সতীশ সামন্তর জন্মদিন উপলক্ষে হলদিয়ার হেলিপ্যাড গ্রাউন্ডে শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর নিজেরও আজ জন্মদিন। কিন্তু সভায় তিনি বা তাঁর অনুগামীরা কেউই সে কথার উল্লেখ করলেন না। তবে তাঁর বিজেপিতে যাওয়া যে এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা একথা স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিলেন তিনি। বক্তব্যে তুলে আনলেন বহিরাগত ইস্যু। বললেন, সতীশ সামন্ত কোনওদিন জওহরলাল নেহরুকে বহিরাগত বলেননি। আবার, জওহরলাল নেহরুও সতীশ সামন্তকে অহিন্দিভাষী ভাবতেন না। কটাক্ষ স্পষ্ট। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বললেন, নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান। উল্লেখ করলেন স্বামী বিবেকানন্দর আরাধ্য দেবী ভারতমাতা। স্পষ্ট বললেন, আমরা আগে ভারতীয়, তারপর আমরা বাঙালি। কোনও পার্টির ব্যানার ছাড়া যে তাঁর সভাতেও লোক হয় সেটাও উল্লেখ করলেন তিনি। আবার বললেন চরৈবেতি। আমরা চলি সমুখ পানে কে আমাদের রুখবে, রইল যারা পিছুর টানে কাঁদবে তারা কাঁদবে। বক্তব্যের শেষেও একই সুর বজায় রেখে বললেন, আমি ব্যক্তি আক্রমণে বিশ্বাস করি না। কিন্তু জনগণ যখন চটঘেরা জায়গাটায় যাবে, নিজের অধিকার প্রয়োগ করতে, তখনই বুঝতে পারবেন। অনেকেরই অবস্থা অনিল বসু, লক্ষ্মণ শেঠ, বিনয় কোঙারের মত হবে। তিনি বললেন, শুভেন্দুর পরিবার বলতে পাঁচ-সাতজনের পরিবার নয়। ইঙ্গিত যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে সেকথা স্পষ্ট। বললেন, সারা বাংলা, বাঙালি পরিবারই আমার পরিবার, পান্তা ভাত খাওয়া পরিবারের প্রতিনিধি আমি। শুধু ভাষণ দিলে হবে না রেশনও দিতে হবে। ১৫ ডিসেম্বর শুভেন্দুর এই ভাষণে সতীশ সামন্তের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ছিল তেমনি তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যতও পরিষ্কার হয়ে গেল এদিনের বক্তব্যে। আগামী ১৯ ডিসেম্বরের ভিতর যে তিনি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন, তা প্রায় ফাইনাল। বারে বারে মনে করিয়ে দিয়েছেন, জনগণের সঙ্গে তাঁর আত্মিক সম্পর্কের কথা। বলেছেন, কেউ বা কারওর ইচ্ছাতে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না। তাঁর বিরুদ্ধে যাঁরা আক্রমণ করছেন, তাদেরকে মনে করিয়ে দেন যে, গভর্নমেন্ট অব দি পিপিল, বাই দি পিপিল, ফর দি পিপিল না হয়ে ফর দি পার্টি, বাই দি পার্টি হয়ে গেছে। এটা যেন না হয়। বলেন, শুভেন্দু অধিকারী গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লড়াই করেই আপনাদের পাশে থাকবে। তিনি অকৃতদার। সেটার আদর্শও যে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী নন, সেটাও পরোক্ষে বুঝিয়ে দেন তিনি। বলেন, আমি স্বাধীনতা সংগ্রামী সুশীল ধাড়া, সতীশ সামন্তদের কাছ থেকে এই আদর্শ নিয়েছি। তাঁর বক্তৃতার ছত্রে ছত্রে ছিল দেশপ্রেমের সঙ্গে রাজনীতির মিশেল। জাতীয় সংগীত গেয়ে ও জয়হিন্দ স্লোগানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হয়।
Be the first to comment