জন লেনন
জন্মদিন : ৯ অক্টোবর ১৯৪০, স্থান- লিভারপুল, ইংল্যান্ড
বিটল-স্টার জন উইনস্টন লেনন-এর খ্যাতি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে সুবিদিত। তিনি শুধুমাত্র যে ব্যান্ডের গায়ক ছিলেন তা নয়, তিনি ছিলেন একাধারে গীতিকার, সুরকার, গায়ক। সবথেকে বড়ো কথা হলো তিনি একজন সমাজকর্মী। তাঁর প্রত্যেকটি গানই ছিল জীবনের গান। সমাজের নানা বিষয় প্রতিফলিত হতো তাঁর গানের মধ্য দিয়ে। তাঁর বিখ্যাত গানগুলির মধ্যে অন্যতম হলো ‘গিভ পিস এ টার্ন’, ‘ওয়ার্কিং ক্লাস হিরো’ ও ‘ইমাজিন’। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন বিদ্রোহী প্রকৃতির। গান, লেখা, আঁকা, অর্থাৎ তাঁর সকল সৃষ্টিকর্মে ঘটত প্রতিফলন। অথচ তিনি সবসময় শান্তির পক্ষেই সওয়াল করতেন। পরবর্তীকালে তিনি লন্ডন থেকে ম্যানহাটনে আসেন। তিনি দু-বার বিবাহ করেন এবং তাঁর দুই সন্তান ছিল। ৮ ডিসেম্বর ১৯৮০ নিউইয়র্কের ম্যানহটনে মাত্র ৪০ বছর বয়সে গুলি করে হত্যা করা হয় জন লেনন-কে। যদিও তাঁর সংগীত আজও অমর হয়ে রয়েছে বিশ্ববাসীর কাছে। আজ তাঁর জন্মদিন। তাঁকে রোজদিন জানায় স্যালুট।
আমজাদ আলি খান
জন্মদিন : ৯ অক্টোবর ১৯৪৫, স্থান- গোয়ালিয়র
তাঁর প্রকৃত নাম ছিল মাসুম আলি খান। এই প্রখ্যাত সরদশিল্পী ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে বিবেচিত হন। মার্গ সংগীতের ঘরানার সুযোগ্য উত্তরাধিকারী তিনি। তাঁর পিতা হাফিজ আলি খান এবং মা রাহাত জাহানও শাস্ত্রীয় সংগীতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বলা হয় যে, তাঁর পূর্বপুরুষই সরোদ-এর আবিষ্কারক। প্রথম জীবনে তিনি বাবার কাছেই সংগীত শিক্ষা নেন। পরবর্তীকালে পিতার কর্মসূত্রে দিল্লিতে আসেন। দিল্লির মডার্ন স্কুলে তিনি পড়াশোনা করেন। সঙ্গে চলে সরোদ শিক্ষা ও চর্চা। দেশে-বিদেশ বহু জায়গায় সরোদ-এর সুরের মূর্ছনায় মোহিত করেছেন। ১৯৬৩ সালে আমেরিকাতে প্রথম তাঁর সংগীতের অনুষ্ঠান করেন। ২০০০ সাল অবধি মানুষকে সুরমূর্ছনায় মুগ্ধ করেন তিনি। দুই পুত্র আয়ান ও আমান পিতার সুযোগ্য উত্তরাধিকারী। বহু পুরস্কার ও সম্মানে তিনি ভূষিত হয়েছেন। পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রী, রাজীব গান্ধী সদ্ভাবনা পুরস্কার, সংগীত-নাটক আকাডেমি পুরস্কার—এ ছাড়া আমেরিকা, ইউরোপ, জাপান-সহ বিভিন্ন দেশের বহু স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন। তিনি সরোদের শিক্ষাও দিচ্ছেন বহু তরুণ শিল্পীকে। আমেরিকার স্টান্ড ফোর্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীরা তাঁর শিক্ষালাভে ঋদ্ধ হচ্ছেন। আমজাদ আলি খান-কে নিয়ে বহু ডকুমেন্টরি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে গুলজার নির্মিত ডকুমেন্টরিটি ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পায়। আজ তাঁর জন্মদিন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তাঁর জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। রোজদিন এই কিংবদন্তি সরোদবাদকের দীর্ঘ সুস্থ জীবন কামনা করে এবং শুভেচ্ছা জানায়।
গুরু রামদাস
জন্মদিন : ৯ অক্টোবর ১৫৩৪, স্থান- লাহোর, পাকিস্তান
