বিধানসভায় শাসকদলের নীরব থাকা ১১৮ জন বিধায়ককে সক্রিয় করার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

Spread the love

রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা:- আগামী বছর বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে রাজ্য বিধানসভায় নীরব থাকা বিধায়কদের সক্রিয় করতে উদ্যোগ নিল বিধানসভার পরিষদীয় দল। সূত্রের খবর, শাসকদলের দুই অভিজ্ঞ নেতাকে বিধায়কদের সক্রিয় করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

২০২১ সালে ২১৫ আসনে জিতে তৃতীয়বারের জন্য বাংলা দখল করে তৃণমূল কংগ্রেস। পরবর্তী সময়ে রাজ্যের ৬টি উপনির্বাচনে ৬টি আসনেই জয়ী হয় তৃণমূল। বর্তমানে শাসকদলের মোট বিধায়ক সংখ্যা ২২২। কিন্তু, এই ২২২ জন বিধায়কের মধ্যে বিধানসভায় ১১৮ জন এমন বিধায়ক আছেন যারা ২০২১ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর গত চার বছরে বিধানসভা অধিবেশনের কোনো পর্যায়ে কোনো আলোচনায় অংশ নেননি। সম্প্রতি এই তথ্য জানতে পেরেই এবার নড়েচড়ে বসলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া চলতি বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনে বিধানসভার নওশের আলী কক্ষে তার দলের সব বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকের আগে তৃণমূল সুপ্রিমো গত চার বছরে দলের বিধায়কদের কাজের পর্যালোচনা করেছিল। আর সেখানেই উঠে আসে আমতার বিধায়ক সুকান্ত পাল, বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক সপ্তর্ষি ব্যানার্জি, হরিপালের বিধায়ক করবী মান্না, চাঁপদানির অরিন্দম গুইনের মতো মোট ১১৮ জন বিধায়কের নাম। যারা গত চার বছরে বিধানসভার কার্যবিধির কোনো পর্যায়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব, মনোযোগ আকর্ষণ পর্ব বা কোনো প্রস্তাব বা বিল নিয়ে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করে নি। অর্থাৎ তারা সদনে নীরব ছিলেন। এরপরই ওইসব নিষ্ক্রিয় বিধায়ককে সক্রিয় করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভার সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং বিধানসভার শাসকদলের মুখ্য সচেতন নির্মল ঘোষের উপর দায়িত্ব দেন।
সংসদীয় রাজনীতিতে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। সেই শ্রেণিকে মজা করে ‘গুঙ্গে-বধির’-দের স্কুলের সদস্যও বলা হয়। এক সময় দিল্লির রাজনীতিতে বাঙালি সংসদ সদস্যদের একটি শ্রেণি এই পরিচয়ে পরিচিত ছিল। এখন অবশ্য পরিস্থিতি ততটা খারাপ নয়। অনেক বাঙালি সংসদ সদস্য এখন সংসদের উভয় কক্ষে কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন। তাদের বাকপটু বক্তা হিসেবেও জানা যায়। কিন্তু বিধানসভায় পরিস্থিতি এমন নয়। কারণ, চার বছর পরও ক্ষমতাসীন দলের এত বিধায়ক ‘মৌনী বাবা’ হয়ে কাজ করছেন। বিধায়কদের নীরবতা দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। ২৯৪ সদস্যের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় তৃণমূল বিধায়কদের মোট সংখ্যা এখন ২২২। তাদের মধ্যে ১১৮ জন নীরব থাকেন, এর অর্থ হলো বিধানসভায় তৃণমূলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অর্ধেকের বেশি কথা বলেন না। পশ্চিমবঙ্গে ২০২৬ সালে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিধায়কদের মেয়াদ মাত্র এক বছর বাকি। এমন পরিস্থিতিতে এখন তৃণমূল নেতৃত্ব আগামী নির্বাচনকে মাথায় রেখে ওই ১১৮ জন বিধায়ককে এই বছর বিধানসভায় সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী শোভনদেব নীরব বসে থাকা বিধায়কদের শাস্তি দেওয়া থেকে এড়িয়ে যাচ্ছেন। তার কথায়, ‘অনেক বিধায়ক নিষ্ক্রিয় রয়ে গেছেন। আমাদের এই দায়িত্ব নিতে হবে যে তাদের শাস্তি না দিয়ে সদনে কীভাবে সক্রিয় করা যায়। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যাব যাতে আমাদের সব বিধায়ক বিধানসভার প্রতিটি আলোচনা পর্বে অংশ নেন, শুধু বাজেট অধিবেশনেই নয়, আগামী দিনগুলোতেও।’ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বুধবার বাজেট পেশ হওয়ার পর পরপর চার দিনের ছুটি রয়েছে। রাজ্যপালের ভাষণ নিয়ে আগামী সোমবার ও মঙ্গলবার আলোচনা হবে। অন্যদিকে, বাজেট নিয়ে বুধবার ও বৃহস্পতিবার আলোচনা হবে। নিষ্ক্রিয় বিধায়কদের এই চার দিনের আলোচনার সময় কথা বলা বা আলোচনায় অংশ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই মতো এই ছুটির চারদিন রীতিমতো ‘হোম ওয়ার্ক’ করে বিধানসভায় আসারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরই আগামী সোমবার থেকে বাজেট অধিবেশনে বক্তাদের নতুন তালিকা প্রস্তুত করছে বিধানসভার পরিষদীয় দল। বিধানসভায় দলের মুখ্য সচেতন নির্মল ঘোষ তার দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যারা গত চার বছর ধরে সদনে নিরব তাদের বক্তা তালিকায় নাম রাখার জন্য।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*