১৯৫৩ সালের কথা, মুক্তি পেল নির্মল দের ছবি ‘সাড়ে ৭৪’। মুক্তির পর কমেডি ছবিটি নিয়ে সবার কী উল্লাস। ছবিতে নামি সব তারকা_ কে নেই! চারদিকে কথা হচ্ছিল, ছবিটির মাধ্যমে কী এক নতুন জুটি এসেছে পর্দায়। বয়স্করা মজেছিলেন তুলসী চক্রবর্তী আর মলিনা দেবীতে। তাদের দাবি, হিরো-হিরোইন তো তুলসী-মলিনা। নতুন জুটি তো সাইড রোলে! ছবিটি বক্স অফিস কাঁপিয়ে দিল ৷ টানা আট সপ্তাহ চলল এই ছবি ৷ সাদা-কালো ‘সাড়ে ৭৪’-এর মাধ্যমে নতুন জুটির যে ইনিংস পত্তন হয়েছিল তাতেই হল রঙিন ইতিহাস। উত্তম পেলেন কালজয়ী সাফল্য, সৃষ্টি করলেন বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন যুগ। তিন দশক ধরে দর্শকদের মোহাবিষ্ট করে পৌঁছে গেলেন অনন্য উচ্চতায়। ১৯৭০-এর পর নায়ক উত্তম থেকে হয়ে গেলেন মহানায়ক। অনাবিল হাসি, অকৃত্রিম চাহনি আর অভিনয় গুণে কয়েক প্রজন্ম পেরিয়ে আজও বাঙালির চেতনায় উত্তম জীবন্ত।
গানের শিক্ষক: শুরুর গল্পটা ঠিক উল্টো। ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় তার জন্ম। পরিবারের দেওয়া নাম ছিল অরুণ কুমার। বাবা সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় আর মা চপলা দেবী গৃহিণী। অভাব-অনটনের সংসার; কোনওমতে দিন কেটে যায়। গিরিশ মুখোপাধ্যায় রোডের একটিমাত্র ঘরে তাঁরা থাকেন ৷ ভরসা বাড়িটি নিজের। বাবার সামান্য বেতনে সংসার চলছে না। উপায় না দেখে উপার্জনে নেমে পড়লেন বাড়ির বড় ছেলে অরুণ। পড়াশোনার পাশাপাশি গানের শিক্ষকতা শুরু করলেন। সবচেয়ে লোভনীয় প্রস্তাব পেলেন অল্প দিনেই। গান শেখাতে হবে গাঙ্গুলী বাড়ির মেয়ে গৌরী দেবীকে। বেতনও বেশ ভালো, মাসে ৭৫ টাকা। আগেই চেনাজানা হলেও শিক্ষকতা করতে গিয়ে কাছে এলেন উত্তম-গৌরী। ১৯৫০ সালের ১ জুন অরুণের ঘরে এলেন গৌরী দেবী।
ছোটবেলা থেকেই অরুণ প্রচন্ড থিয়েটার অনুরাগী; ছিলেন যাত্রার ভক্ত। রুপোলি পর্দায় অভিনয়ের ঝোঁকটা ক্রমেই বেড়ে চলল। ১৯৪৭ সালে হিন্দি চলচ্চিত্র ‘মায়াডোর’-এ অভিনয়ের সুযোগ মিলল ৷ তবে এক্সট্রার রোল। মাত্র পাঁচ সিকিতে দৈনিক ভিত্তিতে ওই ছবিতে অভিনয় করলেন অরুণ। কিন্তু ‘মায়াডোর’ মুক্তি পেল না। ‘৪৮ সালে পেলেন আরেকটি সুযোগ, ‘দৃষ্টিদান’ ছবিতে নায়ক অসিতবরণের অল্প বয়সের চরিত্রে। কিন্তু দর্শকমনে তেমন দাগ কাটতে পারলেন না অরুণ। পরের ছবি ‘কামনা’। ১৯৪৯ সালে মুক্তি পেল ছবিটি, কিন্তু সেটিও সুপার ফ্লপ। পরের দুই ছবি ‘মর্যাদা’ ও ‘ওরে যাত্রী’ও চলল না।
Be the first to comment