প্রতিবছর শুক্লা চতুর্দশীতে তারাপীঠ মেতে ওঠে তারা মায়ের আবির্ভাব উৎসবে

Spread the love
সদ্য কৈলাসে ফিরেছেন ঘরের উমা। মন ভালো নেই বাঙালির। এই বিষাদ মুহূর্তেই প্রতিবছর তারাপীঠ মেতে ওঠে তারা মায়ের আবির্ভাব উৎসবে। বহু বছর ধরে শুক্লা চতুর্দশী অর্থাৎ লক্ষ্মী পুজোর আগের দিন মায়ের আবির্ভাব দিবস পালিত হয় তারাপীঠে। শুক্লা ত্রয়োদশী থেকেই ভিড় জমতে শুরু করে তারাপীঠ মন্দির প্রাঙ্গণে। বিশেষ পুজোর পাশাপাশি চলে মেলা।
পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী পাল রাজত্বের সময় জয়দত্ত সওদাগর স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন শ্বেত শিমূল বৃক্ষের তলায় পঞ্চমুণ্ডির আসনের নিচে মায়ের শিলা মুর্তি রয়েছে। স্বপ্নাদেশ পেয়ে শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে ওই বৃক্ষের তলায় পঞ্চমুণ্ডির আসনের নিচ থেকে মায়ের শিলা মুর্তি উদ্ধার করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সেই থেকেই শুক্লা চতুর্দশীর দিন মায়ের পুজোর সূচনা এবং এই দিনটিকে মায়ের আবির্ভাব দিবস হিসেবে পালন করা হয় তারাপীঠে।
তারা মা উত্তরমুখী হলেও এ দিন পশ্চিম মুখে বসিয়ে আরাধনা করা হয় তাঁর। এর পিছনেও রয়েছে এক কাহিনী। কথিত, বাংলার ১১০৮, ইংরাজির ১৭০১ সালে তৎকালীন তান্ত্রিক পুরোহিতরা আবির্ভাব তিথিতে মাকে বিরাম মন্দিরের পূর্ব দিকে বসিয়ে পুজো শুরু করেন। সে সময় মলুটির নানকার রাজা রাখরচন্দ্র মায়ের সামনে আরাধনায় বসেন। তা দেখে তন্ত্রসাধক ও পান্ডারা রাজাকে আসন থেকে তুলে দিয়ে পুজোপাঠ বন্ধ করে দেন।
রাজাও তখন মায়ের প্রতি অভিমান করে দ্বারকা নদের পশ্চিম পাড়ে চলে আসেন। এখানেই তিনি ঘট প্রতিষ্ঠা করে তারা মায়ের পুজো করে গ্রামে ফিরে যান। সেই রাতেই তারাপীঠে তৎকালীন প্রধান তান্ত্রিক আনন্দনাথকে তারা মা স্বপ্ন দেন রাখরচন্দ্র আমার ভক্ত, অভিমান করে চলে গেছে। এ বার থেকে আমার পুজো যেন পশ্চিম মুখে মলুটির কালিবাড়ির দিকেই করা হয়। তারপর থেকেই বিশেষ এই তিথিতে তারা মায়ের পুজো পশ্চিম মুখেই করা হয়ে থাকে। আবার অন্য মত, এ দিন তারা মায়ের বোন ঝাড়খণ্ডের মুলুটি মা দেখা করতে এসেছিলেন বলেই তারা মা পশ্চিমমুখে বসে অপেক্ষা করছিলেন তাঁর জন্য।
গল্প, কথা, উপকথা যাই হোক ন কেন, তারা মায়ের আবির্ভাব দিবসের বিশেষ পুজো ও মেলা দেখতে ভিড় উপচে পড়ে প্রতিবছরই। আজ আবির্ভাব দিবসে ভোর তিনটের সময় তারা মায়ের বিগ্রহ স্নান করিয়ে পশ্চিমমুখী বিরাম মঞ্চে বসানো হয়। সেখানেই সারাদিন ধরে আরাধনা। সন্ধ্যায় আরতির আগে ফের পুর্ব অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় দেবীকে। মেলাও শেষ  আজ রাতে।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*