কৃষ্ণকলি
আজ কি আমার শেষ জন্মদিন? ঠাকুরকে প্রণাম করতে করতে প্রশ্ন করে ইচ্ছে। বাবা, মা আদর করে নাম রেখেছিলো ইচ্ছামতী। শ্বশুরবাড়িতে এসে নাম হয়েছে ইচ্ছে। আজ নামটা নিয়ে নিজেকে উপহাস করতে ইচ্ছে হয়। কারোর ইচ্ছাই পূর্ণ করতে পারলো না সে। দুটো কিডনিই ড্যামেজ। ডোনার পাওয়া যায়নি। অলিভের হাই ব্লাড সুগার। আর তাছাড়া কিডনি দিতে গিয়ে অলিভের যদি কিছু হয়ে যায়, ওর মা বাবা কে দেখবে কে? বাগবাজারের সেন পরিবারের একমাত্র উত্তরাধিকারী অলিভ। মা বাবার আদরের ধন। এমন বৌ আনলো যে বংশবৃদ্ধি করতে তো পারবেই না, সারাক্ষণ তাকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকা। শ্বশুর অসিত সেন তো বলেই দিয়েছেন, ছেলের আবার বিয়ে দেবেন। অলিভ অবশ্য এখনও পাগলের মতো ভালোবাসে ইচ্ছেকে।
আজ ইচ্ছের জন্মদিন। আয়োজনে কিছু ত্রুটি রাখেনি অলিভ। লোকও এসেছে প্রচুর। বোঝে ইচ্ছে। সবাই তাকে শেষ দেখা দেখতে এসেছে। ইচ্ছের দাদা বৌদি, বোন জামাই সবাই এসেছে। মা চন্দ্রা দারুণ একটা গিফট দিলেন। ইচ্ছে ও অলিভের একমাসের ইউরোপ ট্যুরের টিকিট। দাদা বৌদি স্পনসর করছে হোটেলের টিকিট। বোনও এনেছে দারুণ গয়না। অলিভ দিয়েছে জড়োয়ার সেট। সত্যি নিজেকে রানী মনে হচ্ছে ইচ্ছের। মা একটা কিডনি দিতেই পারতো। দেননি বলে রাগ করেছিলো অলিভ, অভিমান হয়েছিলো ইচ্ছের ও। কিন্তু আজ চোখের সামনে ভাসছে লন্ডন,প্যারিস। সব কষ্ট ধুয়ে মুছে যাচ্ছে। মা, বাবা কে প্রণাম করলো সে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও শ্বশুর-শাশুড়িরও পা ছুঁলো। শাশুড়ি কিছু একটা পাতলা খামের মতো কিছু দিলেন। শ্বশুরমশাই এর তো প্রণাম নেওয়ার ও ইচ্ছা নেই।
রাত বারোটা নাগাদ পার্টি শেষ হলো। উপহারে একটা ঘর ভর্তি। কিছুটা দেখার পর অলিভের কড়া নির্দেশ এখনই ঘুমোতে হবে। কিন্তু ইচ্ছের এখন রোজই মনে হয় পরের সকাল হয়তো দেখতে পাবেনা। সব গিফট খুলে দেখে সে। সবশেষে শাশুড়ি মধুরার দেওয়া খাম টা। একটা গিফ্টের সঙ্গে লেপ্টে আছে। একটা চিঠি। অলিভ বিরক্ত হয়। ইচ্ছেও ঘুমঘুম চোখে পড়ে। … সামান্য উপহার। আমার একটা কিডনি তোমাকে দিলাম। নিতেই হবে।অলিভকে দেখায় ইচ্ছে। দুজনেরই চোখে জল। শাশুড়ি অনুপমার উপহার ইচ্ছের বাঁচার ইচ্ছে আরও বাড়িয়ে দেয়।
Be the first to comment