শিখ ধর্মের দশ জন গুরুর মধ্যে চতুর্থ গুরু ছিলেন বাবা রামদাস। ১৫৩৪ সালের এই দিনে এক লাহোরের এক দরিদ্র হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম জীবনে তাঁর নাম ছিল জেঠা। মাত্র ৭ বছর বয়সেই তিনি বাবা-মাকে হারান। তারপর গ্রামে মামার বাড়িতে তিনি বড়ো হন। তাঁকেই অমৃতসর শহরের প্রতিষ্ঠাতা বলে গণ্য করা হয়। জীবনে বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। তিনি বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন এবং তাঁদের তিন পুত্র ছিল। তিনি প্রথম যে শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার নাম ছিল রামদাসপুর, যা পরে অমৃতসর নামে খ্যাতি লাভ করে। শুধু অমৃতসর শহরের প্রতিষ্ঠাই নয়, তাঁকে স্মরণ করা হয় এই জন্য, তিনি শিখ আন্দোলনকে একটা গতি দেন। ১ সেপ্টেম্বর ১৫৮১ গুরু রামদাস পাঞ্জাবের অমৃতসরে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজও তাঁর নাম শিখধর্মাবলম্বীরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। রোজদিন-এর পক্ষ থেকে তাঁর জন্মদিনে শ্রদ্ধা।
সুমিতা সান্যাল
জন্মদিন : ৯ অক্টোবর ১৯৪৫, স্থান- দার্জিলিং
প্রথম জীবনে তাঁর নাম ছিল মঞ্জুলা সান্যাল। বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর অসামান্য অভিনয়ের জন্য দর্শকরা আজও তাঁকে মনে রেখেছেন। ১৯৬৩-২০১৭ তিনি বহু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। অগ্রদূতের বিভূতি লাহা মঞ্জুলা থেকে তাঁর নাম রেখেছিলেন সুচরিতা। তিনি অগ্রদূত পরিচালিত ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ ছবিতে অভিনয় করেন। পরে চিত্রপরিচালক কনক মুখোপাধ্যায় তাঁর নাম রাখেন সুমিতা। তিনি ৪০টিরও বেশি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। কখনও সাগিনা মাহাতো-তে দিলীপকুমারের বিপরীতে, কখনও কুহেলি-তে বিশ্বজিৎ এবং সন্ধ্যা রায়ের সঙ্গে—এই রকম বহু বাংলা চলচ্চিত্রে তিনি তাঁর প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। বেশ কিছু হিন্দি ফিল্মেও অভিনয় করেছেন। যার মধ্যে ১৯৭০ সালে অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে ‘আনন্দ’ ছবিতে অভিনয় করেন। সুমিতা ছোটো পর্দাতেও ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। টিভি সিরিয়াল, টেলি ফিল্ম প্রভৃতিতেও তিনি অভিনয় করেন। তবে নাটকে অর্থাৎ মঞ্চে তাঁর অভিনয় দর্শক মনে রাখবে বহুদিন। ৯ জুলাই ২০১৭ তিনি প্রয়াত হন। রোজদিন-এর পক্ষ থেকে তাঁর জন্মদিনে জানাই শ্রদ্ধা।
সরোজ নলিনী দত্ত
জন্মদিন : ৯ অক্টোবর ১৮৮৭, স্থান- ব্যাণ্ডেল, হুগলি
পরাধীন ভারতে সমাজসংস্কারক ও নারীবাদী হিসেবে সরোজ নলিনী দত্ত বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। তাঁর স্বামী গুরুসদয় দত্তের তিনি ছিলেন যোগ্য সহধর্মিনী। সমাজসংস্কারক হিসেবে তাঁর খ্যাতি, বিশেষত মহিলাদের সামাজিক অত্যাচার থেকে মুক্তির দিশা দেখানোর কাজে তাঁর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। মহিলা সমিতি এই ধারণাটি বাংলায় প্রথম আনেন সরোজ নলিনী দত্ত। ১৯১৩ সালে পাবনায় তিনি প্রথম মহিলা সমিতি গঠন করেন। পরে বীরভূম, সুলতানপুর, রামপুরহাট প্রভৃতি জায়গায় মহিলা সমিতির প্রসার ঘটান। নারী শিক্ষা বিস্তারেও তাঁর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কমিটি মেম্বার ছিলেন তিনি। এর মাধ্যমেও তিনি মহিলাদের উন্নয়নে বহমুখী প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর একমাত্র পুত্র বীরেন্দ্রসদয় দত্ত। ১৯২৫ সালের ১৯ জানুয়ারি মাত্র ৩৭ বছর বয়সে এই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারিনী সরোজ নলিনী দত্তর জীবনাবসান হয়। আজ তাঁর জন্মদিন। রোজদিন-এর পক্ষ থেকে জানাই শ্রদ্ধা।
