বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া আবদ্ধ মামলার ফাঁসে ৷ তারই মাঝে প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য সুখবর বয়ে নিয়ে এল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ হাজার হাজার প্রাথমিক শিক্ষককে স্বস্তি দিয়ে আদালত জানাল প্রাথমিক টেট ২০১২ বেআইনি নয়, কিন্তু তাতে কিছু অনিয়ম লুকিয়ে থাকতে পারে । এর ফলে শিক্ষকদের সঙ্গে খানিক স্বস্তিতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদও ৷ তবে এখানেই শেষ নয়, পরীক্ষায় কিছু অনিয়ম হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখবে ডিভিশন বেঞ্চ ৷ আগামিকাল ফের ডিভিশন বেঞ্চে এই টেট বাতিল মামলার শুনানি ৷
২০১২ টেট বাতিল মামলায় কোর্টের এদিনের পর্যবেক্ষণে খানিক স্বস্তিতে ইতিমধ্যে নিযুক্ত প্রায় ১৭ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক ৷ ২০১২ সালে প্রাথমিক টেট পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ৷ ২০১৩ সালে এই পরীক্ষায় বসেন প্রায় ৪৫ লক্ষ পরীক্ষার্থী ৷ কিন্তু পরীক্ষায় সিলেবাস বহির্ভূত প্রশ্নের অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রাজা চট্টোপাধ্যায় সহ একাধিক পরীক্ষার্থী ৷ প্রথমে সিঙ্গলবেঞ্চে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের এজলাসে চলে এই মামলার শুনানি ৷ এনসিটিই অর্থাৎ ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশন তাদের হলফনামা দিয়ে হাইকোর্টকে জানায়, প্রাথমিক টেট ২০১২ -এর কিছু প্রশ্ন সিলেবাস বহির্ভূতই এসেছে । সিলেবাসের বাইরে প্রশ্ন আসার বিষয়টিকে মান্যতা দিলেও পরীক্ষা বাতিলের নির্দেশ দেননি বিচারপকি বসাক।
এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের করেন অসন্তুষ্ট পরীক্ষার্থীরা ৷ এদিন সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে জানায়, ‘প্রাথমিক টেট ২০১২ বেআইনি নয় ৷ সিলেবাস বহিভূর্ত প্রশ্নে বেআইনি কিছু হয়নি ৷ তবে ওই সেটে কিছু অনিয়ম লুকিয়ে থাকতে পারে ৷ অনিয়ম হলে তা খতিয়ে দেখবে ডিভিশন বেঞ্চ ৷’ তবে এরপর ওই টেট পরীক্ষায় কোনও অনিয়ম হয়েছিল তা যদি ধরা পড়ে, তাহলে ইতিমধ্যে নিযুক্ত প্রায় ১৭ হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ার মতো কোনও আশঙ্কা নেই বলে এদিন স্পষ্ট করেছে ডিভিশন বেঞ্চ ৷
কোর্টের পর্যবেক্ষণে প্রাথমিক শিক্ষকেরা স্বস্তি পেলেও ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্নবাণের মুখে পড়ে অস্বস্তিতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ৷ এদিন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ পর্ষদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছোঁড়েন, প্রতিবছর টেট পরীক্ষা হয় কিনা? পরীক্ষা হলে প্রতিবছর পয়লা জানুয়ারি রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষকের কতগুলি আসন শূন্য আছে তা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কি পর্ষদ?
একইসঙ্গে আদালত এদিন জানিয়েছে এই টেট বাতিল মামলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা স্বার্থে এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি প্রয়োজন ৷ মামলাকারীদে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ২০১২ টেট পরীক্ষায় কোনও অনিয়ম ধরা পড়লে ইতিমধ্যে নিযুক্ত ১৭ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের ভবিষ্যতের স্বার্থে মামলাকারীরা পরীক্ষা বাতিলের পরিবর্তে অন্য কোনও বিকল্প আদালতকে জানাতে পারেন ৷ বৃহস্পতিবার অর্থাৎ আগামিকালের শুনানিতে মামলাকারীদের পক্ষে আদালতকে বিকল্পের আবেদন জানাবেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ৷ এই মামলার রায়ের উপরেই নির্ভর করছে ২০১২ টেট উত্তীর্ণ ও কর্মরত প্রায় ১৭ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের ভবিষ্যৎ ৷
Be the first to comment