সামনেই পুরনির্বাচন শিলিগুড়িতে। হাতে গোনা আর মোটে কয়েকটা দিন। ইতিমধ্যেই নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়েছে উত্তরে। ভোটের মুখে এক তৃণমূল নেতার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অনুষ্ঠানে গিয়ে জামাকাপড় বিলি করা ও এলাকার একটি বালিকা বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ায় আদর্শ আচরণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগে শিলিগুড়ির বর্তমান পুরপ্রশাসক গৌতম দেবের বিরুদ্ধে কমিশনে নালিশ বিজেপির।
পদ্ম বিধায়ক ও আসন্ন পুরভোটের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী শঙ্কর ঘোষের অভিযোগ, গৌতম দলেরই এক নেতার সংগঠনে গিয়ে সেখানে কাপড়-জামা বিলি করছেন। দুঃস্থদের সঙ্গে কথা বলছেন। এলাকার বালিকা বিদ্যালয়ের একটি আভ্যন্তরীণ অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। যা মূলত নির্বাচনী বিধির বিরোধী।
শঙ্কর ঘোষের কথায়, “ভোটের আগে দলীয় প্রচার করা চলতে পারে। কিন্তু, এইভাবে জনসংযোগ করা যায় না। দলেরই নেতার সংগঠনে গিয়ে দুঃস্থদের কাপড়জামা দান করা বা স্কুলের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া…এসবই হল জোর করে জনসংযোগ ও জনভিত্তি তৈরির চেষ্টা। এই ধরনের আচরণ কাম্য নয়। তিনি আদর্শ আচরণ বিধি ভঙ্গ করেছেন। তাই আমরা নির্বাচন কমিশনে লিখিতভাবে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছে। নির্বাচনের পূর্বে কোনও প্রার্থী এভাবে কোনও জনসংযোগ করতে পারেন না।”
যদিও বিজেপির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গৌতম। তাঁর সাফ দাবি, তিনি এখনও মনোনয়ন পত্র জমা দেননি। তাই এখনও তিনি শিলিগুড়ির পুরপ্রশাসক পদেই বহাল রয়েছেন। গৌতমের কথায়, ” আমি কোনও নিয়ম ভঙ্গ করিনি। এখনও মনোনয়ন পত্র জমা দিইনি। ফলে এখনও আমি প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যানই রয়েছি। তাই আমি দুঃস্থদের জামাকাপড় দিয়েছি। আর স্কুলের অনুষ্ঠানে আমি আমন্ত্রিত ছিলাম। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেই ওই অনুষ্ঠানে আমি যোগ দিয়েছি।”
প্রসঙ্গত, শিলিগুড়ির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে পুরভোটে লড়বেন গৌতম। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। তারপর তাঁকে শিলিগুড়ি পুরপ্রশাসকের দায়িত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। এ বার পুরভোটে গৌতমকে টিকিট দেওয়ায় জল্পনা শিলিগুড়ির মেয়র পদপ্রার্থীর দৌড়ে বিজেপির শঙ্কর ঘোষ ও বামেদের অশোক ভট্টাচার্যের পাশেই থাকবেন তিনি।
শিলিগুড়িতে ভেঙেছে বাম-কংগ্রেস জোট। ২০ টি আসনে পৃথকভাবে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। অন্যদিকে, নিজেদের প্রার্থী তালিকা আংশিকভাবে প্রকাশ করেছে বাম শিবির। তালিকা প্রকাশকালে বাম শিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়, কংগ্রেসের জন্যই আসন ছেড়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু, শেষে পৃথকভাবে প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস। বামেদের তরফে দলের স্বার্থে অবসর ভেঙে ভোটে লড়তে চলেছেন সিপিএমের অশোক স্তম্ভ।
অন্যদিকে বিজেপির তরফে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তাঁর কথায়, “বামেরা প্রাসঙ্গিক নয়। লড়াই দেওয়ার ক্ষমতাও নেই। অশোক মডেল ফেলড। যারা আইএসএফের সঙ্গে একদা জোট করেছিল তাদের নীতি ঠিক নয়। আর তৃণমূলকে মানুষ ভোট দেবে না। আমরাই পৌরবোর্ড দখল করব”।
বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি। শঙ্কর, নান্টু ছাড়াও প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন শালিনী। সদ্য বাম শিবির ত্যাগ করে পদ্মে এসেই টিকিট পেয়েছেন শালিনী। অন্যদিকে, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বাম নেতা তথা বিদায়ী পুরবোর্ডের মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করেছে দলের সংখ্যালঘু মুখ নূরজাহান আনসারিকে
অন্যদিকে, তৃণমূলের তরফে গৌতম দেব বলেন, “অশোকবাবুরা নীতিহীন। ক্ষমতায় থাকতে এসব করছেন। কিন্তু উন্নয়নের প্রশ্নে এবার আমরা জিতব। আমাদের রিপোর্ড কার্ড দেখে মানুষ ভোট দেবে।”
সোমবারই রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাস সাংবাদিক বৈঠক করে ভোটের দিন ঘোষণা করেছেন। ২২ জানুয়ারি শিলিগুড়ি, বিধাননগর, আসানসোল, চন্দননগরে ভোট হচ্ছে। ২৫ জানুয়ারি ভোটের গণনা। শিলিগুড়িতে মোট ৪৭টি ওয়ার্ড। পোলিং স্টেশন ৪২১টি। ভোটার ৪,০২,৮৯৫।
Be the first to comment