অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায়
জন্ম: ১৩ অক্টোবর, ১৯১১
বিহার প্রদেশের ভাগলপুর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ছিলেন। জন্মকালীন তিনি কুমুদলাল গঙ্গোপাধ্যায় নামে পরিচিত ছিলেন ও নিজ বাড়িতে মজা করে তাঁকে দাদামণি নামে ডাকা হতো। ভারতীয় চলচ্চিত্র অঙ্গনে অশোক কুমার নিজেকে কিংবদন্তিতে পরিণত করেছেন। কিশোর অবস্থাতেই চলচ্চিত্র জীবনে অংশগ্রহণের স্বপ্ন দেখতেন।
বোম্বে টকিজের ল্যাবরেটরি সহকারীরূপে কাজ করেন তিনি। দেবিকা রানির সাথে অচ্যুত কন্যা শিরোনামীয় চলচ্চিত্রে অংশ নেন। ওই চলচ্চিত্রটি হিন্দি চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার অন্যতম ছিল। এরপর লীলা চিৎনিসের সাথে জুটি গড়ে সফলতা পান। কঙ্গণ, বন্ধন ও আজাদ চলচ্চিত্রে স্বতঃস্ফূর্ত সাফল্য আসায় অশোক কুমার জনপ্রিয় অভিনেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন স্ব-মহিমায়। ১৯৪১ সালে চিৎনিসের বিপরীতে মুক্তিপ্রাপ্ত জুলা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সর্বাপেক্ষা অর্থ সম্পদের মালিক হন তিনি।
জ্ঞান মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ১৯৪৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কিসমত চলচ্চিত্রে খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন ও প্রথম খলনায়ক হিসেবে ১ কোটি টাকা আয়ের মাধ্যমে বক্স অফিসের সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেন তিনি। এর ফলে ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্রথম সুপারস্টারের মর্যাদা পান। অশোকের জনপ্রিয়তায় রাস্তায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হতো ও সমর্থকদের সামাল দিতে পুলিশকে লাঠিপেটা করতে হয়।
বোম্বে টকিজের শেষদিকে ১৯৪৮ সালে জিদ্দিতে দেব আনন্দ ও প্রাণ, ১৯৪৭ সালে নীলকমলে রাজ কাপুরের অভিষেক এবং ১৯৪৯ সালে মধুবালার সাথে অভিনয় করেছেন তিনি। ১৯৫০-এর দশকে মিনা কুমারী ও নলিনী জয়ন্তের সাথে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ধূমপানরত অবস্থায় অপরাধী কিংবা পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে ১৯৫০-এর দশকের বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে তাঁকে দেখা যায় যা তৎকালীন ভারতীয় চলচ্চিত্র আন্দোলনের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল।
১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে স্বল্পসংখ্যক চলচ্চিত্রে অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়াও মাঝেমধ্যে টেলিভিশনে অংশগ্রহণ করতেন তিনি। তন্মধ্যে প্রথম ভারতীয় সোপ অপেরা হাম লোগে অংশগ্রহণ করতেন। অবিস্মরণীয় বাহাদুর শাহ জাফর ধারাবাহিকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অবতীর্ণ হন। ১৯৮০-এর দশকে টেলিভিশনে তাঁর অংশগ্রহণের বিষয়ে অদ্যাবধি আলাপ-আলোচনা হয়ে থাকে।
১৯৯৭ তিনি সর্বশেষ চলচ্চিত্র আঁখো মে তুম হোতে অভিনয় করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি চিত্র অঙ্কন করতেন তিনি। এ ছাড়াও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাকর্মে সম্পৃক্ত ছিলেন। সর্বমোট ২৭৫-এর অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ঢাকুরিয়ায় তিনি ৩০-এর অধিক নাটকেও অভিনয় করেন।
১০ ডিসেম্বর ২০০১ তারিখে ৯০ বছর বয়সে দেহাবসান ঘটে তাঁর। মুম্বইয়ের চেম্বার এলাকায় অবস্থিত নিজ বাসভবনে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী গভীর শোকপ্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন যে, তিনি অনেক প্রজন্মের অভিনেতাদেরকে অণুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।
