রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা:- হাতে মাত্র আর কয়েকঘণ্টা। বুধে অর্থাৎ অক্ষয়তৃতীয়ার দিনে দ্বারোদঘাটন হবে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের। তার আগে মঙ্গলবার পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী মহাযজ্ঞে শামিল হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ণাহুতি দিলেন তিনি। নিজের হাতে করলেন আরতি। দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের চূড়ায় উড়ল ধ্বজাও।

গত রবিবার বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে পুরীর নিয়মে দিঘায় জগন্নাথ দেবের প্রাণপ্রতিষ্ঠায় শুরু হয় আচার-অনুষ্ঠান। মঙ্গলবার শাস্ত্রীয় মতে শুরু হয় পুজোপাঠ ও হোমযজ্ঞ। জগন্নাথদেবের মূল মন্দিরের সামনে হোমযজ্ঞ করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল অস্থায়ী আটচালা ঘর। মঙ্গলবার সকাল থেকেই সেখানেই শুরু হয়েছে পুজো এবং হোমযজ্ঞ। পুরীর মন্দির থেকে ৫৭ জন জগন্নাথদেবের সেবক এবং ইসকন থেকে ১৭ জন সাধু তাতে শামিল হয়েছেন। মঙ্গলবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘায় পৌঁছন। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুয়ায়ী, ২৯ তারিখ বিশ্বশান্তির জন্য শুরু হয় মহাযজ্ঞ। ১০০ কুইন্টাল আম ও বেলকাঠ এবং ২ কুইন্টাল ঘি পোড়ানো হয়। এদিন মহাযজ্ঞে পূ্র্ণাহুতি দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের হাতে আরতিও করেন। বললেন, মা-মাটি- মানুষের জন্য পুজো দিয়েছেন। মমতার কথায়, “মা-মাটি-মানুষ ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকব।”

সূচি অনুযায়ী আগামিকাল ৩০ এপ্রিল, মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই মন্দিরের দ্বারোদঘাটন ও জগন্নাথদেবের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বিধান অনুযায়ী তা করবেন পুরীর রাজেশ দৈতাপতি। নতুন মন্দিরে থাকছে কাঠের এবং পাথরের দুই ধরনের বিগ্রহ। পুরী থেকে আসা পান্ডারা কাঠের বিগ্রহে প্রাণপ্রতিষ্ঠার আচার করবেন। আর পাথরের নির্মিত জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ও রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহের প্রাণপ্রতিষ্ঠা সম্পন্ন করবেন ইসকনের সন্ন্যাসীরা। বুধবার তিন ধাপে চলবে মূল প্রক্রিয়া-ঘট স্থাপন, কুণ্ড স্থাপন এবং অবশেষে দেবতাদের প্রতিবিম্ব স্থাপন। সমস্ত প্রথা মেনে বিগ্রহ বাঁধা হবে সোনা, রুপো ও তামার তারে, সেই তার প্রধান পুরোহিতের কোমরে বাঁধা থাকবে।
মন্দির উদ্বোধনের সাক্ষী থাকতে জেলা, রাজ্য, প্রতিবেশী রাজ্যের বহু পুণ্যার্থী যাবেন সৈকত শহর দিঘায়। সাধারণ মানুষের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। যাঁরা মন্দির দর্শনে যাবেন, তাঁরা ওল্ড দিঘা থেকে ১১৬ বি জাতীয় সড়ক ধরে তিন কিলোমিটার হেঁটে মন্দিরে পৌঁছতে পারবেন। নিউ দিঘা বাস ডিপো থেকে আসবেন তাঁরাও, ১১৬ বি জাতীয় সড়ক ধরে শনিমন্দিরের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, পুরীর আদলে নির্মিত দিঘার জগন্নাথ মন্দির। এই মন্দির প্রায় ২০ একর জমিতে বিস্তৃত। মন্দির নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। রাজস্থানের বানসি পাহাড়পুরের লাল বেলে পাথর, আর ভিয়েতনাম থেকে আসা উন্নতমানের মার্বেল দিয়ে নির্মিত মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ৬৫ মিটার। পুরীর আদলে রয়েছে চারটি মণ্ডপ-বিমন, জগমোহন, নাটমন্দির ও ভোগমণ্ডপ। চারটি দিক থেকেই প্রবেশের ব্যবস্থা, অরুণ স্তম্ভ, সিংহদ্বার, হাতিদ্বার, অশ্বদ্বার আর ভদ্রদ্বার দিয়ে ঘেরা প্রধান মন্দিরের চত্বর। দরজাগুলিতে খোদাই করা শঙ্খ, চক্র আর পদ্মের অলংকরণ।

Be the first to comment