দ্বন্দ্ব-বিতর্ক-জল্পনা অনেকটাই মাত্র একটি বৈঠকেই ইতি করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ গত ১২ ফেব্রুয়ারি শনিবার দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যদের নির্ধারণ করতে গিয়ে এক ঝাটকায় সকলকেই পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন মমতা। এবার আবার ঘর গোছানোর পালা ৷ শুক্রবার বিকেল তিনটে নাগাদ কালীঘাটে বসছে তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক। আপাতত সেই দিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল ৷ সকলেই জানতে আগ্রহী যে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ ফিরে পান কি না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়!
তৃণমূলে কালীঘাট বনাম ক্যামাক স্ট্রিটের দ্বন্দ্ব চলছে বলে সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন মহল থেকে শোনা যাচ্ছিল ৷ তা উপভোগ করছিল বিরোধীরা ৷ কিন্তু মাত্র একটি বৈঠকে এসব হইচই থামিয়ে দেন তৃণমূল নেত্রী ৷ তারপর জল্পনা থেমেছে ৷ মমতা ও অভিষেকের মধ্যে দ্বন্দ্বের তত্ত্ব বাংলার রাজনৈতিক মহলে ঘুরছিল, তাও আর নেই ৷
যদিও নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের তৃণমূলের সাংগঠনিক নির্বাচনের পর বক্তৃতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন জাতীয় কর্মসমিতির প্রথম বৈঠক হবে দিল্লিতে। তবে নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, সেই বৈঠক যে দিল্লিতে হচ্ছে না ৷ মনে করা হচ্ছে, এই বৈঠকে জাতীয় কর্মসমিতির সকল সদস্যই উপস্থিত থাকবেন।
এই মুহূর্তে তৃণমূলে সাংগঠনিক পদাধিকারী একজনই, তিনি চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার নেতাদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেবেন দলনেত্রী। কাকে কোন পদ দেওয়া হবে, তা শুক্রবারের বৈঠকেই ঠিক হবে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর ৷ এদিকে আগের বৈঠকে জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যদের বাছতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মী এবং প্রবীণ নেতাদের প্রতি আস্থা দেখিয়েছিলেন ৷
তাই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, সেই পন্থা কি পদ বণ্টনের ক্ষেত্রেও বজায় থাকবে? সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব আবার এককভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর ছেড়ে দেবেন কি মমতা? নাকি অন্য কোনও প্রবীণ নেতার সঙ্গে অভিষেককে যৌথভাবে দায়িত্ব দেওয়া হবে? তাছাড়া সার্বিকভাবে জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে আগামী দিনে কোন পথে তৃণমূল এগোবে তাও এই বৈঠক থেকেই নির্ধারিত হবে বলে খবর।
এদিকে বাকি ১০৮ পৌরসভায় তৃণমূল প্রার্থীদের হয়ে প্রচার যখন সপ্তমে, ঠিক তখন নির্দল হয়ে দাঁড়ানো তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। দলীয় সূত্রে খবর, যদিও এখন নতুন করে মনোনয়ন প্রত্যাহারের সুযোগ নেই, তবুও তৃণমূল কংগ্রেসে থাকা নির্দল প্রার্থীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভোট প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। এই নির্দেশের বিচ্যুতি হলেই দলের তরফ থেকে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে যারা দলকে উপেক্ষা করে করবে, তাদের বহিস্কৃত করতেও দ্বিধা করবে না তৃণমূল। এমনকী বহিষ্কৃতরা নির্বাচনে জিতলেও তাদের তৃণমূলে ফেরানো হবে না।
প্রসঙ্গত, তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা নিয়ে জেলায় জেলায় নাটকের পর প্রায় সব পৌরসভায় একাধিক ওয়ার্ডে কার্যত ২ জন করে তৃণমূল প্রার্থীরা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একজন তৃণমূলের ঘাসফুল প্রতীকে লড়াই করছেন ৷ আর একদল তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে কেউ জোড়া পাতা, আপেল, আবার টিউবওয়েল প্রতীক নিয়েই ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন।
Be the first to comment