতি নিতে হবে৷
প্রসঙ্গত, সুপ্রিমকোর্টে এমন নির্দেশের প্রতিবাদে সরব হয় দলিত সংগঠনগুলি। তাদের অভিযোগ, এই নির্দেশে আইন লঘু হয়ে যাবে। দলিতদের ওপর অত্যাচার বাড়বে। সোমবার দলিত সংগঠনগুলির ডাকা ভারত বনধ ঘিরে রাজ্যে রাজ্যে হিংসার ঘটনা ঘটে। চাপে পড়ে সরকার জানায়, শীর্ষ আদালতের নির্দেশের সঙ্গে সহমত নয় তারা। ওই নির্দেশের ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ চেয়ে এবং রায় পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার রিভিউ পিটিশন দাখিল করে কেন্দ্র। দ্রুত আবেদনের শুনানির আর্জি জানানো হয়। সেই মামলার শুনানিতেই এদিন শীর্ষ আদালত ২০ মার্চের নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশের আর্জি খারিজ করে দিয়েছে। দলিত বিক্ষোভকে কার্যত গুরুত্ব না দিয়েই সুপ্রিমকোর্ট মন্তব্য করেছে, আদালত আইনের কোনও ধারাকে লঘু করতে চাই না ৷ কিন্তু কোনও নিরপরাধ যেন মিথ্যে মামলায় গ্রেফতার না হয় ৷ অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তের আগেই কেন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হচ্ছে ৷ পাশাপাশি দুই সদস্যের বেঞ্চ জানিয়েছে, আদালতের রায় না বুঝেই প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে ৷ এমনকি আইনের সঠিক প্রয়োগও হচ্ছে না ৷
অভিযোগ উঠেছে বহু ক্ষেত্রেই এফআইআর না হওয়ায় আক্রান্তরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। এনিয়েও এদিন শীর্ষ আদালত পরিষ্কার জানিয়েছে, এফআইআর দায়ের না হলেও আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণ পেতে কোনও বাধা নেই। দলিত আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আগেই বিঁধেছে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশের বিরোধিতা করে সরকারের অনেক আগেই রিভিউ পিটিশন দাখিল করা উচিত ছিল। সেক্ষেত্রে ভারত বনধ ঘিরে প্রাণহানি ও সরকারি সম্পত্তিহানি ঠেকানো যেত। এদিন শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, ২০ মার্চের নির্দেশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির কী অবস্থান তা দুদিনের মধ্যে জানাতে হবে। দশদিন ফের এই মামলার শুনানি হবে। তবে সুপ্রিম কোর্ট আপাতত পুরনো রায় বহাল রাখায় অস্বস্তি বাড়ল কেন্দ্রের।
Be the first to comment