প্রথমবার কোনও ভারতীয় অ্যাথলিট হিসাবে হেপ্টাথেলনে সোনা জিতলেন উত্তরবাংলার স্বপ্না!

Spread the love

অন্য দিন সূর্য ডুবলেই আঁধার নামে। কিন্তু বুধবার সূর্য ডুবলেও আলো নেভেনি জলপাইগুড়ির পাতকাটা ঘোষপাড়ায়। বরং ঘরের মেয়েকে সোনা ছুঁতে দেখে অকাল উৎসবে ভেসে গেল গোটা এলাকা। বাসিন্দারা অধিকাংশই হতদরিদ্র। প্রতিদিনের বেঁচে থাকাটাই মস্ত লড়াই। ব্যতিক্রম নন স্বপ্না বর্মনও। তাই তাঁর এমন সাফল্যে যুদ্ধ জয়ের তৃপ্তি পাতকাটার ঘরে ঘরে।

বুধবার সন্ধে। ঘড়ির কাঁটা টপকে গেছে সাতটার ঘর। স্বপ্নাদের একরত্তি ভাঙা ঘরে ছোট্ট টেলিভিশন সেটের সামনে উদগ্রীব পরিবার। সামিল পড়শি কয়েকজনও। জাকার্তার মাটিতে হেপট্যাথলনের ব্যক্তিগত ইভেন্টে স্বপ্না দৌড় শুরু করতেই মা বাসনা ছুটে বেড়িয়ে গেলেন ঘর থেকে। লাগোয়া কালীমন্দিরে ঢুকে জড়িয়ে ধরলেন প্রতিমার পা। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত বেজে উঠতেই বুঝে গেলেন কথা রেখেছে মেয়ে। চোখে তখন বাঁধ ভেঙেছে।

আগে রিক্সা চালাতেন স্বপ্নার বাবা। বছর আটেক ধরে অসুস্থ হওয়ায় আর পারেন না। চা বাগানে পাতা তুলে কোনও রকমে সংসারের চাকাটা চালু রাখেন বাসনাদেবী। দুই ছেলেও এখন রাজমিস্ত্রীর সঙ্গে কাজ করে কিছু রোজগার করে। সেই নুন আনতে পান্তা ফোরানো সংসারে তাই বরাবরই কঠিন ছিল মেয়ের লড়াই। তবুও সব কিছুকে টপকে এশিয়াডে স্বপ্নার সোনা জয়। আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়ছে পরিবারের সবার চোখে। আর সেই ফাঁকেই যেন দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের অঙ্গীকার করে নিল গোটা পাড়া। যেমনটা তাঁদের শিখিয়ে দিয়েছে তাদেরই ঘরের মেয়ে সোনাজয়ী অ্যাথলিট স্বপ্না।

স্বপ্নাকে দেখেই প্রথমে প্রশ্ন জেগেছিল, তাঁর ডানগালে ওটা কী? ইভেন্ট শেষে উত্তর জানল গোটা জাকার্তা। আগের রাতে দাঁতের যন্ত্রণায় ছটফট করেছে ২১ বছরের মেয়েটা। সতীর্থরাই বুঝতে পারছিলেন না স্বপ্না পারবেন কি না। কিন্তু যে মেয়ে জীবন যুদ্ধে জিতে যাওয়ার স্পর্ধা রাখে তিনি ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে পারবেন না? পারলেন স্বপ্না। প্রথমবার কোনও ভারতীয় অ্যাথলিট হিসাবে হেপ্টাথেলনে সোনা জিতলেন উত্তরবাংলার স্বপ্না।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*