দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্টে ভারতের সেরা তিন ব্যাটিং পারফরম্যান্স

Spread the love

বিদেশের মাটিতে বিশেষ করে উপমহাদেশের বাইরে যেমন অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা, ইংল্যান্ডের মত দেশের বাউন্সি পিচে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা বারে বারে চোখে ধরা পড়েছে। সম্প্রতি ভারত এখন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আছে। দীর্ঘ সফরে ভারত ৩টে টেস্ট, ৬টি একদিনের ম্যাচ এবং ৩টি টি-২০ ম্যাচ খেলবে। ২০১৭ সালে ভারতের সাফল্য বেশিরভাগই তাদের ঘরের মাঠে। অধিনায়ক বিরাট কোহলি এবং কোচ রবি শাস্ত্রীর যুগল বন্দি দেশের মাঠে সব কটাই টেস্ট সিরিজ জিতেছে। এবারে তাদের কাছে শক্ত পরীক্ষা বিদেশের মাটিতে। এর আগে ভারতীয় দল যতবারই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গেছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা দক্ষিণ আফ্রিকার পেস ব্যাটারির কাছে ধরা পড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রান করতে গিয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। তারই মধ্যে কিছু ভারতীয় ব্যাটসম্যান স্মরণীয় ইনিংস খেলেছেন এই প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে। তিন সেরা ইনিংস পাঠকের কাছে তুলে ধরা হলোঃ-


১. বীরেন্দ্র সেওয়াগ – ৩১৯ (চেন্নাই টেস্ট, ২০০৭-০৮)
টেস্টে তিনশ রান করা খুব সহজ নয় অথচ ভারতের প্রাক্তন এই ওপেনার খুব সহজেই করেছেন তাঁর ভয়ডরহীন ব্যাটিং-এর সৌজন্যে। সেওয়াগ টেস্টে দু’বার তিনশ রান করেছেন, প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে তার মধ্যে একটি। ২০০৭-০৮ সিরিজে চেন্নাই টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমে ব্যাট করে ৫৪০ রানের বড় ইনিংস গড়ে, হরভজন সিং ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। জবাবে ভারতও ৬২৭ রানের বিশাল ইনিংস গড়েছিল। যার মধ্যে বীরেন্দ্র সেওয়াগ একারই করা ৩১৯ রান মাত্র ৩০৪ বল খেলে। ৪২ টা চার এবং ৫ টা ছক্কা দিয়ে সাজানো এই ইনিংস। তাঁর এই চমকপ্রদ ব্যাটিং-এর জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচটি জিততে পারেনি। ম্যাচটি অমমাংসিত ভাবে শেষ হয়। সেওয়াগ টেস্টে দ্রুতগতিতে ২৭৮ বলে ৩০০ রান করেন। যেটি বিশ্বরেকর্ড।


২. সচিন তেন্ডুলকর – টেস্টে ৫০তম শতরান (সেঞ্চুরিয়ান, ২০১০)
দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টগুলি সর্বদা একতরফা ব্যাপার হয়ে দেখা গেছে। তবে, কখনো কখনো কোনো একজন ব্যাটসম্যান পরিস্থিতি অনুযায়ী একার লড়াইয়ে বিপদ থেকে ভারতকে বাঁচিয়েছেন।
ভারত প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৩৬ রান করে সকলে আউট হয়ে যায়। জবাবে হাসিম আমলা, এবি ডি ভিলিয়ার্স ও জ্যাক ক্যালিসের দুর্দান্ত ডাবল সেঞ্চুরির সাহায্যে ৬২০ রানের বিশাল ইনিংস গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে তেন্ডুলকার একা লড়াই করেন এবং ১১১ রানে অপরাজিত থেকে টেস্টে ৫০তম সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করেন। ৩৭ বছর বয়সী তেন্ডুলকর ৩২৭ বলে এই ধৈর্যশীল ইনিংস খেলেছিলেন কিন্তু উলটো দিক দিয়ে কোনোরকম সাপোর্ট না পাওয়ায় এই টেস্টে ভারতের হারকে আটকাতে পারেননি। ভারত এক ইনিংস এবং ২৫ রানে হেরে যায়।


৩. কপিল দেব – ১২৯ (পোর্ট এলিজাবেথ, ১৯৯২-৯৩)
ভারত সেই সময় তাদের প্রথম টেস্ট সিরিজ খেলতে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। পোর্ট এলিজাবেথে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের মধ্যকার সেই ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজের তৃতীয় টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয়দের ওপর দাপট দেখায়।
প্রথম ইনিংসে ভারত ২১২ রানে অল আউট হয় যায়। জবাবে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের প্রথম ইনিংসে ২৭৫ রানের বেশি করতে পারেনি। মহম্মদ আজহারউদ্দিন-এর নেতৃত্বাধীন ভারত প্রথম ইনিংসে ৬৩ রানে পিছিয়ে ছিল। এই অবস্থায় দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যালান ডোনাল্ড-এর আগুনে বোলিং-এর সামনে ভারতের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। ভারত তখন ৬ উইকেট হারিয়ে ৩১ রানে ধুঁকছে। কপিল দেব ব্যাট হাতে নামেন। ২৫৭ বলে ১২৯ রানের একটি অসাধারণ ইনিংস উপহার দেন তিনি। এই ম্যাচে ভারতীয় টপ অর্ডারের ব্যর্থতা ঢাকতে কপিল ব্যাট হাতে রুখে দাঁড়ান দলে টেল-এন্ডারদের নিয়ে। মনোজ প্রভাকর, কিরণ মোরে ও অনিল কুম্বলে সকলেই ১৭ রান করেন। এবং ছোট ছোট জুটিতে কপিলের সাথে সঙ্গ দেন এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের রানকে ২১৫ রানে টেনে নিয়ে যান। কিন্তু কপিল দেবের ব্যাটিং-এর এই দাপট ম্যাচ জেতানোর মতো যথেষ্ট ছিল না, তাই দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৯ উইকেটে ম্যাচটি হেরে যায় ভারত। কিন্তু কপিল দেবের এই ইনিংস স্মরণীয় ইনিংসের মধ্যে একটি।

তথ্য সংগ্রহে – রাজকুমার ঘোষ

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*