রোজদিন ডেস্ক :-
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুনিয়র চিকিৎসকদের বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠক শেষ হয়েছে। আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) বিকেল সোয়া পাঁচটায় শুরু হয় বৈঠক। চলে সাতটা পাঁচ মিনিট পর্যন্ত। আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের অভিযোগ ধৈর্য্য সহকারে শোনার পাশাপাশি অনশন এবং ধর্মঘট তুলে নেওয়ার জন্য ফের অনুরোধ জানান মুখ্যমন্ত্রী। যদিও জুনিয়র চিকিৎসকরা রাজ্য সরকারকে অনশন তোলার কোনও প্রতিশ্রুতি দেননি। ধর্মতলার অনশন মঞ্চে ফিরে সতীর্থদের সঙ্গে আলোচনার শেষেই এ বিষয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এদিন নির্ধারিত সময়েই নবান্নে পৌঁছন জুনিয়র চিকিৎসকদের ১৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল। যদিও গত শনিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে ১০ জন জুনিয়র চিকিৎসককে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এদিনের বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার করা হয় সমাজমাধ্যমে। বেশ কয়েকবার বৈঠক যথেষ্টই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। জুনিয়র চিকিৎসকদের ১০ দফার মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের অপসারণ। এদিন বৈঠকের শুরুতেই স্বাস্থ্য সচিবের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলেন জুনিয়রর চিকিৎসকদের নেতা অনিকেত মাহাত। জবাবে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দেন, অভিযোগ প্রমাণের আগে কাউকে দোষী বলা যায় না। আরজি করের ৪৭ চিকিৎসককে সাসপেন্ড নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সরাসরি আরজি করের অধ্যক্ষ মানস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চান, ‘কোনও আলোচনা না করে সাসপেন্ড কেন? এটাও কি থ্রেট কালচার নয়? কী ভাবে নিজে সিদ্ধান্ত নিলেন? রাজ্য সরকারকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন না?’
জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের সময়ে ৫৬৩ জন চিকিৎসক চুটিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে প্র্যাকটিশ ও অস্ত্রোপচার করেছেন বলে রাজ্য সরকারের কাছে প্রমাণ রয়েছে। ওই প্রমাণের কথা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘তোমরা যখন আন্দোলন করছো, কর্মবিরতি করছো, তখন ৫৬৩ জন আন্দোলন চলার সময় বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করে টাকা নিয়েছেন। তোমাদের ধর্মঘটের জন্য গত ৭০ দিনে রাজ্য সরকারের ৪৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে ওই টাকা খরচ হয়েছে। জনগণের টাকা অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে।’
জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি মেনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘জেলায় জেলায় গ্রিভ্যান্স সেল তৈরি করা হবে। রোগী কল্যাণ সমিতিতেও জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।’ জুনিয়রর চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, কলেজস্তরে র্যাগিংয়ের অভিযোগ এলে কে খতিয়ে দেখবে? অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি নাকি টাস্ক ফোর্স? বৈঠকের শেষ লগ্নে অনশন তুলে নেওয়ার জন্য জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলন শুরু করলে শেষও করতে হবে। মানবাধিকার কমিশনের দাবিতে ২১ দিন ধর্না করেছিলাম। যখন অনশন করেছিলাম, তখন প্রশাসনের তরফে কেউ আসেননি। শুধু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমা রাও দু’লাইনের চিঠি দিয়ে দাবি আলোচনার আশ্বাস দিয়ে অনশন প্রত্যাহার করতে বলেছিলেন। তাঁর প্রতি সম্মান রেখে অনশন তুলে নিয়েছিলাম। সিঙ্গুর নিয়ে ২৬ দিন অনশন করেছি। কেউ আসেনি। রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধি ব্যক্তিগত ভাবে আমায় ভালবাসতেন বলে এসেছিলেন। তোমাদের ভালবাসি। আলোচনায় ফাঁক রাখা হয়নি। মন খুলে কথা বলেছো। এবার অনশন তুলে নাও।’
Be the first to comment