জন্মদিনে রোজদিন-এর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা।
দিপালী গোয়েঙ্কা
জন্মদিন : ১৩ অক্টোবর ১৯৬৯
তিনি বিশ্বের সবথেকে বড়ো কাপড় প্রস্তুতকারক ওয়েলসপুন ইন্ডিয়া লিমিটেডের সিইও এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর। এ ছাড়াও তিনি মহিলাদের পক্ষ থেকে ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ায় চেম্বারস অব কমার্স FICCI FLO-র পরিচালন সমিতির সদস্য এবং FLO-র চেয়ারপার্সন (মুম্বাই)। দিপালী সাইকোলজিতে স্নাতক। তাঁর উদ্যোগেই ওয়েলসপুন খুচরো ব্যবসা আরম্ভ করে এবং যা পরে এক স্বতন্ত্র ব্যান্ডের রূপ নেয় SPACES Home & Beyond। CBSE বোর্ডের অধীনে ওয়েলসপুন বিদ্যামন্দির হাই স্কুল, ওয়েলসপুন অঙ্গনওয়াড়ি, আঙ্গরে প্রাক-প্রাথমিক স্কুল তাঁর উদ্যোগেই তৈরি হয়। তিনি জয়পুরী ঘরানার কত্থক নৃত্যে পারদর্শী। রোজদিন-এর পক্ষ থেকে জানাই শুভেচ্ছা।
মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল
মৃত্যুদিন : ১৩ অক্টোবর ১৯১১
মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল ২৮ অক্টোবর ১৮৬৭ সালে টাইরন, উত্তর আয়ারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন অ্যাংলো-আইরিশ বংশোদ্ভুত সমাজকর্মী, লেখিকা, শিক্ষিকা এবং স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্যা। ১৮৯৫ সালে লন্ডন শহরে তিনি স্বামী বিবেকানন্দের সাক্ষাৎ পান এবং ১৮৯৮ সালে ভারতে চলে আসেন। একই বছর ২৫ মার্চ তিনি ব্রহ্মচর্য গ্রহণ করলে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর নামকরণ করেন ‘নিবেদিতা’।
তিনি তাঁর পিতা স্যামুয়েল রিচমন্ড নোবেলের নিকট এই শিক্ষা পান যে, মানব সেবাই ঈশ্বর সেবা। তিনি সংগীত ও শিল্পকলার বোদ্ধা ছিলেন। পড়াশোনা শেষ করে ১৮৮৪ সাল থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত দশ বছর তিনি শিক্ষকতা করেন। শিক্ষিকা হিসেবে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। শিক্ষকতা করতে করতেই তিনি বুদ্ধের শিক্ষা সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এই সময়ই স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। তিনিই প্রথম পাশ্চাত্য নারী যিনি ভারতীয় সন্ন্যাসিনীর ব্রত গ্রহণ করেছিলেন। ভগিনী নিবেদিতার বইগুলির মধ্যে দ্য ওয়েব অফ ইন্ডিয়ান লাইফ, মাতৃরূপা কালী, স্বামীজিকে যেরূপ দেখিয়াছি, স্বামীজির সহিত হিমালয়ে, ক্রেডল টেলস অফ হিন্দুইজম, স্টাডিজ ফ্রম অ্যান ইস্টার্ন হোম, সিভিল আইডিয়াল অ্যান্ড ইন্ডিয়ান ন্যাশানালিটি, হিন্টস অন ন্যাশানাল এডুকেশন ইন ইন্ডিয়া, গ্লিম্পসেস অফ ফেমিন অ্যান্ড ফ্লাড ইন ইস্ট বেঙ্গল – ১৯০৬ উল্লেখযোগ্য। ১৮৯৮ সালের নভেম্বর মাসে তিনি কলকাতায় একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এর পাশাপাশি তিনি নানা মানবকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সকল বর্ণের ভারতীয় নারীর জীবনযাত্রার উন্নতির লক্ষ্যে তিনি কাজ শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বসু ও তাঁর স্ত্রী অবলা বসু, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ওকাকুরা কাকুজো প্রমুখ তৎকালীন সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছিলেন নিবেদিতার বন্ধুস্থানীয়। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে ‘লোকমাতা’ আখ্যা দেন।
১৯১১ সালে আজকের দিনে মাত্র ৪৩ বছর বয়সে (দার্জিলিং, বাংলা প্রেসিডেন্সি ব্রিটিশ ভারতে) (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ,) তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রোজদিন-এর পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি জানাই শ্রদ্ধা।
কিশোর কুমার
মৃত্যুদিন : ১৩ অক্টোবর ১৯৮৭
চলে গেছে দিন তবু আলো রয়ে গেছে….
