রতন টাটার মৃত্যুতে শিল্প জগত সহ সর্বত্রই শোকের ছায়া

Spread the love

 

রোজদিন ডেস্ক :-

 

ভারতীয় শিল্পবাণিজ্যের মহীরূহ রতন টাটার জীবনাবসান। বুধবার রাতে মুম্বইয়ের হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। বয়স হয়েছিল ৮৬। তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া সব মহলে। শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাহুল গান্ধী-সহ বহু মানুষ। শোকপ্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বাংলা রাজনীতিতে সিঙ্গুরে টাটা কারখানা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আজ ওরলিতে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্মান জানানো হবে টাটাকে, এমনটাই জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে।

শেষ হল দেশের শিল্পক্ষেত্রের একটি অধ্যায়।টাটা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা জামশেদজি টাটা হলেন রতন টাটার প্রপিতামহ। ১৯৪৮ সালে মাত্র দশ বছর বয়সে তাঁর বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায় এবং তাই তিনি তাঁর ঠাকুমা, নওয়াজবাই টাটার কাছে বেড়ে ওঠেন।

রতন টাটা অবিবাহিত। মজার ব্যাপার হল, চার বার এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাঁর প্রায় বিয়ে হয়েই যাচ্ছিল। কিন্তু নানা কারণে বিয়ে করতে পারেননি। তিনি একবার বলেছিলেন যে লস অ্যাঞ্জেলেসে কাজ করার সময়ে তিনি প্রেমে পড়েছিলেন। কিন্তু ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধের কারণে মেয়েটির বাবা-মা তাঁকে ভারতে পাঠানোর বিরোধিতা করেন। এরপর আর বিয়ে করেননি তিনি।
রতন টাটা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মুম্বইয়ের ক্যাম্পিয়ন স্কুলে পড়াশোনা করেন, তারপরে ক্যাথেড্রাল এবং জন কনন স্কুল এবং সিমলার বিশপ কটন স্কুল সিমলায় পড়াশোনা করেন। তিনি ১৯৫৫ সালে নিউ ইয়র্ক সিটির রিভারডেল কান্ট্রি স্কুল থেকে ডিপ্লোমা লাভ করেন।
১৯৬১ সালে টাটা গ্রুপে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন এবং তাঁর প্রথম কাজ ছিল টাটা স্টিলের শপ ফ্লোর পরিচালনা করা। পরে তিনি পড়াশোনা শেষ করতে হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে যান। রতন টাটা কর্নেল ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ আর্কিটেকচারেরও প্রাক্তন ছাত্র।২০০৪ সালে টিসিএস প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে, টাটা গ্রুপ ইস্পাত প্রস্তুতকারক কোরাস, ব্রিটিশ মোটরগাড়ি সংস্থা জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার এবং ব্রিটিশ চা সংস্থা টেটলির সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা টাটা কোম্পানিকে সারা বিশ্বের নজরে নিয়ে আসে।
২০০৯ সালে তিনি ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাধ্যের মধ্যে সবচেয়ে সস্তা গাড়ি তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন এবং ১ লক্ষ টাকা দামের টাটা ন্যানো বাজারে নিয়ে এসেছিলেন।
তিনি তাঁর সেবামূলক কাজের জন্যও পরিচিত। তাঁর নেতৃত্বে, টাটা গ্রুপ ভারতের স্নাতক শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮ মিলিয়ন ডলারের টাটা স্কলারশিপ ফান্ডের ব্যবস্থা করে। ২০১০ সালে, টাটা গ্রুপ হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল (এইচবিএস)-এ একটি এগজিকিউটিভ সেন্টার নির্মাণের জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়, যেখানে তিনি তাঁর স্নাতক প্রশিক্ষণ লাভ করেন।২০১৪ সালে, টাটা গ্রুপ আইআইটি-বোম্বেকে ৯৫ কোটি টাকা অনুদান দেয় এবং গরিব মানুষ এবং সম্প্রদায়ের প্রয়োজনের জন্য উপযুক্ত প্রযুক্তির বিকাশের উদ্যোগ নেয়। সেই উদ্দেশ্যে টাটা সেন্টার ফর টেকনোলজি অ্যান্ড ডিজাইন (টিসিটিডি) গঠন করা হয়।
জামশেদজি টাটার সময় থেকেই বোম্বে হাউসে বর্ষাকালে রাস্তার কুকুরদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে। সেই ঐতিহ্য অব্যাহত রেখেছেন রতন টাটা। তাঁর বোম্বে হাউসের সদর দফতরে সাম্প্রতিক সংস্কারের পরে রাস্তার কুকুরদের জন্য একটি কেনেল রয়েছে। এই কেনেলে রাস্তার কুকুরদের জন্য খাবার, জল, খেলনা দেওয়া হয়। সেখানে একটি খেলার জায়গাও রয়েছে তাদের জন্য।


সকাল সাড়ে ১০টায় মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মুম্বইয়ের নরিম্যান পয়েন্টে এনসিপিএ লনে। সেখানে সাধারণ মানুষ শেষশ্রদ্ধা জানাতে পারবেন। এদিন দুপুরে শেষকৃত্য। রাষ্ট্রীয় সম্মানে বিদায় জানানো হবে তাঁকে। নরিম্যান পয়েন্টে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*