সিপিআই(এম)-এর রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব ছাড়ার ইঙ্গিত দিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র

Spread the love

লোকসভা নির্বাচনে খারাপ ফলের দায় মাথায় নিয়ে দায়িত্ব ছাড়ার ইঙ্গিত দিলেন সিপিআই(এম)-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। নতুন নেতৃত্বে সম্পাদকমণ্ডলী তৈরি হোক, চেয়ার আটকে রাখবো না; সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সভায় মঙ্গলবার একথাই বললেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। আর এমন মন্তব্যের পরই হইচই শুরু হয়েছে দলের অন্দরমহলে। এদিন ন্তুন্দের সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে জোর সওয়াল করেন সূর্যবাবু।

উল্লেখ্য, সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়। সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের প্রাথমিক পর্যালোচনা এই সভার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল। এদিনের সভায় সভাপতিত্ব করেন বিমান বসু। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র পর্যালোচনার খসড়া পেশ করেন। তিনি বলেন, এই পর্যালোচনা চূড়ান্ত নয়। পার্টির সর্বস্তরে পর্যালোচনা করতে হবে। সমর্থক ও সাধারন মানুষের মতামতও নিতে হবে।

সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভার প্রেস বিবৃতি-

পড়ুন!

সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভা মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের প্রাথমিক পর্যালোচনা এই সভার মূল আলোচ্য ছিল। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিমান বসু। পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি পলিট ব্যুরোর সভায় প্রাথমিক পর্যালোচনার সার সংক্ষেপ পেশ করেন। রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর তরফে রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র পর্যালোচনার খসড়া পেশ করেন। তিনি বলেন, এই পর্যালোচনা চূড়ান্ত নয়। পার্টির সর্বস্তরে বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা করতে হবে। সমর্থক ও সাধারণ মানুষের মতামতও নিতে হবে। রাজ্য কমিটির প্রাথমিক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, এই নির্বাচনে পার্টি এবং বামফ্রন্টের ফলাফল স্বাধীন ভারতের নির্বাচনী ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়কর। পুলওয়ামা ও বালাকোটের ঘটনার পরে এবং দেশজুড়ে মোদী-বিরোধী দলগুলির মধ্যে সংহতির অভাব পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে প্রভূত প্রভাব ফেলে। এরাজ্যেও সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক মেরুকরণকে স্বল্প সময়ের মধ্যে তীব্রতর করে তোলে। স্বৈরাচার, দুর্নীতি, নৈরাজ্য, জীবনজীবিকা, বেকারত্ব, দুই সরকারের ব্যর্থতার হিসেবনিকেশ ইত্যাদি সবকিছুকে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলা হয় পরিকল্পিত ছকে। মিডিয়া জগৎকে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস এমনভাবে প্রচারে নামায় যে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী লড়াই শুধু এই দু-দলের মধ্যেই সীমিত, এবং বামফ্রন্ট ও অন্যান্য দলের কোনও অস্তিত্বই নেই। আমাদের গুরুতর বিপর্যয়ের মূলে এটিও একটি অন্যতম প্রধান কারণ। নিবিড় প্রচার এবং ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক গণসংযোগের বিরাট ঘাটতির কারণে এই অস্বাভাবিক ও অভূতপূর্ব পরিবেশে বামপন্থীদের অবস্থান মানুষের কাছে গ্রহণীয় করে তোলা যায়নি। ২০১৮ পঞ্চা‌য়েত নির্বাচনে তৃণমূলের ভোট লুট, পুলিশ-প্রশাসন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণরূপে শাসকদলের স্বার্থে ব্যবহার করার দগদগে ক্ষত মানুষের মধ্যে যথেষ্ট বিরাজ করেছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের এই ক্ষোভকে বিজেপি ব্যবহার করেছে। দু’বছর ধরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাহুবল প্রদর্শন, বিজেপি’র কেন্দ্র ও রাজ্য নেতাদের প্রকাশ্য আগ্রাসী হুমকি, হামলা, রামনবমী ও অন্যান্য কর্মসূচিতে রাজ্যব্যাপী ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে তারাই একমাত্র তৃণমূলকে দমাতে পারে, অন্য কেউই নয়, এরকম ধারণা জনমানসে প্রতিষ্ঠিত করতে বিজেপি সক্ষম হয়েছে। সর্বভারতীয় তীব্র প্রচারকে যুক্ত করে এবং প্রচুর অর্থ ব্যয় করে  তারা তাদের অনুকূলে মানুষের ভোট নিজেদের পক্ষে টানতে পেরেছে। তৃণমূল শাসনে আট বছরে এবং সর্বশেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন বামপন্থীরা। কিন্তু সব ছাপিয়ে নির্বাচনে আরএসএস-বিজেপি বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে এই রাজনৈতিক মেরুকরণে সফল হয়েছে।পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী যে লেগে-থাকা নিবিড় জনসংযোগ অপরিহার্য, যে সাংগঠনিক কাজ ও তার অবিচ্ছিন্ন তদারকি প্রয়োজন, তাতে ঘাটতির বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফলাফলে দেখা গেছে। রাজ্য কমিটির সভা থেকে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবে না। আগামী দিনে মানুষের জীবনজীবিকার ওপরে, গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপরে আক্রমণ বৃদ্ধি পাবে। এখন থেকেই সাধারণ মানুষের স্বার্থরক্ষায় আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জেলায় জেলায় এলাকাগত দাবিদাওয়া কর্মসূচির পরিকল্পনা করতে হবে। গণসংযোগ বহুগুণ বৃদ্ধি করতে হবে। পার্টি ও গণফ্রন্টের কাজের ধারার বদল ঘটাতে হবে।

৪জুন, ২০১৯, কলকাতা

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*