তিনি ছিলেন গায়ক, গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, স্ক্রিপ্ট লেখক, চিত্রনাট্য লেখক এবং রেকর্ড প্রযোজক। ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের সর্বাধিক সফল এবং সর্বশ্রেষ্ঠ প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে বিবেচিত তিনি— কিশোর কুমার গাঙ্গুলি। বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে বাংলা, হিন্দি, মারাঠি, অসমিয়া, গুজরাটি, কন্নড়, ভোজপুরি, মালায়লম, ওড়িয়া, এবং উর্দু প্রভৃতি। তিনি ৮ বার শ্রেষ্ঠ পুরুষ নেপথ্য গায়কের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছেন এবং একই বিভাগে সর্বাধিক ফিল্মফেয়ার পুরস্কার বিজয়ের রেকর্ড করেছেন।
অভিনেতা হিসেবেও তার সুখ্যাতি কম নয়; বাপ রে বাপ (১৯৫৫), চলতি কা নাম গাড়ি (১৯৫৮), হাফ টিকিট (১৯৬২), পড়োশন (১৯৬৮), হাঙ্গামা (১৯৭১), পেয়ার দিবানা (১৯৭৩), বাড়তি কা নাম দাড়ি (১৯৭৪)। এ ছাড়াও নোকরি, বন্দি, দূর গগন কি ছাঁও মে, দূর কা রাহি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেন। তাঁর প্লেব্যাক করা বাংলা ছবিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অমরকন্টক, আশ্রিতা, অনিন্দিতা, অমর সঙ্গী, কবিতা, গুরুদক্ষিণা, জীবন মরণ, জ্যোতি, তুমি কত সুন্দর, দোলন চাঁপা, পাপ পুণ্য, বান্ধবী, মিলন তিথি, মোহনার দিকে, সঙ্কল্প, সুরের আকাশে প্রভৃতি। তাঁর জনপ্রিয় বাংলা গানগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— আমার মনের এই ময়ূর মহলে, আমার পূজার ফুল, এক পলকের একটু দেখা, এ আমার গুরুদক্ষিণা, একদিন পাখি উড়ে যাবে যে আকাশে, এই যে নদী, এই তো জীবন- হিংসা বিবাদ লোভ হোক বিদ্বেষ, হাওয়া মেঘ সরায়ে, কি আশায় বাঁধি খেলাঘর, কি উপহার সাজিয়ে দেব, তোমায় পড়েছে মনে, নীল নীল আকাশে, প্রেমের খেলা কে বুঝিতে পারে, শুনো শুনো গো সবে— এ ছাড়াও রয়েছে আরও বহু গান। ১৯৮৭ সালে আজকের দিনেই ৫৮ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এই ভারতের এই জনপ্রিয় শিল্পীর মৃত্যু ঘটে। রোজদিন-এর পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি জানাই শ্রদ্ধা।
তথ্য সংগ্রহ : মাসানুর রহমান
ইলা মিত্র
মৃত্যুদিন : ১৩ অক্টোবর ২০০২
ইলা মিত্র ১৮ অক্টোবর, ১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন বাঙালি মহিয়সী নারী এবং সংগ্রামী কৃষক নেতা। বাংলার শোষিত ও বঞ্চিত কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি সংগ্রাম করেছেন, ভোগ করেছেন অমানুষিক নির্যাতন। বেথুন কলেজে বাংলা সাহিত্যে বি.এ সম্মানের ছাত্রী তখন থেকেই রাজনীতির সাথে পরিচয় ঘটে। নারী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনীতিতে প্রবেশ। ইলা সেন কলকাতা মহিলা সমিতির সদস্য ছিলেন। হিন্দু কোড বিলের বিরুদ্ধে মহিলা সমিতির আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি নামক সংগঠনের মাধ্যমে নারী আন্দোলনের এই কাজ করতে করতে তিনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করেন।
১৯৪৫ সালে ইলা সেনের বিয়ে হয় দেশকর্মী কমিউনিস্ট রমেন্দ্র মিত্রের সাথে। বিয়ের পর বেথুনের তুখোর ছাত্রী ইলা সেন হলেন জমিদার পুত্রবধু ইলা মিত্র। হিন্দু রক্ষণশীল জমিদার পরিবারের নিয়মানুসারে অন্দরমহলেই থাকতেন ইলা মিত্র। কিন্তু গ্রামের সবাই দাবি জানালেন তাঁদের নিরক্ষর মেয়েদের লেখাপড়া শেখাবার দায়িত্ব নিতে হবে বধুমাতা ইলা মিত্রকে। মাত্র তিনজন ছাত্রী নিয়ে স্কুলটি শুরু হলেও ইলা মিত্রের আন্তরিক পরিচালনায় তিন মাসের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০-এ। এভাবেই তিনি হয়ে ওঠেন এলাকার রানীমা। রমেন্দ্র মিত্র, ইলা মিত্রকে তাঁদের কাজে যোগ দিতে উৎসাহিত করেন। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত রাজশাহীর নবাবগঞ্জ অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন ইলা মিত্র।
২০০২ সালের আজকের দিনেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রোজদিন পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।
Be the first to comment