সম্প্রতি পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনী বক্তৃতায় বারবার উঠে এসেছে রাফায়েল প্রসঙ্গ। সরাসরি কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। স্লোগান উঠেছে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়।’ আর সে সবের মাঝেই এ দিন দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিল রাফায়েল চুক্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কোনও গলদ দেখা যায়নি। তাই এ ব্যাপারে কোনও রকমের তদন্তের প্রশ্নই ওঠে না।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সাম্প্রতিক নির্বাচনে বিজেপি’র ভরাডুবির পেছনে এই রাফায়েল কাণ্ড কিছুটা হলেও দায়ী। নির্বাচনী প্রচারে রাহুল গান্ধী বারবার প্রশ্ন তুলেছেন, ৫৯ হাজার কোটি টাকা দিয়ে ফরাসি কোম্পানি দাসোর কাছ থেকে ৩৬টি যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করে মোদী সরকার। রাহুল অভিযোগ করেন, ইউপিএ সরকারের সময়ে যে দামে যুদ্ধবিমান কেনার কথা হয়েছিল, তার থেকে অনেক বেশি দামে কেনা হচ্ছে। নাম জড়ায় আম্বানিদেরও। হিন্দুস্তান অ্যারোনেটিক্যালস লিমিটেড (হ্যাল)-এর মতো সরকারি সংস্থাকে বরাত না দিয়ে ফ্রান্সের কোম্পানি সামরিক ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ রিলায়েন্সকে কেন বরাত দিল তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে কংগ্রেস। রাহুল গান্ধী সরাসরি এই দুর্নীতিতে প্রধানমন্ত্রীর জড়িত থাকার অভিযোগ তোলেন। তাঁর দাবি, রাফায়েল চুক্তি করে মোদী তাঁর বন্ধু আম্বানিকে উপহার দিয়েছেন ।
এই প্রসঙ্গে সরাসরি কেন্দ্রের তরফে কোনও উত্তর দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের নিরাপত্তার যুক্তিতে সেই উত্তর না দেওয়ায় আদালত স্পষ্ট বলে, কেন্দ্রের উচিত হলফনামা দিয়ে বিষয়টি জানানো। তারপরেই সব প্রশ্নের উত্তরে রিপোর্ট সিল বন্ধ খামে করে সুপ্রিম কোর্টের কাছে জমা দেয় কেন্দ্র।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশের মতে, পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে ভরাডুবির পর এ দিন সুপ্রিম কোর্টের রায় যদি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যেত, তাহলে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ত মোদী সরকার। কংগ্রেসের তরফে আরও সুর চড়ানো হতো। উনিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়তে হতো বিজেপিকে। কিন্তু এ দিন সুপ্রিম কোর্টের এই রায় মুখ বাঁচিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রের।
রায় ঘোষণার পরেই কংগ্রেসের তরফে বিরোধিতা করা হয়েছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ” সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত যথাযথ নয়। বেশ কিছু বিষয় এড়িয়ে গিয়েছে আদালত। বিজেপি সরকার ইচ্ছে করেই সব তথ্য জমা দেননি। আমরা এরপরেও যৌথ পার্লামেন্টারি কমিটি গঠন করে তদন্তের দাবি জানিয়ে যাব। ”
অন্যদিকে এই রায়কে স্বাগত জানানো হয়েছে বিজেপি’র তরফে। দেশের শীর্ষ আদালতের বক্তব্যকে সামনে রেখে সরাসরি রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেসের দিকে তোপ দেগেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। মোদীকে চোর বলেছিলেন রাহুল। তার উত্তরে এ দিন অমিত শাহ বলেন, ” তিনিই অন্যকে চোর বলেন, যাঁর চৌকিদারের ভয় আছে।”
সাংবাদিক সম্মেলন করে অমিত শাহ জানান, ” এতদিন ধরে দেশকে, দেশের মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছিলেন রাহুল গান্ধী। রাফায়েল মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, কেন্দ্রের তরফে কোনও রকমের দুর্নীতি করা হয়নি। কাউকে অতিরিক্ত অর্থনৈতিক সুবিধাও দেওয়া হয়নি। যা হয়েছে পুরোটাই নিয়ম মেনে। দেশের স্বার্থের কথা, সুরক্ষার কথা ভেবে। তাই এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে আদতে দেশের সুরক্ষাকেই বিপদের মুখে ফেলে দিতে চেয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। তাই রাহুল গান্ধীর উচিত দেশের মানুষ ও সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমা চাওয়া।”
রাহুল গান্ধীর থেকে জবাবও চেয়েছেন বিজেপি সভাপতি। তিনি বলেন, “এতদিন সব জায়গায় বিজেপির বিরুদ্ধে আঙুল তুলে এসেছেন রাহুল গান্ধী। মিথ্যে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু সত্যি কখনও চাপা থাকে না। জনতাকে বোকা বানানো যায় না। সত্যি একদিন সবার সামনে চলে আসে। সেটাই এ দিন হয়েছে।”
এমনকী রাফায়েল নিয়ে যে বিলম্ব হয়েছে, তাতেও সরাসরি কংগ্রেসকে দায়ী করেছেন অমিত শাহ। প্রসঙ্গত, এই যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়ে পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের সময়। ২০১৬ সালে নরেন্দ্র মোদীর সরকার বিষয়টিকে চূড়ান্ত রূপ দেয়। সেই বিষয় তুলে এনে অমিত শাহ প্রশ্ন করেন, ” কেন কংগ্রেস সরকারের সময় এই চুক্তি করা হয়নি? কেন দেশের নিরাপত্তাকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল? কী উদ্দেশ্য ছিল এর পেছনে? জবাব দিন রাহুল গান্ধী।”
Be the first to comment