
রোজদিন ডেস্ক, কলকাতা:- দেহ উদ্ধারের পর থেকেই সন্দেহ ছড়াচ্ছিল। খুনের অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর সেই সন্দেহ আরও ঘণীভূত হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর দেখা গেল সেই সন্দেহই কার্যত সত্যি হল।খুনই করা হয়েছে ট্যাংরার রোমি দে, সুদেষ্ণা দে ও এক নাবালিকাকে।
বুধবার সকালে ট্যাংরা থানা এলাকার বাড়ি থেকে তিনজনের দেহ উদ্ধার হয়। সেই তিনজন রোমি-সুদেষ্ণা ও এক নাবালিকার দেহের ময়নাতদন্ত হয় বৃহস্পতিবার। সেখানে ওই নাবালিকার শরীরে বিষ পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান (জয়েন্ট সিপি-ক্রাইম) রূপেশ কুমার। তিনি বলেন, “ওই নাবালিকার শরীরে বিষ মিলেছে।’’
কলকাতা পুলিশের তরফে জানা গিয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী রোমির দুই হাতের কবজির শিরা কাটা ছিল। তাঁর গলা বাঁদিক থেকে ডানদিকে কাটা হয়। রোমির হাতের শিরা যখন কাটা হয়, তখন তিনি বেঁচেছিলেন। সুদেষ্ণাকেও একইভাবে হত্যা করা হয়।
অন্যদিকে নিহত নাবালিকার বুক, দুই পা, ঠোঁট-সহ বিভিন্ন অংশে বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। মাথাতেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পাকস্থলিতেও রক্তক্ষরণের প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া পাকস্থলিতে সামান্য পরিমাণে আংশিকভাবে হজম হওয়া খাবার, হলুদ ও সাদা দানাজাতীয় পদার্থ মিলেছে। যার গন্ধ অনেকটা ওষুধের মতো।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ছাড়াও ফরেনসিক তদন্তেও একাধিক তথ্য উঠে এসেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই বাড়ি থেকে রক্তমাখা জামাকাপড় উদ্ধার হয়েছে। বেসিনে রক্তের দাগ পাওয়া গিয়েছে। ফলে তদন্তকারীদের অনুমান, ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়। তার পর রক্তমাখা জামাকাপড় বাড়িতে রেখে সাফসুতরো হয়ে বেরিয়ে যান।
এখন প্রশ্ন হল, খুন কে করল? আপাতত এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। সন্দেহের তির প্রাথমিকভাবে দুই ভাই প্রণয় দে ও প্রসূন দের উপরই রয়েছে। কারণ, আত্মহত্যার যে তত্ত্ব বুধবার পুলিশকে দিয়েছিলেন এই দুই ভাই, তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর অনেকটাই ভুল বলেই মনে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দে পরিবারের গাড়ির চালক কৈলাস দাসের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। তারপরই তদন্তকারীদের ধারণা, পুরো ঘটনাই পূর্ব পরিকল্পতি। কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দাদের কৈলাস কী জানিয়েছেন? পুলিশ সূত্রে খবর, কৈলাস সোমবার শেষবার ডিউটিতে এসেছিলেন। সকালে বাচ্চাদের স্কুলে ছেড়ে আসেন। পরে সন্ধ্যায় টিউশনে ছেড়ে আসতে যান তিনি। পরে তিনি বাড়ি চলে আসেন।
কৈলাস আরও জানিয়েছেন পুলিশকে, মঙ্গলবার তাঁকে আসতে বারণ করা হয়। কৈলাস সাড়ে ১৫ হাজার টাকা বেতন পেতেন। সেই টাকা পেতেও এতদিন কোনও সমস্যা হয়নি। এছাড়াও দে পরিবারের কারখানার কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলে আর্থিক অনটনের বিষয়ে কোনও তথ্য মেলেনি। ফলে ঋণের যে বিষয়টি বুধবার সামনে এসেছিল, সেটাও সঠিক নয় বলে মনে করছেন তদন্তকারী অফিসাররা।
Be the first to comment