চে গুয়েভারা
মৃত্যুদিন : ৯ অক্টোবর ১৯৬৭, স্থান- লা হিগুয়েরা
আর্নেস্টো চে গুয়েভারা জন্মেছিলেন আর্জেন্টিনায় ১৯২৮ সালের ১৪ জুন। অবশ্য এই মহান বিপ্লবী দেশ-কালের সীমারেখা ছাড়িয়ে সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাছে আদর্শ হিসেবে আজও সমাদৃত। পেশায় চে ছিলেন একজন ডাক্তার। ছাত্রাবস্থাতেই চে পুরো সাউথ আমেরিকা পরিভ্রমণ করেন এবং দারিদ্র্য, ক্ষুধা, পীড়া—সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করেন। তখন থেকেই তাঁর মনে সমাজের এই রোগ সারাবার চিন্তাভাবনার জন্ম নেয়। বুর্জোয়া পুঁজিপতিদের চরম শোষণ থেকে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলির মানুষকে মুক্তি দেওয়ার কাজে নেমে পড়েন। গুয়েতেমালায় সামাজিক সংস্কারে সরাসরি আত্মনিয়োগ করেন তিনি। পরবর্তীতে মেক্সিসো সিটি দেখা হয় ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে। এই জুটি বিপ্লবের মুখ হিসেবে বিবেচিত হতেন। তাঁরা কিউবা স্বৈরচারী শাসক বাতিস্তার হাত থেকে মুক্ত করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। গেরিলা কায়দায় তাঁরা বাতিস্তা সাম্রাজ্যের পতন ঘটান। কিউবার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার পর চে গুয়েভারা নতুন সরকারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। তাঁর দুই স্ত্রী—হিলদা ও এলাইদা। পাঁচ সন্তান — হিলদা, এলাইদা, ক্যামিলো, সিলিয়া, আর্নেস্টো।
এর পাশাপাশি গুয়েভারা ছিলেন বিশ্বপথিক। একজন বিশিষ্ট লেখকও। তাঁর বলিভিয়ার ডায়েরি বিশ্ব সাহিত্যের এক উল্লেখযোগ্য সম্পদ। এই কমিউনিস্ট নেতা তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলির মুক্তির কথা সারা জীবন চিন্তা করে গেছেন। ১৯৬৫ সালে তিনি কিউবা ত্যাগ করেন। প্রথমে যান কঙ্গো। তারপর বলিভিয়া। বলিভিয়াতেই সিআইএ সাহায্যপ্রাপ্ত বলিভিয়ান ফোর্সের কাছে ধরা পড়েন। চরম অত্যাচারের পর চে-কে গুলি করে হত্যা করা হয়। চে গুয়েভারার মৃত্যুদিনে তাঁকে জানাই স্যালুট।
কাঁসিরাম
মৃত্যুদিন : ৯ অক্টোবর
কাঁসিরামের প্রথম জীবনে নাম ছিল বহুজন নায়ক বা সাহেব। ১৯৩৪ সালের ১৫ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন তাই নয়, ভারতবর্ষের সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অস্বীকার করা যায় না। বিশেষ করে জাতপাতের রাজনীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে তিনি অস্পৃশ্য বহুজনদের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদানে এক অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। তারই ফলস্বরূপ ১৯৭১ সালে বিএএমসিইএফ, পরে ১৯৮৪ বহুজন সমাজ পার্টি জন্ম নেয়। স্বাভাবিকভাবেই তিনিই ছিলেন বিএসপির জাতীয় সভাপতি এবং প্রতিষ্ঠাতা কর্ণধার। ১৪ এপ্রিল ১৯৮৪ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় সভাপতি ছিলেন। তিনি হোসিয়ারপুর থেকে সাংসদ হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ইটাওয়া থেকেও সাংসদ নির্বাচিত হন। তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তিনি মায়াবতীকে তৈরি করে যান। ৯ অক্টোবর ২০০৬ নতুন দিল্লিতে ৭২ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুদিন তাঁকে জানাই আমাদের শ্রদ্ধা।
Be the first to comment