
রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা:- শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। চাকরি খোয়ালেন ২৫ হাজার ৭৫২ জন। বুধবার সকালে দেশের শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। শিক্ষক-অশিক্ষক মিলিয়ে চাকরি হারা প্রায় ২৬ হাজার জন। এই রায়ে অনিশ্চয়তার মুখে রাজ্যের একাধিক স্কুল। নবান্নে জরুরি বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
সরকারের দুর্নীতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া সমালোচনা করেছে বিজেপি থেকে শুরু করে বাম ও কংগ্রেস। তাদের দাবি, ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে এর প্রতিদান তৃণমূল পাবে ৷
এই দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। চাকরি নিয়োগ দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রবীণ বাম নেতা সেলিম ভ্যাপম কাণ্ড উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “ভ্যাপম কাণ্ডে এই দুর্নীতি সবার আগে শুরু করেছিল আরএসএস। আরএসএসের কাছ থেকে দুর্নীতি শিখেছে তৃণমূল। এর আগেও প্রতি বছর এসএসসি নিয়োগ হত। প্রাথমিকে নিয়োগ হত। ২০১১ সালের আগে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সঙ্কট নেই। আসলে গলদটা মূলে। দুর্নীতিযুক্ত লোকেরা যদি দুর্নীতি করে ভোটে যায়, তাহলে সব ব্যাপারেই দুর্নীতি হবে।”
মিনাক্ষী বলেন, “চাকরি গিয়েছে ২৬ হাজার মানুষের। এর সঙ্গে তাঁদের পরিবারকে ধরলে প্রায় এক লক্ষ মানুষ ভেসে গেল। কার দোষে চাকরি গেল? তাঁদের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। কোথা থেকে টাকা ফেরত দেবে? সদ্য জীবনটা শুরু করেছে এই সব ছেলেমেয়েরা। শুরুতেই বড় ধাক্কা। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না?”
চাকরি বাতিল নিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, “খুবই অস্বস্তিকর বিষয়। কলকাতা হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিল তা কার্যত বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানিয়েছে, যে ভাবে এবং যে পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, তাতে যোগ্য-অযোগ্য আলাদা করা গেল না। রাজ্য সরকারকে এক বছর সময় দেওয়া হয়েছিল কারা যোগ্য, কারা অযোগ্য তা আলাদা করতে। সরকার পারল না। যারা অযোগ্য, অপদার্থ, তাদের থেকে টাকা খেয়ে সুবিধা করতে গিয়ে যোগ্যদের চাকরি খারিজ করতে হল! এখান থেকেই স্পষ্ট সরকার অযোগ্যদের পাশে। যে সরকার যোগ্যদের পেটে লাথি মারল, সেই সরকারকে বাতিল করে উচিত।”
অন্যদিকে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “শিক্ষক নিয়োগে এই ব্যাপক দুর্নীতির জন্য একমাত্র দায়ী ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে এটা পরিষ্কার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে অর্থের বিনিময়ে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষিত বেকারদের মেধা বিক্রি করা হয়েছে। এই বিপুল দুর্নীতির দায় নিতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। মুখ্যমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করছি। আর কোনও ক্ষমা নেই।” তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, রামনবমী মিটলে রাস্তায় নেমে বড়সড় আন্দোলন করবে বিজেপি।
এদিকে,কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেন, ‘রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রকে কলঙ্কিত করেছে। সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছে। তৃণমূল সরকার কেবল অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে তা নয়, বরং শিক্ষার উপর নির্ভরশীল শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষার সঙ্গেও প্রতারণা করেছে।” তিনি আরও বলেন, “সরকারি চাকরি নিশ্চিত করার চেষ্টায় হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী কঠোর পরিশ্রম করেছেন, সময় ব্যয় করেছেন। আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবার থেকে আসা ছেলেমেয়েদের কাছে সরকারি চাকরি বিশাল ভরসার জায়গা। দুর্ভাগ্যবশত, তৃণমূল সরকার কোটি কোটি বাঙালির স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ে দুর্নীতি করেছে। তাদের মর্যাদা ও আত্মসম্মান বিক্রি করে দিয়েছে। তৃণমূল এখন বিচার বিভাগকে দোষারোপ করবে এত মানুষের চাকরি কেড়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু মনে রাখা উচিত তাদের মন্ত্রী, বিধায়ক এবং নেতারা সকলেই এই শিক্ষা কেলেঙ্কারির অংশ হিসেবে দলের কোষাগার পূরণ করছিলেন। তাদের কর্মকাণ্ড প্রতিটি ব্যক্তির নিয়োগকে দুর্বল করে দিয়েছে। লোভ এবং নির্লজ্জ দুর্নীতি না থাকলে পুরো পরিস্থিতির এতটা অবনতি হত না। তৃণমূল জনগণকে শাসন করার নৈতিক দায়িত্ব হারিয়েছে। জনগণ ২০২৬ সালে উপযুক্ত জবাব দেবে।
Be the first to comment