রোজদিন ডেস্ক :- শুক্রবার রাতে রেললাইন থেকে উদ্ধার হল দ্বাদশ শ্রেণীর এক ছাত্রীর নিথর দেহ। মৃতের মায়ের দাবি, সন্ধেয় ফোন করে মেয়ে বলেছিল, ‘ওরা আমাকে বাঁচতে দেবে না।’
বয়স ১৮ ওই মৃতার নাম অঙ্গনা হালদার ওরফে পিউ। বাড়ি কালনার ধাত্রীগ্রামের দাসপাড়ায়। কৃষ্ণদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে কলা বিভাগের ছাত্রী। শুক্রবার রাতে কালনা স্টেশনের কিছুটা দূরেই রেললাইনের পাশ থেকে তার দেহ উদ্ধার করে জিআরপি। মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তে নিজের মাকে ফোন করে ‘ওরা আমাকে বাঁচতে দেবে না’ বলেছিলেন ওই নিহত ছাত্রী যার কারণে তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। কালনায় এক শিক্ষকের কাছে ইংরেজি পড়তে প্রতি দিনই মায়ের সঙ্গে যেতেন ওই তরুণী। সেরকমই শুক্রবারও পড়তে গিয়েছিলেন। তবে অন্য দিনের মত এদিন পড়া শেষ হওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের কিছুক্ষণ আগেই শিক্ষকের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান ছাত্রীটি।
পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৩৮ মিনিটে কালনা স্টেশনে আসেন ওই ছাত্রী। এরপর ৬টা ৫২ মিনিটে মাকে ফোন করেন ছাত্রীটি। ফোনে সেই ছাত্রী মাকে বলেছেন, ‘ওরা আমাকে বাঁচতে দেবে না।’ এই কথা বলার পরেই ফোন কেটে যায় বলে দাবি করেছে ছাত্রীর মা। এরপর অনেকবার ছাত্রীর মা মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত যোগাযোগ করা যায়নি।
মেয়ের এরকম ফোন পাওয়ার পরেই কালনা থানায় দ্বারস্থ হয়ে সেই ছাত্রীর জন্য নিখোঁজ ডায়েরি করে তাঁর পরিবার। এরপরেই সেই ছাত্রীর খোঁজে পুলিশ তল্লাশি শুরু করলে সন্ধ্যা ৭টার পরে জিআরপির কাছ থেকে কালনা থানায় এক কিশোরীর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারের খবর আসে। এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রীটিকে শনাক্ত করে ছাত্রীর পরিবার এবং পুলিশ।
জিউধারা রেলগেট সংলগ্ন এলাকা থেকে ওই ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয়েছে। দেহ উদ্ধারের পর কালনা মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় কালনার প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে ওই ছাত্রীকে। এমনকি ওভারব্রিজে উঠে আবার তাঁকে নেমে যেতেও দেখা গিয়েছে।
নিহত ছাত্রীর কাকা দাবি করে বলেছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় শিক্ষকের বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ও। তারপরই মাকে ফোন করে বলে, ‘ওরা আমাকে বাঁচতে দেবে না।’ কোনও আত্মহত্যা নয়। ওকে খুন করা হয়েছে।’ ছাত্রীর পরিবার দাবি করেছে, সেই ছাত্রীটিকে আত্মহত্যা নয় খুন করা হয়েছে। এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ছাত্রীটি বেশ কিছুদিন ধরে মানসিক অস্থিরতার মধ্যে ছিল এবং তার কিছু পারিবারিক সমস্যাও চলছিল।
যদিও ঘটনাস্থল থেকে কিছু না পাওয়া গেলেও পুলিশ জানিয়েছে, “এই ঘটনাটি একেবারে সন্দেহজনক। মেয়েটি যে কথাগুলি ফোনে বলেছিল, তা থেকে আমরা কিছু ইঙ্গিত পাচ্ছি। আমাদের মনে হচ্ছে, সে হয়তো কোনো ধরনের হুমকি বা আক্রমণের শিকার হয়েছে।” তবে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে কেউ হত্যা করেছে সে বিষয়ে পুলিশ এখনও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরই পুরো ঘটনা পরিষ্কার হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে পুলিশের তরফ থেকে। বর্তমানে ছাত্রীর মৃত্যু ঘিরে ধীরে ধীরে রহস্য দানা বাঁধছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে এখন কী উঠে আসে সেটাই দেখার।
Be the first to comment