আর পাঁচটা দিনের থেকে রবিবারের সকালে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের চেহারাটা থাকে একদম আলাদা। তবে অন্যান্য রবিবারে ‘ফাইভ পয়েন্ট ক্রসিং’-এ বাস-ট্রামের পাশাপাশি মানুষের দেখা কম পাওয়া গেলেও আজ কিন্তু চত্বর ছিল একেবারে জমজমাট। জড়ো হয়েছিলেন প্রচুর মানুষ। দলে ছিলেন আট থেকে আশি সবাই। পাট ভাঙা শাড়ি পরে, মাথায় ফুল লাগিয়ে হাজির হয়েছেন মহিলারাও। নজরে আসছিল বড় বড় ব্যানার। আর তাতে লেখা রয়েছে ‘মানুষ এ মিছিলে গণদেবতার রূপে।’ আকাশে উড়ছিল লাল-নীল-হলুদ বেলুন। সঙ্গে কড়া নজদারির জন্য পাক খাচ্ছিল ড্রোন। সব মিলিয়ে একেবারে জমজমাট ব্যাপার।
আয়োজন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল নিশ্চয় আজ এখানে রয়েছে কোনও উৎসব। এরই মধ্যে নজরে এল পাঁচ মাথার মোড়েই দাঁড়ানো এক মেরুন রংয়ের জিপ। যার গায়ে আটকানো পিচবোর্ড দিয়ে তৈরি ভারতের মানচিত্র। আর সেই মানচিত্রের গায়ে লেখা ছিল ‘চাই থ্যালাসেমিয়া মুক্ত ভারতবর্ষ’। গাড়ির ভিতরে বসা এক প্রৌঢ় মাইকে অনবরত ঘোষণা করছেন ‘এসে গিয়েছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আর কিছুক্ষণেই শুরু হবে আমাদের র্যালি।’ ক্ষণিকের মধ্যেই মাইকের ঘোষণা থেকে জানা গেল, থ্যালাসেমিয়া প্রসঙ্গে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এ দিন এক র্যালির আয়োজন করেছিল ‘সেরাম থ্যালাসেমিয়া প্রিভেনশন ফেডারেশন।’
এ দিনের র্যালিতে যোগ দিয়েছিলেন উত্তর কলকাতার বিভিন্ন পুজো কমিটির সদস্যরা। ছোট-বড়ো সব ক্লাব থেকেই এসেছিলেন প্রচুর মানুষ। আট থেকে আশি সবার মধ্যেই উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। তবে কেবল পায়েই হাঁটেননি সমর্থকরা। ছিল বেশ কয়েকটি ট্যাবলো। সংস্থার মহিলা কর্মী-সমর্থকরা আয়োজন করেছিলেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও। এমনকী বিভিন্ন এলাকার কোচিং সেন্টার, ফুটবল ক্লাব থেকেও এ দিনের র্যালিতে হাজির ছিলেন ভলান্টিয়াররা। লক্ষ্য একটাই, সমাজকে সচেতন করতে হবে ‘থ্যালাসেমিয়া’ নামক মারণ রোগের সম্পর্ক।
প্রতিবছরই বিশ্ব এইডস দিবসের (১ ডিসেম্বর) পরের দিন অর্থাৎ ২ ডিসেম্বর শহরে একটি র্যালির আয়োজন করেন ‘সেরাম থ্যালাসেমিয়া প্রিভেনশন ফেডারেশন’-এর কর্মী-সমর্থকরা। এই বছরেও ২ ডিসেম্বর রবিবার সকালে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় থেকে আয়োজন করা হয়েছিল এই র্যালির। হেদুয়া পার্ক থেকে বাগবাজার হয়ে এই র্যালি শেষ হবে শ্যামবাজারেই। তারপরে রয়েছে সেরাম সংস্থার রক্তদান শিবির। শ্যামবাজার মেট্রো স্টেশনের দু’নম্বর গেটের কাছে বাঁধা হয়েছে একটি মঞ্চ। সেখানে হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। র্যালিতে যোগ দেওয়া এক তরুণ বলেন, “প্রতিবছর এই র্যালিতে আসি। অনেক বন্ধুবান্ধবও আসে। বলতে পারেন আমাদের একটা রিইউনিয়ন হয়। আর সবার সঙ্গে দেখা হওয়ার ফাঁকে সমাজের ভালোর জন্য এটুকু কাজ যে আমরা করতে পারি সেটাই ভালো লাগে। জানি এতো কিছুর পরেও আমাদের সমাজে থ্যালাসেমিয়ার ব্যাপারে সচেতন মানুষের সংখ্যা অনেক কম। তবু প্রতিবার আসি। ভাবি দু’টো লোকও যদি আমাদের মাধ্যমে সচেতন হন সেটাই বা কম কীসে।”
ফেডারেশনের প্রধান সঞ্জীব আচার্য জানিয়েছেন, “এটা আমাদের বার্ষিক অনুষ্ঠান। প্রতিবারই শহরের কোথাও না কোথাও এই র্যালির আয়োজন করা হয়। মানুষের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া প্রসঙ্গে সতর্কতা বৃদ্ধি করাই আমাদের উদ্দেশ্য। সবাইকে আমরা এটাই বোঝাতে চাই যে এই রোগের দু’জন বাহকের (ক্যারিয়ার) মধ্যে যেন বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন না হয়। কারণ তাহলে ভবিষ্যতে আগত সন্তানও এই রোগের বাহক হতে পারে। ফলে স্বভাবতই তার আয়ু হবে খুবই কম।” তবে শুধু এটাই নয়, সঞ্জীববাবুর কথায় পরীক্ষার মাধ্যমে বিয়ের আগেই সবার জেনে নেওয়া উচিত তিনি থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা। তিনি জানিয়েছেন, ‘সেরাম থ্যালাসেমিয়া প্রিভেশন ফেডারেশন’-এ এই পরীক্ষা করা হয়। এবং তা হয় অনেক কম খরচে।
Be the first to comment