এশিয়া জয় করে ঘরে পা রাখলেন সোনার মেয়ে স্বপ্না বর্মণ

Spread the love
এশিয়া জয় করে ঘরে পা রাখলেন বাংলার সোনার মেয়ে স্বপ্না বর্মন। তাঁকে সাদরে অভ্যর্থনা জানাতে ভিড় উপচে পড়েছে কলকাতা বিমানবন্দরে। তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
এশিয়ান গেমসে হেপট্যাথলনে ভারতের ঝুলিতে এতদিন পদকের সংখ্যা ছিল শূন্য। কিন্তু এশিয়াডের সেই কঠিন ইভেন্টে সোনা জিতেছেন স্বপ্না। সেই সোনা জয়ের জন্য অবশ্য কম বাধা অতিক্রম করতে হয়নি জলপাইগুড়ির পাতকাটার ঘোষপাড়ার এই মেয়েকে। বাবা ছিলেন রিক্সা চালক। মা চা বাগানে কাজ করতেন। দুই ভাই দিন মজুরের কাজ করেন। সেই দিন আনা দিন খাওয়া পরিবার থেকে নিজের জেদ ও পরিশ্রমের ফলে নিজেকে এশিয়ার সেরা প্রমাণ করতে পেরেছেন স্বপ্না। আর তাই হয়তো সোনা জিতেও নিজের শিকড়টাকে ভোলেননি তিনি। স্বপ্নার মুখেই শোনা গেল সে কথা।
কলকাতা বিমানবন্দরে পা দিয়ে সেখান থেকে সোজা চলে গিয়েছিলেন সাই ( স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া ) এ। সেখানে তাঁকে সম্বর্ধনা দেন সাইয়ের কর্তারা। এখানেই নিজের প্রতিভায় ধার দিয়েছেন স্বপ্না। একটু একটু করে নিজেকে তৈরি করেছেন স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে। তাই সাই সেন্টারে সম্বর্ধনা নেওয়ার পর স্বপ্না সবার আগে ধন্যবাদ জানালেন নিজের কোচদের। সেই সঙ্গে যাঁরা সাইয়ের ক্যাম্পে স্বপ্নার সঙ্গে থেকেছেন, সেই বন্ধুদের ধন্যবাদ জানান স্বপ্না।
সামনে এ বার ২০২০ অলিম্পিকের প্রস্তুতি। সেই লক্ষ্যেই নিজেকে তৈরি করতে চান সোনার মেয়ে। কারণ জানেন এশিয়াডের থেকে অনেক অনেক কঠিন পরীক্ষার সামনে তাঁকে পড়তে হবে অলিম্পিকের মঞ্চে। সেই কারণে সবার আগে নিজের চোট সারিয়ে তুলতে চান স্বপ্না। সেইসঙ্গে নিজের রাগটাও একটু কমাতে চান তিনি। কারণ এই রাগের কারণে অনেক সময় ফোকাস নষ্ট হয়েছে তাঁর। কিন্তু অলিম্পিকের মঞ্চে ফোকাস নষ্ট করতে চান না স্বপ্না।
জাকার্তায় সোনা জয়ের পর অবশ্য রাতারাতি বদলে গিয়েছে স্বপ্নার গ্রাম। বিশেষ করে স্বপ্নার বাড়ি। সোনার মেয়ে ঘরে ফেরার আগেই গ্রামকে নতুন রূপে সাজিয়ে তুলতে তৎপর ছিল প্রশাসন। সেইমতো রাস্তা পাকা হয়েছে, স্বপ্নার বাড়িতে জলের কল বসেছে তড়িঘড়ি, বাড়ির সামনে পড়েছে মাটি। বাঁধা হয়েছে মঞ্চ। এমনকি নিরাপত্তার প্রশ্নেও এতটুকু ফাঁক রাখতে রাজি নয় প্রশাসন। তাই স্বপ্নার বাড়ির সামনে প্রশাসনের উদ্যোগে মোতায়েন করা হয়েছে সিভিক ভলেন্টিয়ারও।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা করা হয়েছে। স্বপ্নার ভাইকে দেওয়া হয়েছে চাকরি। চাইলে স্বপ্নাকেও চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। পিছিয়ে নেই কেন্দ্রীয় সরকারও। ৩০ লক্ষ টাকা ও রেলে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।
কিন্তু আপাতত সে দিকে মন নেই সোনার মেয়ের। বাড়ির সামনে যে অপেক্ষা করছেন তাঁর মা বাসনা দেবী। মেয়ের সব লড়াইয়ের সাক্ষী, সব লড়াইয়ের সাথী, সব লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা। স্বপ্না যাতে সোনা জেতেন তার জন্য উপোষ করেন মা, হত্যে দিয়ে পড়ে থাকেন বাড়ি লাগোয়া মা কালির মন্দিরে। তাই আপাতত নিজের প্রেরণার কাছে যাওয়ার যেন তর সইছে না স্বপ্নার। নিজের গলায় পরে থাকা সোনার মেডেলটা যে গিয়ে পরিয়ে দিতে হবে মায়ের গলায়। তবেই মিলবে শান্তি। মায়ের হাতের রান্না করা ডাল-ভাত খাবেন। ওতেই তো আসল আনন্দ।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*