মতুয়া সমাজের মধ্যে কি তা হলে সত্যিই বাড়ছে গেরুয়া প্রভাব? আর তা নিয়ে কি কপালে ভাঁজ বাংলার শাসক দলের? রবিবাসরীয় সকালে তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে হওয়া একটি বৈঠকের পর তেমনই গন্ধ পাচ্ছেন রাজনৈতিক মহলের অনেকে।
কেন এমন গন্ধ?
শনিবার নদিয়ার মাজদিয়ায় সভা করতে গিয়েছিলেন একদা তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড মুকুল রায়। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী গিরিরাজ সিং। জানা গিয়েছে, মুকুলবাবুদের সভায় ব্যাপক জমায়েত করেছিলেন মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকজন। আর তারপরই রবিবার সকালে পার্থবাবু বৈঠক করলেন নদিয়া জেলার দলীয় নেতা এবং মতুয়া মহাসঙ্ঘের নেতাদের সঙ্গে।
পার্থবাবুর নাকতলার বাড়ির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের নদিয়া জেলা সভাপতি তথা তেহট্টের বিধায়ক গৌরীশঙ্কর দত্ত, যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি সত্যজিৎ বিশ্বাস, রানাঘাটের সাংসদ তাপস মণ্ডল এবং মতুয়া মহাসঙ্ঘের তিন নেতা খগেন বাড়ুই, প্রমথরঞ্জন বসু ও প্রভাস বিশ্বাস। তৃণমূল সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে পার্থবাবু নদিয়া জেলার নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে মাঠে শনিবার মুকুল, গিরিরাজরা সভা করেছেন, ওই মাঠেই নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জেলা তৃণমূলের তরফে পাল্টা সভা করতে হবে। আর এই দেখেই অনেকে মনে করছেন মাতুয়া সমাজের মধ্যে বিজেপি যে ভাবে হু হু করে ঢুকছে তাতে খানিকটা কাঁপুনিই ধরেছে শাসক দলের।
এমনিতেই নদিয়া জেলার নেতাদের মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে স্বয়ং দলনেত্রীই বিরক্ত। মাস কয়েক আগে বিধানসভায় নিজের ঘরে ডেকে মিটিংও করেছিলেন তাঁদের সঙ্গে। পষ্টাপষ্টি বলে দিয়েছিলেন এই কোন্দল বরদাস্ত করা হবে না। উল্টো দিকে বিজেপি-ও নদিয়ায় মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে চাইছে ভোট পর্যন্ত। মাস দুয়েক আগে বেথুয়াডহরিতে বিরাট জনসভা করেছিলেন মুকুল রায়। আর রাজনৈতিক মহলের মতে, নদিয়া এমন একটা জেলা যেখানে বিজেপি-র এমনিই একটা শক্তি রয়েছে। কারণ বাংলায় যখন বিজেপি-র ‘ব’ ছিল না, তখন কৃষ্ণনগরের মানুষ জলু মুখোপাধ্যায়কে জিতিয়ে লোকসভায় পাঠিয়েছিলেন। এর মধ্যে আবার মুকুল রায় এবং কৈলাস বিজয়বর্গীয়র ফাঁস হয়ে যাওয়া ফোনের কথোপকথনের অডিও টেপেও মতুয়া সমাজে সংগঠন বাড়ানো নিয়ে আলোচনা শোনা গিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, গত দুর্গানবমীর দিন বড়মা’র শততম জন্মদিন ছিল। ওইদিন ঠাকুরনগরের বাড়িতে গিয়ে কেক কেটে বীণাপাণিদেবীর জন্মদিন উদযাপন করেছেন খাদ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। আগামী ১৫ নভেম্বর সেখানে যাওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। তাই সব দেখেশুনে অনেকেই বলছেন, মতুয়া সমাজে গেরুয়া অনুপ্রবেশে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ কালীঘাটের আকাশে।
Be the first to comment