
রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা:- রাত পোহালেই কলকাতার নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের মেগা সাংগঠনিক সভা। ২৬শের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের হাই কমান্ড কি দিকনির্দেশ করবেন, তা শুনতে ইতিমধ্যেই জেলা থেকে শহরে এসে পৌঁছাচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে নেত্রী কি বার্তা দেন সেদিকেই নজর তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। ইনডোর স্টেডিয়ামে রাজ্য কনভেনশনের বক্তব্য যাতে বুথ স্তরের দলীয় কর্মীরাও দেখতে পান তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সাংসদ থেকে পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি সমস্ত শাখা সংগঠনের জেলা পর্যায়ের নেতৃত্ব ইনডোরে আসছেন। সব মিলিয়ে ১৯ হাজারের বেশি প্রতিনিধি উপস্থিত হবেন আগামীকালের এই রাজ্য সম্মেলনে। তাই ইনডোরের চারপাশ ও ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র ঘিরে ২০টির বেশি জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো হচ্ছে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, শুধু ইনডোর নয়, রাজ্যের প্রতিটি জেলা, মহকুমা ও ব্লক স্তরের তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়েও নেত্রীর বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচারিত হবে। জেলা নেতৃত্বরা উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয় কর্মীদের একত্রিত করে জায়ান্ট স্ক্রিনের মাধ্যমে এই বক্তব্য পৌঁছে দেবেন বলে জানা গিয়েছে। মূল লক্ষ্য, দলীয় বার্তা সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিয়ে কর্মীদের উজ্জীবিত করা। সকাল ১১টায় প্রতিনিধি সম্মেলন শুরু হবে, দুপুরেই নেত্রীর বক্তব্য দিয়েই শেষ হবে সম্মেলন। মূল লক্ষ্য, দূরের জেলা থেকে আসা প্রতিনিধিরা যাতে ওই দিনই বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। এখন চলছে শেষমুহূর্তের খুঁটিনাটি দেখে নেওয়া।
বুধবার দফায় দফায় নেতাজি ইনডোর ঘুরে দেখেছেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ, স্বরূপ বিশ্বাস-সহ অন্যরা। যেহেতু মুখ্যমন্ত্রী-সহ অনেক মন্ত্রী ও নেতা থাকবেন তাই ইনডোরের নিরাপত্তার দিকটিও বিশেষ নজরে রাখা হয়েছে। এদিন তৃণমূল ভবনেও প্রস্তুতি চলেছে সমানতালে। সেখানে জেলা থেকে আসা নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, ডেলিগেট কার্ড বিলি করেছেন দলীয় নেতৃত্ব।
জানা যাচ্ছে, রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই মঞ্চ ও আসন বিন্যাস সম্পন্ন হয়েছে । সাংসদ, বিধায়ক, জেলা সভাপতি, যুব, মহিলা, আইএনটিটিইউসি, কিষাণ খেতমজুর সেল, সংখ্যালঘু সেল, এসসি-এসটি-ওবিসি সেল-সহ সমস্ত শাখা সংগঠনের নেতৃত্বকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়া, তৃণমূল কংগ্রেসের মিডিয়া সেল ও আইটি সেল-সহ রাজ্য কমিটির সদস্যরা প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেবেন।
উল্লেখ্য, নেতাজি ইন্ডোরে মেরেকেটে ১৩ হাজার লোক ধরে। সেক্ষেত্রে স্টেডিয়াম উপচে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন জোড়াফুলের একাধিক নেতা। এই পরিস্থিতিতে শাখা সংগঠনের প্রতিনিধিদের জন্য দরকার হলে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে বসার ব্যবস্থা করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
এই মেগা সম্মেলন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে কী রোডম্যাপ তুলে ধরেন, সেই দিকে এখন তাকিয়ে রয়েছেন তৃণমূলের নেতারা। কিন্তু সাংগঠনিক রদবদল কতটা হবে, কোন স্তরে হবে, বা আদৌ হবে কি না— জোড়াফুলের নেতাদের মধ্যে এমন অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সাংগঠনিক দায়িত্ব থাকা তৃণমূলের প্রথম সারির এক সাংসদের কথায়, ‘এই সভায় সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বদল হবে বলে মনে হচ্ছে না। রাজ্য কমিটি স্তরে হয়তো কিছু সংযোজন–বিয়োজন হতে পারে।’ তৃণমূলের শাখা সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা এক পোড়খাওয়া নেতার বক্তব্য, ‘ফ্রন্টাল অর্গানাইজে়শনে অদলবদল হবে বলে অনেক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু নেতাজি ইন্ডোরে হবে কি না, এখনও স্পষ্ট নয়।’
অন্যদিকে, এই সভাতে অভিষেকের উপস্থিতি নিয়ে দলের অন্দরে চাপা গুঞ্জন তৈরী হয়েছিল। তার নির্দিষ্ট কিছু কারণও আছে। আসলে বিগত কয়েক মাস ধরে শোনা গিয়েছে একাধিক বিষয়ে মমতা ও অভিষেকের মতপার্থক্যের কথাও। উল্লেখ্য একুশের ভোটের পর থেকে অভিষেক এক হাতেই সংগঠনের দায়িত্ব সামলে ছিলেন। যদিও আরজি কর কাণ্ডের পর নিজের মুখে খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো জানিয়েছিলেন, তিনিই দলের শেষ কথা। তিনিই দল চালাবেন। তবে সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরের মেগা বৈঠকে একই মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন মমতা-অভিষেক। জানা যাচ্ছে, তাঁদের দুজনের জন্য নাকি দুটি ফুলের তোড়ার আয়োজন করতে বলা হয়েছে। অতএব, সব মিলিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মেগা সম্মেলনকে ঘিরে উত্তেজনায় ফুটছেন দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা।
Be the first to comment