রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা :- টানা ১৬ ঘণ্টার জেরা। তারপরেই তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হল শাসকদলেরই ইংরেজবাজার শহর সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারিকে। গ্রেফতার করা হয়েছে স্বপন শর্মা নামে আরও একজনকে। এই স্বপন শর্মা বাম আমলের ত্রাস হিসাবেই চিহ্নিত। ধৃত দু’জনকেই বুধবার মালদা জেলা আদালতে পেশ করা হয়। এই নিয়ে মামলায় এখনও পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেফতার করা হল।
গত ২ জানুয়ারি দুষ্কৃতীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। তাঁর খুনের ঘটনায় পুলিশকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘটনার দিনই ঝাড়খণ্ডে পালানোর সময় মানিকচকে গঙ্গার ঘাটে গ্রেফতার করা হয় শামি আখতার ও টিংকু ঘোষ নামে দুই দুষ্কৃতীকে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অভিজিৎ ঘোষ আর অমিত রজক নামে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এরপর বিহারের কাটিহার জেলার শালমারা থেকে গ্রেফতার করা হয় আবদুল গনি নামে আরও এক শার্প শ্যুটারকে। জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, তাঁদের এই কাজে নিয়োগ করেছিলেন কৃষ্ণ রজক ওরফে রোহন। তিনি এখনও পলাতক। পলাতক এই ঘটনায় আরেক চক্রী বাবলু যাদবও। তাঁদের খোঁজ পেতে প্রত্যেকের জন্য দু’লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করেছে জেলা পুলিশ। কিন্তু পাঁচজনের গ্রেফতারির পরও প্রশ্ন ছিল, এই খুনের পিছনে আসল মুখ কে বা কারা? প্রয়াত নেতার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে এসে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও। সূত্রে খবর, এক্ষেত্রে পুলিশের সন্দেহের তালিকায় রয়েছে বেশ কয়েকটি নাম। সেই তালিকা থেকেই মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইংরেজবাজার থানায় ডেকে পাঠানো হয় শহর তৃণমূলের সভাপতি তথা দলের হিন্দি সেলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি-সহ তাঁর দুই ভাই বীরেন্দ্রনাথ ও অখিলেশকে।
বেলা দুটো নাগাদ থানায় উপস্থিত হন তিন ভাই ৷ বীরেন্দ্রনাথকেই প্রথমে জেরা করা হয়। বিকেল পাঁচটা নাগাদ নরেন্দ্রনাথ ও অখিলেশকে জেরা শুরু করেন পুলিশকর্তারা। প্রথমে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) আবু বক্কর, তারপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সম্ভব জৈন তাঁদের জেরা করেন। সঙ্গে ছিলেন অন্যান্য পুলিশ অফিসাররাও। রাত পৌনে দশটা নাগাদ থানায় ঢোকেন পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব। জেরা শুরু করেন তিনি। রাতেই থানায় নিয়ে আসা হয় স্বপন শর্মাকে।
বুধবার সকাল পৌনে ন’টা পর্যন্ত টানা জেরার পর থানা থেকে বেরিয়ে যান তিনি। অবশেষে সকাল ১০টা নাগাদ জেলা পুলিশের তরফে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, দুলাল সরকার খুনের ঘটনায় নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ও স্বপন শর্মাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত দু’জনকে এদিনই জেলা আদালতে পেশ করা হয়।
জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গতকাল রাতে নরেন্দ্রনাথকে শুধু একা নন, এই ঘটনায় আগে ধৃত দুই দুষ্কৃতী অমিত রজক ও শামি আখতারকে মুখোমুখি বসিয়েও জেরা করা হয়। অমিত রজকের পরিবার নরেন্দ্রনাথের পূর্ব পরিচিত। জেরায় বেরিয়ে আসে স্বপন শর্মার নাম।
বাম আমলে মালদার ত্রাস হিসাবে তিনি কুখ্যাত। একাধিক খুনের আসামি। এখন অবশ্য ধর্মকর্ম নিয়ে তাঁকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। তাঁকেও থানায় নিয়ে আসা হয়। দীর্ঘ জেরায় একসময় ভেঙে পড়েন নরেন্দ্রনাথ ও স্বপন। এই ঘটনায় নিজেদের যোগের কথা স্বীকার করে নেন। তারপরেই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু পুলিশের একাংশের বদ্ধমূল ধারণা, শুধু এই দু’জনই এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত নন। এই ঘটনার পিছনে আরও মুখ রয়েছে। সেই মুখগুলির মুখোশ খোলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এদিকে গ্রেফতারির পর শারীরিক পরীক্ষা করানোর জন্য মালদা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পথে নরেন্দ্রনাথ দাবি করেন, “আমি চক্রান্তের শিকার। বড় মাথার শিকার হলাম। বাবলাও সেই বড় মাথার শিকার হয়েছে, আমিও হলাম।” অন্যদিকে স্বপন শর্মা বলেন, “আমি কিছুই জানি না। দোকান থেকে আমাকে তুলে আনা হয়েছে।”
Be the first to comment